চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

চট্টগ্রাম অঞ্চলে পর্যটনের বিকাশ যে কারণে জরুরি

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী

৩১ মে, ২০২২ | ১২:২২ পূর্বাহ্ণ

দেশের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে সরকারকে অতি সাবধান হতে হবে। দেশে সম্প্রতি আলোচনা পর্যালোচনা চলছে ডলারের দামের অত্যধিক বৃদ্ধি নিয়ে। সাথে আমরা বৈদেশিক ঋণের বোঝা নিয়ে বিপদে পড়ছি কিনা। কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কোন কমে যাচ্ছে কি না।

বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের খাতগুলোর অন্যতম একটি হল বিদেশ ভ্রমণ। মানুষ মাত্রই কম বেশি ভ্রমণপ্রত্যাশী। সেই লক্ষ্যে যারা বেশি পয়সাওয়ালারা তারা ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ঘুরতে যায়। তার থেকে কিছুটা কম পয়সাওয়ালা যায় সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, মালয়েশিয়া, দুবাই। তার চেয়েও কম পয়সাওয়ালারা স্রোতের মত যাওয়া-আসা করছে ভারতে। যেমনি আকাশপথে, তেমনি স্থলপথে। এতে কষ্টার্জিত দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে

চট্টগ্রাম অঞ্চল দেশে প্রাকৃতিকভাবে অত্যন্ত সমৃদ্ধ সৌন্দর্য্যমন্ডিত। এখানে রয়েছে সমুদ্র, পাহাড় পর্বত, লেক, একাধিক দ্বীপ। এ অঞ্চলের সচেতন একাধিক ব্যক্তি আলাপে একমত হয় যে বান্দরবান জেলা পাহাড় পর্বত নিয়ে হাজার বা কয়েক শ’ একর এরিয়া লেক সৃষ্টি করে নানারকম বিনোদনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এখানে বিভিন্ন মানের কটেজ দৈনন্দিন পিকনিক পার্টির এরিয়া, বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্ট, ক্যাবলকার, বিভিন্ন বিনোদনের রাইটস, শিশুপার্ক সহজেই করা যায়।

প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক রেখে পাহাড়-পর্বতকে সাজিয়ে এসব কিছু করা কঠিন কিছু নয়। এখানে ধনীদের, মধ্যবিত্তদের, নিম্নবিত্তদের যাওয়ার, অবস্থানের ও বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। এসব কিছু করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পৃষ্টপোষকতা নেয়া যাবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একাধিক ক্যান্টনমেন্ট ও একাধিক ক্যাম্প রয়েছে। তারা বিনোদনের ব্যবস্থাও কম করে নাই। যেমন-নীলগিরি পর্বতের উপর কয়েকটি রিসোর্ট, কাপ্তাই-রাঙ্গামাটি লেকের ধারে, সাজেক পর্বতশীর্ষে রিসোর্ট উল্লেখযোগ্য। এসব রিসোর্টে সেনাবাহিনী ভাড়া প্রদান করে আয় করছে।

কাপ্তাই লেককে সাথে রেখে দক্ষিণ দিকে কয়েকশ একরের বিশাল এরিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের বিনোদন কমপ্লেক্স করা কঠিন হবে না। এতে ফাইভ স্টার, ত্রি-স্টার, টু-স্টার মানের হোটেল রিসোর্ট থাকবে। সড়কে যাতায়াতের পাশাপাশি হেলিকাপ্টার সার্ভিসও থাকতে পারে। এমনিতেই বান্দরবান জেলায় বগালেকসহ একাধিক প্রাকৃতিক লেক রয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ পর্বত কেওক্রাডং বান্দরবান জেলায়। নীলগিরি, চিম্বুক পাহাড়, তাজিনডং, ডিম পাহাড়সহ অসংখ্য উঁচু উঁচু পর্বত রয়েছে। বরফ না পড়লেও গরমকালে ঠান্ডা অনুভূত হয়। রাত্রে কম্বল, লেপ গায়ে দিতে হয়।

দেশে রয়েছে পর্যটন কর্পোরেশন। এ কর্পোরেশনের রয়েছে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। সারাদেশে ১০/১২ স্থানে পর্যটন কর্পোরেশন পরিচালিত মোটেল রয়েছে। বছরশেষে আয়-ব্যয় হিসাব করলে এখানে লোকসান বাদে লাভ দেখা যাবে মনে হয় না। দেশে একটা প্রবাদ বাক্য রয়েছে, সরকারী কর্মকাণ্ড মানেই লোকসান। বান্দরবান-রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি এ তিন জেলায় পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল রয়েছে। মনে হয় লোকসানেই রয়েছে। কিন্তু সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে উক্ত বিশাল আকৃতির পর্যটনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে দেশীয়ভাবে আয় তো হবেই; দেশের মানুষ স্রোতের মত বিদেশ যাওয়া কমে গেলে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।

সেন্টমার্টিন ৮ বর্গকিলোমিটারের ছোট একটি দ্বীপ। এখানে শুষ্ক মৌসুমে হাজার হাজার ভ্রমণকারী যাওয়া আসা করে। যা ছোট দ্বীপটি পরিবেশের জন্য চরম হুমকি। উখিয়া টেকনাফ পাহাড়ে গত কয়েকবছর যাবৎ ৮/১০ লাখ রোহিঙ্গা শরাণার্থী আশ্রয়রত।

সেন্টমার্টিনে মাত্র ৫/৬ হাজার লোকের বসবাস। তাদেরকে টেকনাফের পাহাড়ে সুন্দরভাবে আবাসনের ব্যবস্থা সহজে করা যায়। অতঃপর সেন্টমার্টিন দ্বীপটি সম্পূর্ণভাবে নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে দিয়ে দেওয়া হোক। তারা দ্বীপের ক্ষতি না হয় মতো পরিবেশ ঠিক রেখে ১/২ তলা বিশিষ্ট রিসোর্ট তৈরি করে পর্যটক আনা-নেয়ার ব্যবস্থা করবে। তাও হবে সীমিতসংখ্যক। সরকার এখান থেকে একটি ট্যাক্স নিতে পারে। যাতে ব্যয়বহুল হয়ে সীমিতসংখ্যক ট্যুরিস্ট যায়। অদূর ভবিষ্যতে এ প্রবাল দ্বীপটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে। এখানে নৌবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি থাকলে বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্যও সহায়ক হবে।

কক্সবাজার জেলা মগনামাতে কুতুবদিয়া চ্যানেলের তীরে বিশাল আকারের নৌবাহিনীর ঘাঁটি হচ্ছে। হতেই হবে এখানে। যেহেতু কর্ণফুলীর গভীরতা পরিবেশ আগের মত নেই। এর উত্তর দিকে সন্দ্বীপ, হাতিয়া, মনপুরা, ভোলা, বরিশাল, পায়রা ওদিকের সাগরের গভীরতা কম। অতএব নৌবাহিনীর ঘাঁটি স্থানান্তরের জন্য মগনামা কুতুবদিয়া চ্যানেলের পাড় যথাযথ। এ ঘাঁটির একপাশে শতএকর বা আরও কম বেশি এরিয়া নিয়ে রিসোর্ট করা যেতে পারে। এতে পাহাড়-পর্বতে সেনাবাহিনীর মত সেন্টমার্টিন ও মগনামায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী রিসোর্ট করে ন্যূনতম হলেও আয় করতে পারবে। কুতুবদিয়াকে সাজানো দেশের জন্য কল্যাণকর।

মূল ভূখণ্ড থেকে মাত্র ৪/৫ কি.মি দূরত্বে কুতুবদিয়া দ্বীপ পর্যায়ক্রমে ভেঙ্গে ভেঙ্গে সংকোচিত হয়ে আসছে। বর্তমান কুতুবদিয়ার আয়তন অবস্থান আগের অর্ধেকও নেই। অদূর ভবিষ্যতে পর্যায়ক্রমে বিলীন হয়ে গেলে মগনামা মাদারবাড়ী বড় বড় প্রকল্পসমূহের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। যেহেতু কুতুবদিয়া দ্বীপ নিরাপত্তা দেয়াল। এটা মগনামা মাদারবাড়ী হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের নিরাপত্তা বাঁধ। কুতুবদিয়াকে সাজিয়ে দেশের কল্যাণে ছোট ছোট মিল কলকারখানা করা যেতে পারে।

নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রিসোর্ট করে পর্যটকদের বিনোদনের খোরাকের ব্যবস্থা করা যাবে। আমাদের দেশে ব্যাপক হারে হেলিকপ্টার ভাড়া পাওয়া যায়। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে বিমান যাতায়াত বাদে হেলিকপ্টারে যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতে বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পটে যাতায়াতের জন্য হেলিকপ্টার সার্ভিসের ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশেও পার্বত্য চট্টগ্রামে, সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়ায় উন্নতমানের রিসোর্ট এর ব্যবস্থা করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার থেকে হেলিকপ্টার চালু করা যায়।

আগেই উল্লেখ করেছি সরকারকে দেশের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে সাবধান হতে হবে। বিদেশের ঋণ না নিয়ে কিভাবে দেশের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়েও ভাবতে হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে উপরে উল্লেখিত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়িত হলে দেশের মানুষ ভ্রমণের জন্য বিদেশ গমনের প্রবণতা কমে আসবে তাতে ইতস্ততা নেই। আশা কবর সরকার ও যথাযথ কর্তৃপক্ষ উক্ত বিষয়সমূহ নিয়ে ভাববে।

লেখক: প্রাবন্ধিক, গবেষক, কলামিস্ট

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট