চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

মোবাইল আসক্তি নয়, বই হোক শিক্ষার্থীর নিত্যসঙ্গী

শ্যামল দে

২২ নভেম্বর, ২০২২ | ৮:২৮ অপরাহ্ণ

কালের বিবর্তনে আধুনিক প্রযুক্তির বদৌলতে মানুষের হাতের নাগালে আজ সবকিছুই। বিজ্ঞানের অভাবনীয় সাফল্যের বদৌলতে মানুষের চলমান জীবন সংগ্রাম আজ অনেকদূর এগিয়ে। যা আজ থেকে ১০/২০ বছর আগেও কল্পনার বাইরে ছিল।

একসময়ে আমরা বই পড়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়তাম। কার থেকে কে বেশি বই পড়তে পারে তার প্রতিযোগিতা ছিল। আর এখন কার থেকে কে বেশি দামী এন্ড্রয়েড ফোন কিনতে পারে বা ব্যবহার করতে পারে তার প্রতিযোগিতা হচ্ছে।

এক সময়ে আমরা স্কুলছুটির পর মাঠে দৌড় দিতাম, খেলতাম ফুটবল, ক্রিকেট, হাডুডুসহ কত রকমের খেলা, আর এখন মাঠের এক কোনে বসে জটলা বেঁধে চোখে চোখ রেখে গভীর মনোযোগে ডুবে যায় সেই ফোনে। কত বিচিত্র পরিবর্তন। এ এক মহা আসত্তি বলা চলে।

 

ছেলে বুড়ো, শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সের বেশির ভাগ মানুষ এখন এক মহা আসত্তি মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত। মোবাইল ফোন ব্যবহারে আমি দ্বিমত নই, তবে দ্বিমত এখানে- তা হলো যেখানে একজন শিক্ষার্থী তার মেধা ও মননে বেড়ে উঠতে বড় বেশি প্রয়োজন তার জ্ঞানের ভান্ডারকে বৃদ্ধি করা। যা নিহিত আছে অসংখ্য বইয়ের মধ্যে। বইয়ের প্রতি প্রেষণা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে প্রবল মোবাইল আসক্তি।

শিশু, কিশোর বয়সে মোবাইলের ব্যবহার কতটুকু বাঞ্চনীয় তা আমরা সকলে কম বেশি জানি। অথচ আমি বা আপনি সেই জানা থেকে বাস্তবে কতটুকু পালন করতে পারছি তা আজ বড় প্রশ্ন! আমাদের যাপিত জীবনের পরিবারের অনাগত সন্তানদের দিকে তাকালে দেখা যাবে আমরা কম বেশি সকলে মোবাইলের বিষণ এক যন্ত্রণার করালগ্রাসে আবদ্ধ। কেউ কাউকে থামাতে পারছে না।

সবাই রাত-বিরাতে, সময়ে অসময়ে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এই ছোট যন্ত্রটির কাছে জীবনকে সপে দিয়েছি। মনে হয় জীবনের রূপ, রস,আনন্দ-বেদনা, সুখ-শান্তি এখানেই সীমাবদ্ধ! আধুনিক প্রযুক্তির বদৌলতে এগিয়ে যাওয়া পৃথিবীর সাথে আমি সম্পৃক্ত হবো- তবে আসক্ত হবো না, এমন ভাবধারায় আমাদের অনাগত সন্তানদের এগিয় নিতে না পারলে আমার মনে হয় সামনে সমূহবিপদ আসন্ন।

 

শিশু, কিশোর, শিক্ষার্থী ও প্রিয় সন্তানদের আমরা যদি নিয়মিত বইপড়া, সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা, খেলাধুলাসহ বহুমাত্রিক মানবিক কাজে সম্পৃক্ত করাতে পারি তাহলে হয়তো এই মোবাইলের আসক্তি থেকে বের হতে পারবে, নচেৎ নয়। আজ বড়ই প্রয়োজন স্কুল-কলেজে বইপড়া প্রতিযোগিতা, লাইব্রেরির সংখ্যা বৃদ্ধি, গণপাঠাগারের ব্যবস্থা, গ্রামে-গঞ্জের ক্লাবগুলোতে পত্রিকা, সাময়িকী লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান বৃদ্বি কর্মসূচি প্রণয়ন করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর সমাজ বির্নিমাণে সকলকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা।

অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার আমাদের শরীর ও মনে নেতিবাচক যে প্রভাব ফেলে সেই ধারাণাটুকুও সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সরকারের প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা।

আসুন, সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমাদের অনাগত সন্তানদের বইয়ের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করার ক্ষেত্র সৃষ্টি করি, আহবান জানাই- ‘মোবাইল আসক্তি নয়, বই হোক আমাদের নিত্যসঙ্গী’। সুন্দর, সুনীল পৃথিবীজুড়ে বইয়ের মাধ্যমে সকলের জীবন জ্ঞানভান্ডারে সমৃদ্ধ হোক। শুভ্রতায় ভরে থাক সকলের জীবন।

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট