চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

এ বছর নোবেল ও বুকার পেলেন ৪ নারী

তাহমিনা পলি

২৭ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:১৬ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রেই পুরুষদের দাপট চোখে পড়ার মতো। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেসব পুরস্কার ও স্বীকৃতি দেওয়া হয়, সেগুলোতেও তাই পুরুষদের দাপট থাকে স্বাভাবিকভাবেই। তবে এ বছরের নোবেল ও ম্যান বুকার পুরস্কারে নারীরাও সেই দাপট কিছুটা হলেও খর্ব হয়েছে। সাহিত্যে যেমন নোবেল পেয়েছেন পোলিশ নারী লেখক ওলগা তোকারচুক, তেমনি অর্থনীতিতেও দুজন পুরুষের সঙ্গে হলেও নোবেলজয়ী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন আরেক নারী ফরাসি-আমেরিকান নাগরিক এস্থার দুফলো। আর এ বছর যে দুজনকে দেওয়া হয়েছে ম্যান বুকার পুরস্কার, তারা দুজনেই নারী কানাডার মার্গারেট অ্যাটউড ও ব্রিটেনের বার্নারডাইন এভারইসটো।

একই বছরে দুই নারীর নোবেল ও দুই নারীর বুকারজয় সারাবিশ্বের লাখো নারীদের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন নারীরা। তারা বলছেন, যথাযথ সুযোগ পেলে যে নারীরাও পুরুষের মতো করেই সমানভাবে এগিয়ে যেতে পারেন, তারই চার নারী ওলগা তোকারচুক, এস্থার দুফলো, মার্গারেট অ্যাটউড ও বার্নারডাইন এভারইসটো।

চলতি বছরের ম্যান বুকার প্রাইজ-২০১৯-এর বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয় ১৫ অক্টোবর। ১৯৭৪ ও ১৯৯২ সালের পর এবার তৃতীয়বারের মতো এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় দু’জনের হাতে, যাদের দু’জনই নারী। যৌথভাবে পুরস্কারটি পেয়েছেন কানাডিয়ান ঔপন্যাসিক ৭৯ বছর বয়সী মার্গারেট অ্যাটউড ও ব্রিটিশ লেখক ৬০ বছর বয়সী বার্নারডাইন এভারইসটো। দ্য হ্যান্ডমেইড’স টেল সিরিজের উপন্যাস দ্য টেস্টামেন্টস-এর জন্য মার্গারেট অ্যাটউড এবং ‘গার্ল, ওম্যান, আদার’ বইটির জন্য এভারইসটোকে বুকার পুরস্কার অর্জন করেন। এভারইসটো প্রথমবারের মতো ম্যান বুকার পুরস্কার পেলেও দ্বিতীয়বারের মতো এই পুরস্কার জিতেছেন অ্যাটউড। এর আগে ২০০০ সালে ‘ব্লাইন্ড অ্যাসাসিন’ বইয়ের জন্য বুকার জিতেছিলেন তিনি।

এ বছর আরও দুই অর্থনীতিবিদের সঙ্গে যৌথভাবে এই পুরস্কার অর্জন করেন ফরাসি-আমেরিকান নারী অর্থনীতিবিদ এস্থার দুফলো। এস্থার দুফলো’র সঙ্গে নোবেলজয়ীর তালিকায় রয়েছেন তারই স্বামী ভারতীয়-আমেরিকান নাগরিক অভিজিৎ বিনায়ক। অন্যজন মার্কিন অর্থনীতিবিদ মাইকেল ক্রেমার। বিশ্বব্যাপী দারিদ্র বিমোচনে গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে তিন অর্থনীতিবিদকে এবারের নোবেল দেওয়া হয়। নোবেল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের মাত্র দুই দশকের গবেষণায় উন্নয়ন অর্থনীতির রূপরেখা বদলে দিয়েছে। গোটা বিশ্বকে দারিদ্রমুক্ত করতে নতুন হাতিয়ারের সন্ধান দিয়েছে এবং অর্থনীতির গবেষণায় এটি অন্যতম পাথেয় মডেল।

এদিকে, গত ১০ অক্টোবর ঘোষণা করা হয় ২০১৮ ও ২০১৯ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। ২০১৯ সালের জন্য এ পুরস্কার পান অস্ট্রিয়ার লেখক পিটার হ্যান্ডকে, তবে গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের সাহিত্যে নোবেল পান পোল্যান্ডের সাহিত্যিক ওলগা তোকারচুক।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলা হ্যাশট্যাগ-মিটু ঝড় আছড়ে পড়েছিল রয়্যাল সুইডিশ একাডেমিতেও। একাডেমির সদস্যদের যৌন কেলেঙ্কারি ও অর্থনৈতিক অনিয়মের খবর সামনে চলে এলে ২০১৮ সালের সাহিত্যে নোবেল স্থগিত রাখা হয়। এবারে এসে সেই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

২০১৮ সালের সাহিত্যে নোবেলজয়ের মাধ্যমে ১৫তম নারী হিসেবে নোবেল জিতলেন পোলিশ লেখিকা ওলগা তোকারচুক। ৫৭ বছর বয়সী এই লেখক আন্তর্জাতিক সাহিত্য অঙ্গনে বেশ পরিচিত মুখ না হলেও ২০১৮ সালে ‘ফ্লাইটস’ উপন্যাসের জন্য ম্যান বুকার পুরস্কার পেয়েছিলেন। একই বছরে চার জন নারীর বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানিত দুই পুরস্কার অর্জন নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ম্যান বুকার প্রাইজের ৫০ বছরের ইতিহাসে এ নিয়ে ১৯ জন নারী সাহিত্যিক সম্মানিত এই পুরস্কারটি অর্জন করেন।

অন্যদিকে, নোবেলের ১১৮ বছরের ইতিহাসে ৫৩ জন নারী বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এই সম্মান অর্জন করেছেন। তাদের মধ্যে নারী বিজ্ঞানী হিসেবে একমাত্র ম্যারি কুরি দু’বার এই সম্মানে ভূষিত হন। তিনি ১৯০৩ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে ও ১৯১১ সালে রসায়নে নোবেল সম্মান অর্জন করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট