চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শিশুর পুষ্টির সন্ধানে কিছু কথা

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ

২৭ জুন, ২০১৯ | ১:২৭ পূর্বাহ্ণ

মানুষের শরীরের বৃদ্ধি, বিকাশ এবং সুস্থতা সবকিছুর মূলে ভিটামিন। বড়দের যেমন ভিটামিন প্রয়োজন তেমনই সদ্যোজাত শিশুটির শরীরের জন্যেও ভিটামিন অপরিহার্য। বৃদ্ধিতে বাধা ছাড়াও এর অভাবে নানা ধরনের অসুখও হতে পারে। বড় হলে শরীর যদি সুস্থ এবং স্বাভাবিক রাখতে হয়, তার প্রস্তুতি কিন্তু শৈশব অবস্থা থেকে নেয়া প্রয়োজন।
ভিটামিন হল এক ধরনের জৈব পদার্থ, যা খুবই স্বল্প পরিমাণে হলেও একান্ত প্রয়োজনীয় মানুষের শরীরের বৃদ্ধি এবং পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য। ভিটামিন – ‘এ’, ভিটামিন – ‘বি’ কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, ভিটামিন – ডি, ভিটামিন –ই, এবং ভিটামিন – ‘কে’ গুরুত্বপূর্ণ।
লিভার, কডলিভার অয়েল, দুধ, ডিমের কুসুম এবং ভিটামিন যুক্ত যে সব মাখন, সবুজ শাকসবজি এবং হলুদ ফল যেমন আম বা পাকা পেঁপে ইত্যাদিতে ভিটামিন – ‘এ’ থাকে। ভিটামিন – ‘এ’র অভাবে বিভিন্ন রোগ দেখা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ‘রাতকানা’ রোগ। অর্থাৎ রাত্রে দেখতে অসুবিধে। ‘এ’ ভিটামিনের আরও বেশী অভাব হলে চোখের উপরের ঝিল্লিটা শুকিয়ে যায়। একে ডাক্তারী পরিভাষায় ‘জেরপথ্যালমিয়া’ বলে। এ অভাব যদি আরও বাড়ে তাহলে কর্নিয়া আক্রান্ত হয়। এক সময় এর ঝিল্লিটাও শুকিয়ে ফেটে গিয়ে সম্পূর্ণ কর্ণিয়া নষ্ট হয়ে যায় এবং দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি চলে যায়। ত্বকের নানা রকম রোগ হতে পারে। যেমন – চামড়া শুকিয়ে যাবে, খসখসে এবং মোটা হয়ে যাবে। হাড়ের বৃদ্ধি বিশেষভাবে বাধাপ্রাপ্ত হবে।
ভিটামিন – ‘এ’র পরিমাণ শরীরে বেশী হলে কিন্তু খিদে কমে যাবে। যকৃত এবং প্লীহা আকারে বড় হয়ে যাবে। বিভিন্ন জায়গার হাড় ফুলে যাবে এবং ব্যাথা হবে। পরিমাণ খুব বেড়ে গেলে রক্ত চাপ বেড়ে যাবে এবং নানা উপসর্গ দেখা দেবে। সুতরাং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন – ‘এ’ নেওয়া কখনও উচিত নয়। ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স বিশেষভাবে লিভার, মাংশ, ডিম, মাছ, সবুজ তরিতরকারি, অঙ্কুরিত ছোলা, বাদাম, দুধ এবং ছানায় বেশী পাওয়া যায়। এটার অভাবে বেরিবেরি নামে একটি রোগ হবে। যাতে অকারণে ক্লান্তি বোধ হবে, কর্মক্ষমতা হ্রাস পাবে, হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়বে। আরও অভাব হলে হৃদযন্ত্র আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। হাত-পা ফুলে যাবে, শ^াসকষ্ট দেখা দেবে। নার্ভের দুর্বলতার জন্য হাত-পা ঝিনঝিন করবে এবং মাংশ পেশীর দুর্বলতা দেখা দেবে। রাইবোফ্লেবিনের অভাবে দৃষ্টিশক্তির অসুবিধে হবে, জিভে, মুখে এবং ঠোঁটের কোণে ঘা হবে। নিকোটনিক এসিডের অভাবে পেলাগ্রা নামে রোগ হতে পারে। ফলিক এসিড ও ভিটামিন বি ১২ এর অভাবে বিশেষ ধরনের রক্তহীনতা দেখা দেবে।
ভিটামিন সি কমলালেবু, পাতিলের টমেটো, সবুজ শাকসবজি, বাধাকপি ইত্যাদিতে বেশী পাওয়া যায়। এটার অভাব হলে স্কার্ভি নামে একটি অসুখ হয়।
ভিটামিন ডি বেবিফুড, মাখন, মাজারিন এবং কডলিভার অয়েলে, সূর্যের আলো থেকে বিশেষভাবে পাওয়া যায়। এটার অভাবে রিকেট নামক রোগ হবে। তাই ভিটামিন এ র মতো ডি ও অকারণে ডাক্তারের পারমর্শ ছাড়া খাওয়ানো উচিত নয়। ভিটামিন ই সবুজ তরকারী, বাদাম, মটরশুটি ইত্যাদিতে বেশী পাওয়া যায়। এটার অভাবে প্রি ম্যাচিওরড বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এক বিশেষ ধরনের এনিমিয়া দেখা দেবে। একটু বড় বাচ্চাদের মাংশপেশীতে বারে বারে টান পড়বে, পায়ে ব্যথা হবে। এটাকে গ্রোয়িং পেন বলা হয়।
ভিটামিন কে সবুজ তরিতরকারি, লিভার ইত্যাদিতে বেশী পাওয়া যায়। এটার অভাবে রক্ত জমাট বেধে যাবে, কেটে গেলে সহজে রক্তপড়া বন্ধ হবে না।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন যেমন শরীরের সুস্থ বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় তেমনই মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন খেলে বাড়তি লাভ তো হয়ই না, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ এবং ডি অনেক ক্ষতিকারক প্রভাব দেখা দিতে পারে। তাই ভিটামিন খাওয়ালেই যে বাচ্চা মোটা হবে, লম্বা হবে অথবা তার বুদ্ধির বিকাশ বেশী ঘটবে, এ ধারণা ভুল। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন, খাওয়াবেন না এবং চেষ্টা করবেন যাতে ঔষধ না খাইয়ে নিয়ন্ত্রিত খাদ্য তালিকা থেকেই বাচ্চার শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের জোগান দেয়া যায়। ভিটামিন এ বেশী খেলে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে। বি ¯œায়ুর ক্ষতি করে, নায়াসিন আলসার ও ডায়াবেটিস বাড়িয়ে দেয়। আপনি তো ভিটামিন গবেষক নন। তাই বিজ্ঞাপন দেখে উৎফুল্ল হবেন না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট