চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

স্বপ্ন ছোঁয়া অসম্ভব নয়

মিটু বিভাস

৩০ মে, ২০১৯ | ২:৪০ পূর্বাহ্ণ

আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে প্রথমবারের মত কোন আর্ন্তজাতিক টুর্নামেন্টের ট্রফি জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে ইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলতে নামছে বাংলাদেশ দল। গত পাঁচ বছর ধরে সাকিব মাশরাফিরা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। বিশ্বের পরাক্রমশালী সব প্রতিপক্ষকে সমীহ করতে বাধ্য করছে। আর তাই এবার আর আন্ডারডগ নয়, ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নামবে বাংলাদেশ। দেশ ছাড়ার আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছিলেন, স্বপ্ন যখন দেখব, বড় কেন নয়? তবে সে স্বপ্ন তিনি খোলাসা করেননি। মাশরাফি মনের গহীন কোটরে সে স্বপ্ন লুকিয়ে রাখলেও টাইগারা ভক্তদের প্রত্যাশার পারদটা যে অনেক উপরে সেটা তিনি ভালোই জানে। আর তাই বিশ্বকাপ মিশনে স্বপ্ন চূড়া ছোঁয়ার দুঃসাহস নিয়েই এবার মাঠের লড়াইয়ে নামবে মাশরাফিরা। কাজটা কঠিন। ভীষণ কঠিন। আছে অনেক সীমাবদ্ধতা। পেরুতে হবে অনেক বন্ধুর পথ। তবু বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। স্বপ্নের প্রথম ধাপ অন্তত সেরা চারে থাকা। সহজ নয় সেটিও। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এবার টুর্নামেন্টের ফরম্যাট। অনেককে চমকে দিয়েই ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার-ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। আরও বিস্ময় উপহার দিয়ে সেমি-ফাইনালে খেলেছে ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। তবে ওই দুবারই ফরম্যাট ছিল চমক দেওয়ার জন্য তুলনামূলক সহজ। গ্রুপ পর্বে একটি-দুটি জয়, অন্য ম্যাচের ফল পক্ষে আসা মিলিয়ে ধরা দিয়েছে অভাবনীয় সাফল্য। কিন্তু বিশ্বকাপে এবার ১০ দল খেলবে পরস্পরের সঙ্গে। ভিন্ন ভিন্ন উইকেটে ভিন্ন শক্তি ও সামর্থ্যরে প্রতিপক্ষের সাথে লড়াই কর, দীর্ঘ সময় ধরে খেলার মাঠে একাগ্রতা ধরে রাখা, নানা পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া, প্রতিটি ধাপেই অপেক্ষা করছে কঠিন সব চ্যালেঞ্জ। তবে সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সামর্থ্যও আছে বাংলাদেশের। দলের বড় শক্তি একই সঙ্গে তারুণ্য ও অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতার ঝুলির পাশাপাশি দলের তরুণ খেলোয়াড়দেরও রয়েছে দারুণ ট্যালেন্ট। যারা বল কিংবা ব্যাট হাতে যেকোন সময় পরিবর্তন করে দিতে পারেন ম্যাচের মোড়। গড় বয়সের হিসেবে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম তরুণ দল বাংলাদেশ। আবার ম্যাচ খেলার বিবেচনায় সবচেয়ে অভিজ্ঞ দলগুলির একটি। একই দলে দুটির সমন্বয় যথেষ্টই বিরল। বাংলাদেশ দলে এটি সম্ভব হয়েছে, কারণ দলের মূল ক্রিকেটাররা সেই ১৮-১৯ বছর বয়স থেকে একসঙ্গে খেলছেন। অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে দলকে পরের স্তরে নিয়ে যেতে পেরেছেন। চেষ্টা করছেন আরও ওপরে তুলতে। দলের চার ক্রিকেটারের এটি চতুর্থ বিশ্বকাপ, আরও দুইজনের তৃতীয় বিশ্বকাপ। মাশরাফির নেতৃত্বে গত বিশ্বকাপে কোয়ার্টার-ফাইনাল খেলার ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের পর থেকে ধরা দিয়েছে আরও অভাবনীয় সব সাফল্য। প্রথম অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন একাধিক বিশ্বকাপে। নেতৃত্বের মতো তার বোলিংও দলের জন্য দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। এখনও তিনি দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক বোলার। নিজের শেষ বিশ্বকাপ রাঙাতে নিশ্চয়ই কমতি রাখবেন না। প্রিয় দলপতি শেষ বিশ্বকাপে ভালো খেলার তাড়না থাকবে অন্যদেরও। বিশ্বকাপের আগে অলরাউন্ডারের সিংহাসনে আরোহণ করেছেন সাকিব আল হাসান। ব্যাটে-বলে যিনি প্রতিপক্ষের বিপক্ষে হুমকি হয়ে উঠবেন। সাকিবের বিশ্বকাপ রেকর্ড ভাল, কিন্তু দলের জন্য ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্সে নিজের ছাপ সেভাবে রাখতে পারেননি এখনও। তবে ওজন কমিয়ে, নিবিড় অনুশীলনে এই অলরাউন্ডার বুঝিয়ে দিয়েছেন, এবার বিশ্বকাপে করতে চান বড় কিছু। ওয়ানডে ক্রিকেটে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহও দুর্দান্ত। গত বিশ্বকাপের পর থেকে ওয়ানডেতে বিশ্ব ক্রিকেটেরই সবচেয়ে সফল ও ধারাবাহিক ব্যাটসম্যানদের একজন তামিম। ধ্রুপদী ব্যাটিংয়ে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন এক নতুন উচ্চতায়। গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তিনটি জয়ে অসাধারণ ইনিংস খেলেছিলেন মুশফিক। সেই ধারা ধরে রেখেছেন পরেও। দলের প্রয়োজনের সময় বরাবরই চওড়া তার ব্যাট। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসগুলোর বেশ কটিই এসেছে তার ব্যাট থেকে। মাহমুদউল্লাহ গত বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়েছিলেন দুটি সেঞ্চুরি করে। বিশ্বকাপের পর অবশ্য চার নম্বরে জায়গা ধরে রাখতে পারেননি। তবে পরে নতুন ভূমিকায়ও মানিয়ে নিয়েছেন দারুণভাবে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সময়ের সেরা ফিনিশারদের একজন তিনি। বাংলাদেশের এ পঞ্চপা-ব বড় আসরে বড় কিছুর প্রস্তুতি নিয়েছেন দারুণভাবে। তারাই বিশ্বকাপে দলের স্বপ্নসারথী। নতুনরা যদি তাদেরকে সময়মতো সঠিক সহায়তা দিতে পারে তাহলে যে কোন দলকেই নতজানু করতে পারবেন ক্রিকেটাররা। সিনিয়রদের সঙ্গে মুস্তাফিজুর রহমান ও সৌম্য সরকার নিজের দিনে গড়ে দিতে পারেন পার্থক্য। মেহেদী হাসান মিরাজের ওপর নির্ভর করা যায় নিশ্চিন্তে। কোনো এক স্পেলেই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন রুবেল হোসেন। সাইফ উদ্দিন উন্নতির প্রমাণ দিচ্ছেন প্রতিনিয়মত। আছেন সাব্বির রহমানের মতো দারুণ হার্ডহিটার ফিনিশার। তারা সবাই দলের প্রয়োজনে জয় নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে দুইজনকে নিয়ে ছিল সংশয়, তারা হলেন পেসার আবু জায়েদ রাহী ও মোসাদ্দেক হোসেন। তবে তারাও নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। অভিষেকের দ্বিতীয় ম্যাচেই ৫ উইকেট নিয়ে সংশয় দূর করেছেন রাহী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট