চট্টগ্রাম সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪

৬৪ জেলা ভ্রমণের শেষ ধাপে এলিজা এখন খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামে

নিগার আহমেদ

২৮ আগস্ট, ২০১৯ | ১:০৯ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের মধ্য দিয়ে দেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ শেষ করবেন নারী বিশ্বপর্যটক এলিজা বিনতে এলাহী। এ সময় তিনি দুই জেলার স্থানীয় বিশিষ্ট নাগরিক, সাংবাদিক ও তরুণ সমাজের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। চলিত মাসের ২৬-৩১ তারিখ পর্যন্ত তিনি জেলা দুটি ভ্রমণ করছেন। ব্যক্তিগত প্রজেক্ট ছটঊঝঞ-এর আওতায় ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার হেরিটেজ সাইটগুলো ভ্রমণ করে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছেন তিনি।
লিখিত তথ্য, মিথ, লোককাহিনী, স্থিরচিত্র ও ভিডিওর মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে সারা দেশের উল্ল্যেখযোগ্য ও লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলো স¤পর্কে প্রাথমিকভাবে তথ্য সংগ্রহের কাজটি সমাপ্ত হবে খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলা ভ্রমণের মধ্যদিয়ে। পরবর্তীকালে বিস্তারিতভাবে গবেষণার জন্য

আবারও বাংলাদেশ ভ্রমণে বের হবেন বলে জানিয়েছেন এ পর্যটক। তিনি আরও জানান বাংলাদেশে হেরিটেজ ট্যুরিজমকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় করার জন্য ভবিষ্যতে আরও পরিকল্পনা আছে। যেটি বাস্তবায়নে সরকারি ও বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

এলিজা বিনতে এলাহী বাংলাদেশ ছাড়াও এ পর্যন্ত বিশ্বের ৪৭টি দেশের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ঘুরে দেখেছেন। অচিরেই বাকি দেশগুলো ভ্রমণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এ হেরিটেজ ট্রাভেলার।
ইতিমধ্যে নেদারল্যন্ডসের দি হেগ ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লাইড সাইন্সেস এ কমিউনিকেসন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধীনে বাংলাদেশে হেরিটেজ ট্যুরিজমের ওপর গবেষণা সমাপ্ত করেছেন। ট্রাভেলের পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ এশিয়ায় শিক্ষকতা ও নিয়মিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় হেরিটেজ ট্যুরিজম বিষয়ে লেখালিখি করছেন।

পেশায় এলিজা একজন শিক্ষক। ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত তিনি। কিন্তু সময় পেলেই ছুটে বেড়ান দেশ-বিদেশে। সেখানে হয় দারুণ কিছু অভিজ্ঞতা। এশিয়া মহাদেশ ভ্রমণের ওপরে তার লেখা দুটো বই ঊষরুধ’ং ঞৎধাবষ উরধৎু ও ঊষরুধ’ং ঞৎধাবষ উরধৎু-২ পাঠক সমাদৃত হয়েছে।
এলিজা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি আসলে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাধা অনুভব করিনি। মা তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। তার হাত ধরেই আমার ভ্রমণের যাত্রাটা শুরু। তারপর যেটি হলো, ঘোরাঘুরি করে যে ভ্রমণকাহিনী লিখব। সেটি তখন হয়ে ওঠেনি। বিয়ের আগে মা-বাবার সাথে ঘোরাঘুরি করেছি। এরপর যে পরিবারে এসেছি, তারাও ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। আমি দশ বছর ধরে শিক্ষকতা পেশায় আছি’।

এলিজার জীবনের একটা বড় অংশ কেটেছে এমপি হোস্টেলে। পড়াশোনার শুরু শহীদ বীর উত্তম আনোয়ার গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে। এরপর ইডেন মহিলা কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স শেষ করেন। এছাড়াও এআইইউবি থেকে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে এমবিএ করেছেন এলিজা।

নিজের লেখালেখি নিয়ে এলিজা বলেন, ‘যেহেতু আমি ইংরেজি সাহিত্যে পড়েছি, যার কারণে ঘোরাঘুরিটা আমার জীবনে স্বাভাবিকই ছিল। বিশেষ করে পৃথিবীর প্রাচীনতম স্থান কিংবা স্থাপনাগুলো আমাকে টানে। এরপর যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেছি, তখন পাবলিকেশনের কাজে লেখালেখি করতে হয়। চেষ্টা করি ইংরেজিতে কবিতা লেখার।’
বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের পাশাপাশি হেরিটেজ ট্যুরিজমকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগত সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন এলিজা বিনতে এলাহী। বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে যা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে শিক্ষা-গবেষণার পাশাপাশি দেশে পর্যটন শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।

এলিজা বলেন, প্রায় ২০ বছরের বিশ্ব ভ্রমণের যাত্রায় আমার নিজেকে সত্যিকার ট্রাভেলার মনে হয়েছে যখন আমি বাংলাদেশের কোনায় কোনায় গেছি। আমার দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মানুষ আমাকে যা আনন্দ দিয়েছে পৃথিবীর বড় বড় দেশ তা দিতে পারেনি। আমি দেখেছি গর্ব করার মতো বিশ্বমানের স্থাপনা আমাদেরও রয়েছে। প্রয়োজন শুধু সংরক্ষণ, রক্ষণা-বেক্ষণ ও প্রচার-প্রচারণা। নিজের কাজগুলো ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট