চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪

‘ছোটো ভাইটা ইন্টার দিচ্ছে, ওকে ডাক্তার বানাব স্যার’

৮ এপ্রিল, ২০২৪ | ৪:৩৯ অপরাহ্ণ

বেশ কয়েক বছর আগের কথা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছিল। ধরে নিন, তার নাম আবুল ফজল (ছদ্মনাম)। তার সাথে কথা বলে মুগ্ধ হলাম। তারা এমন এক জায়গায় থাকে যেখানে প্রতিদিন টিকে থাকাটাই যুদ্ধ। ধ্যাদ্দরা গোবিন্দপুর বললেও কম বলা হবে। সেরকম জায়গা থেকে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছে! এখানেই শেষ নয়, টিউশনির উপর নির্ভর করে সে নিজের বোনকেও শহরে নিয়ে এসেছে। কারণ ওই প্রায় মনুষ্যবাসের অনুপযোগী জায়গায় থাকলে মেয়েটি কখনই উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারবে না। ছেলেটি টিউশনি করে বোনকে পড়ায়, বাড়িতে টাকা পাঠায়। সমস্যা হলো তার একটি ছোটোভাই আছে, ক্লাস সিক্সে পড়ে। সে যদি ওই বিরান এলাকায় থাকে তবে বেশিদূর যেতে পারবে না। তার উপর আছে আর্থিক চাপ। আমি তাকে যেভাবেই হোক ছোটোভাইকে পড়ানোর পরামর্শ দিলাম। বললাম, ভয় নেই, সব মুশকিলের আসান আছে। আবুল ফজল আমার কথা মান্য করল।

তারপর আমি ধীরে ধীরে তার উত্থান দেখলাম। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করেই সে তিনটি চাকুরি পেলো। বেছে নিলো গবেষণাধর্মী একটি পেশা। কিছুদিন আগে সে এলো বিয়ের দাওয়াত দিতে। আমি আমতা আমতা করে বললাম, বাবা, কিছু মনে করো না, তোমার ফ্যামিলিতে তো তুমি ছাড়া আর কেউ ইনকাম করে না। বিয়ের পর তোমার ভাই-বোনদের পড়াশোনা, মা-বাবার দেখাশোনা এগুলো চালাতে পারবে তো?

সে উত্তর দিলো, স্যার, পারব। আপনার বউমা ভালো চাকুরি করে, সে বলেছে ও নিজেও এ ব্যাপারে সাহায্য করবে। বোনটা তো ইউনিভার্সিটি থেকে খুব শিগগির বের হয়ে যাবে, ছোটো ভাইটা ইন্টার দিচ্ছে, ওকে ডাক্তার বানাব, স্যার।

আবুল ফজলের সব ইচ্ছেই পূরণ হয়েছে। সূর্যের আলো পুরো ঢুকতে পারে না, এমন এক গ্রাম থেকে সে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে মনের মতো চাকুরি পেয়েছে, বোনটিকে ঠিকই ইউনিভার্সিটিতে পড়িয়েছে, লক্ষ্মী পয়মন্ত বউ পেয়েছে এবং শেষ খবর হচ্ছে, তার সেই ছোট্ট ভাইটি মেডিক্যাল কলেজে চান্স পেয়েছে।

কয়েকদিন আগে সে তার ভাইকে নিয়ে এসেছিল মেডিক্যালে ভর্তির কাগজপত্র সত্যায়িত করাতে। তার কথায় প্রকাশ পাচ্ছে গভীর শ্রদ্ধা। আমার হঠাৎ মনে হলো, আরে! এ ছেলে আমাকে শ্রদ্ধা করে কেন? শ্রদ্ধা তো আমার তাকে করা উচিত।

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট