চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

জান্নাতে স্থান পায় হাবিলের কোরবানির দুম্বা

৩০ জুন, ২০২২ | ৭:১৭ অপরাহ্ণ

কোরবানির ইতিহাস অনেক প্রাচীন। কোরবান শব্দের অর্থ উৎসর্গ করা। আল্লাহর জন্য যে কোন বিষয় উৎসর্গ করাই কোরবানি। এটি অর্থ, সময়, প্রাণী বা অন্য যেকোন কিছু হতে পারে। তাই আদম (আ.) থেকে শুরু করে যুগে যুগে মুমিনগণ নিজেদের প্রভুর জন্য এই উৎসর্গ করেন। আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য কোরবানি হতে পারে না। আর্থিক ইবাদতও হতে পারে না। কোরবানির কথা আল্লাহ তায়ালা কোরআন শরীফে বলেছেন, হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনায়ও এসেছে। মুমিনদের আর্থিক ইবাদত হলো কোরবানি।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) কোরবানির ইতিহাস বর্ণনা করেছেন সাহাবীদের কাছে। সর্বপ্রথম এই কোরবানি করেছেন আদম (আ.)-এর সন্তানগণ। আদম (আ.)-এর যুগে যেহেতু প্রথম দুনিয়া আবাদ হচ্ছে, অন্য কোন মানুষ ছিল না। সেহেতু দুনিয়া আবাদ করার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর ঔরসে জমজ সন্তান প্রদান করলেন। আল্লাহপাক জোড়ায় জোড়ায় তাদের ৪০টি সন্তান দান করেন। হাওয়া (আ.)-এর ২০ গর্ভে প্রতিবার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে জন্ম দেন। ওই সময় দুনিয়াতে কোন মানুষ না থাকায় বংশ বিস্তারের ধারাবাহিকতার জন্য আপন ভাই-বোনের বিয়ে জায়েজ ছিল। তবে শর্ত ছিল একই গর্ভের সন্তান নয়। অর্থাৎ নিজের জমজ ভাই/বোনকে বিয়ে করতে পারত না। হাবিল ও কাবিল আলাদাভাবে জন্ম গ্রহণ করেন। তাই নীতি অনুযায়ী হাবিল বিয়ে করবে কাবিলের জমজ বোনকে। আর কাবিল বিয়ে করবে হাবিলের জমজ বোনকে। এটাই ছিলো তাদের শরীয়ত।

 

হাবিল ও কাবিল বড় হওয়ায় পর আদম (আ.) হাবিলকে কাবিলের জমজ বোনকে এবং কাবিলকে হাবিলের জমজ বোনকে বিয়ে করার নির্দেশ দেন। কাবিলের সাথে যে বোনের জন্ম হয়েছিল সে ছিল সুন্দরী। আর হাবিলের সাথে জন্ম নেয়া বোন ছিল কম সুন্দরী। কাবিল, হাবিলের বোনকে বিয়ে না করে তার সাথে জন্ম নেয়া জমজ বোনকে বিয়ে করার ইচ্ছা পোষণ করেন। তখন আদম (আ.) বললেন, “দেখ, এটা আল্লাহর নিয়ম। এই নিয়ম তুমি ভাঙতে পার না। ভাঙলে তুমি বড় গুনাহগার হবে”। কাবিল কোন অবস্থায়ই আল্লাহপাকের হুকুম মানতে রাজি নয়।

পরে সামাধানের জন্য আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। আগের যুগে কোরবানির বৈশিষ্ট্য ছিল কোরবানির বস্তু বা প্রাণী মাঠে রেখে আসবে, অদৃশ্য গায়েবি আগুন এসে রাতে সেটি জ্বালিয়ে ফেলবে। যারটা জ্বলবে তার কোরবানি কবুল হয়েছে বুঝা যাবে। কাবিল কোরবানির জন্য মাঠে কিছু ধান রেখে আসেন। আর হাবিল উৎকৃষ্ট দুম্বা রেখে আসেন। আকাশ থেকে আগুন এসে দুম্বা জ্বালিয়ে দিলেও কিন্তু ধান জ্বালায়নি। সকালে গিয়ে দেখেন, হাবিলের কোরবানি আল্লাহ কবুল করলেও কাবিলের কোরবানি কবুল করেননি। আল্লাহ একজনের কোরবানি কবুল করেন। এতে প্রমাণ হয়- হাবিল সঠিক পথে, আর কাবিল ভুল পথে চলছেন।

বর্তমানে আপন বোন, জমজ বোন বিয়ে করা হারাম। কারণ এখন মেয়ের অভাব নেই। বংশের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মেয়ের প্রয়োজন। সেই যুগে বৈধতা ছিল অপারগতার কারণে। পরবর্তীতে নূহ (আ.)-এর যুগে বংশ-বিস্তার হওয়ার কারণে ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ে হারাম করা হয়। যা কেয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

 

আল্লাহ কোরআনে বলেন, “হাবিল ও কাবিল আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি দিল, তাদের সমস্যার সমাধানের জন্য। কে হক, কে বাতিল তা পার্থক্য করার জন্য”। আল্লাহ হাবিলের কোরবানি কবুল করলেন, কাবিলের কোরবানি কবুল করেননি। অদৃশ্য গায়েবি আগুন হাবিলের দুম্বা পুড়িয়ে তা জান্নাতে পৌঁছে দিয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, ‘‘কোরবনি কবুল হয় মোত্তাকীদের। যারা তাকওয়াবান ও যাদের মধ্যে খোদাভীতি আছে’’।

অতপর কাবিল, হাবিলের বংশ দুনিয়াতে না থাকার জন্য হত্যার হুমকি দেন। কাবিল ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে এবং বলে- হে হাবিল শোন, আমি তোমাকে হত্যা করব। প্রত্যুত্তরে হাবিল বলল- কাবিল, তুমি আমাকে হত্যা করার জন্য হাত প্রসারিত করলেও আমি কখনো হত্যা করার জন্য আমার হাতকে তোমার দিকে বাড়াবো না। আমি অন্যায় করতে রাজী নই। কেননা আমি আল্লাহকে ভয় করি। আল্লাহ সবকিছু দেখছেন।

 

একদিন হাবিল ছাগল চরাতে চরাতে জঙ্গলের ভেতরে চলে যায়। হাবিলকে না দেখে আদম (আ.) উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। কাবিলকে ডেকে বললেন, ভাই হাবিলের খোঁজ নিতে। কাবিল জঙ্গলের ভেতর হাবিলকে একা পেয়ে মাথায় পাথরের আঘাতে হত্যা করে। কিন্তু লাশ কি করবে বুঝতে না পেরে মাথায় নিয়ে ঘুরছিল। এমন সময় আল্লাহ দুটি কাক পাঠান। কাক দুটি পরস্পর ঝগড়ার এক পর্যায়ে একটিকে হত্যা করে। পরে জীবিত কাকটি মাটি খুঁড়ে মৃত কাকটিকে মাটি চাপা দেয়। এই দৃশ্য দেখে কাবিল বুঝতে পারল যে, মাটি খুঁড়ে মৃতদের এভাবে দাফন করতে হয়। তখন সে হাবিলকে মাটির নিচে দাফন করে দিল। সুবহানাল্লাহ।

এখন আমরা নানা জাতের পশু কিনে জবাই করি এবং তার গোশত খাই। কিন্তু আগের কোরবানির নিয়ম এমন ছিল না। তখন কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট ঘর ছিল। যখন কোন ব্যক্তি কোরবানি করার ইচ্ছা প্রকাশ করতো তখন সে তার জন্তু বা জিনিস কোরবানির ঘরে রেখে আসত। রাতের বেলা আকাশ থেকে আগুন এসে ওই জন্তুকে জ্বালিয়ে দিলে মনে করতো কোরবানি কবুল। আর না জ্বালালে মনে করতো আল্লাহ কোরবানি কবুল করেননি। আমার গোশত নিজেরা খাই। কিন্তু আগের নবীদের উম্মতরা খেতে পারতো না। এভাবে যুগে যুগে কোরবানির নিয়ম ছিল মুসা (আ.) পর্যন্ত। এরপর প্রবর্তিত কোরবানি হচ্ছে ইব্রাহিম (আ.) তরিকামতো, যা এখনও অনুসৃত হচ্ছে।

লেখক : ব্যুরোচিফ, বাংলাভিশন, চট্টগ্রাম

 

পূর্বকোণ/এএস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট