চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

চাকরিতে নারীর সংখ্যা বাড়ছে!

মরিয়ম বেগম

৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:২২ পূর্বাহ্ণ

সার্বিকভাবে নারী চাকরিজীবীর হার বাড়লেও প্রথম শ্রেণির চাকরিজীবীদের মধ্যে নারী এখনো অনেক কম। এই শ্রেণিতে মোট চাকরিজীবীর মধ্যে মাত্র ১৯ শতাংশের সামান্য কিছু বেশি নারী রয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, প্রথম শ্রেণির মোট চাকরিজীবী আছেন ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭৮৫ জন। এর মধ্যে নারী কর্মকর্তা ৩১ হাজার ৪৩২ জন।

সরকারি চাকরিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য বলছে, মোট সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে ২৭ শতাংশ নারী, যা সাত বছর আগে ছিল ২১ শতাংশ। সাত বছরের ব্যবধানে এই হার ৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে শীর্ষস্থানীয় ও নীতিনির্ধারণী পদে নারীর অংশগ্রহণ এখনো অনেক কম।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংস্কার ও গবেষণা অনুবিভাগের উদ্যোগে গত মে মাসে সারা দেশের সর্বশেষ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে। ‘স্ট্যাটেসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফ-২০১৮’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দেশে মোট সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৫৫। এর মধ্যে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৭৮৭ জন নারী, যা মোট চাকরিজীবীর প্রায় ২৭ শতাংশ। এই প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১০ সালে মোট চাকরিজীবীর মধ্যে নারী ছিলেন ২১ শতাংশ। মাঝে সামান্য বেড়ে-কমে সর্বশেষ এই হার দাঁড়িয়েছে ২৭ শতাংশ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনটিতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে।

সার্বিকভাবে নারী চাকরিজীবীর হার বাড়লেও প্রথম শ্রেণির চাকরিজীবীদের মধ্যে নারী এখনো অনেক কম। এই শ্রেণিতে মোট চাকরিজীবীর মধ্যে মাত্র ১৯ শতাংশের সামান্য কিছু বেশি নারী রয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, প্রথম শ্রেণির মোট চাকরিজীবী আছেন ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭৮৫ জন। এর মধ্যে নারী কর্মকর্তা ৩১ হাজার ৪৩২ জন।
জানা গেছে, প্রথম শ্রেণির শীর্ষস্থানীয় ও গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীর সংখ্যা আরও কম। বর্তমানে মোট ৭৮ জন সচিবের মধ্যে মাত্র নয়জন নারী রয়েছেন। নয়জন নারী সচিবের মধ্যে তিনজন তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। বাকিরা বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরে দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে থাকা তিনজন নারীর একজন হলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জুয়েনা আজিজ। তিনি বলেন, নারী হলেও কাজকর্মে তাঁর কোনো অসুবিধা হয় না। তিনি মনে করেন, নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে আরও সচিব করলে আরও ভালো হবে।
দেশের ৬৪ জন জেলা প্রশাসকের (ডিসি) মধ্যে বর্তমানে মাত্র ৮ জন নারী রয়েছেন। কিছুদিন আগেও ডিসিদের মধ্যে নয়জন ছিলেন নারী।

বিসিএস নারী কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব সায়লা ফারজানা বলেন, ‘এখন সরকারি চাকরিতে যোগ্য নারীর সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। তাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে নীতিনির্ধারণী পদগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বেশি হবে। আমরা আশা করি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকেরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’

দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিজীবীদের মধ্যে নারীর হার অন্য শ্রেণির তুলনায় একটু বেশি। এই শ্রেণিতে ৩৩ শতাংশেরও বেশি নারী চাকরিজীবী আছেন। মোট ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৩ জন দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিজীবীর মধ্যে নারী কর্মকর্তা আছেন ৪১ হাজার ৭৮২ জন।

আর তৃতীয় শ্রেণির চাকরিতে নারীর হার প্রায় ৩০ শতাংশ। এই শ্রেণিতে মোট ৮ লাখ ৪৭ হাজার ৪৩৩ জন চাকরিজীবীর মধ্যে ২ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ জন নারী। অন্যদিকে চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে নারী আছেন ১৯ শতাংশের সামান্য বেশি। এই শ্রেণিতে মোট ২ লাখ ৫৪ হাজার ৮০৪ জন চাকরিজীবীর মধ্যে ৪৯ হাজার ২৭৮ জন নারী রয়েছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বললেন, চাকরিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির বিষয়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকতার ক্ষেত্রে বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে ৬০ শতাংশ নারী নিয়োগ করতে হয়। এসব পদক্ষেপের কারণে চাকরিতে মোট নারী বাড়ছে। এটা ইতিবাচক। কিন্তু সব ধরনের চাকরিতে এখনো পরিবারের আগ্রহে ঘাটতি দেখা যায়।

এর কিছু বাস্তব কারণও আছে। বিশেষ করে বদলিযোগ্য চাকরি হলে পরিবারের আগ্রহের ঘাটতি বেশি দেখা যায়। আবাসন, শিশুযতেœর জন্য ‘ডে কেয়ার’ ব্যবস্থা না থাকাসহ কিছু বাস্তব কারণে নারীদের সমস্যায় পড়তে হয়। এসব বিষয় সরকারকে ভাবতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট