চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গরিবের ঈদ খরচের জন্য ফিতরাহ আদায় করা

ওয়াজিব রায়হান আজাদ

২ জুন, ২০১৯ | ১:২০ পূর্বাহ্ণ

‘ছাদাকাতুল ফিত্র’ একটি ইসলামী পরিভাষা। ইহা দুটি শব্দের সমষ্টি: তথা ‘ছাদাকাহ’ ও ‘আল-ফিত্র’। ‘ছাদাকাহ’ অর্থাৎ দান যা একজন অধিক সামর্থ্যবান ব্যক্তি কোন অভাবী দরিদ্রকে প্রদান করে থাকেন। ‘আল-ফিত্র’ অর্থাৎ রোজা ভঙ্গ করা। অতএব ‘ছাদাকাতুল ফিত্র’ অর্থ হচ্ছে এমন এক ছাদাকাহ যা একজন রোজাদার রমজান মাসে সিয়ামের নির্দেশ পালন করার পর পহেলা শাওয়াল তারিখে যেদিন প্রথম রোজা রাখা বন্ধ করা হবে সেদিন দান করা। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশে পুণ্যের উদ্দেশ্যে যে বাধ্যতামূলক বা ঐচ্ছিক ‘দান’ সম্পাদন করা হয়, তাই ছাদাকাহ। এখানে এ ছাদাকাহ যেহেতু রাসুল করীমের প্রত্যক্ষ নির্দেশে সম্পাদিত হয় তাই তা ওয়াজিব। ছাদাকাতুল ফিত্রকে হাদীস শরীফে যাকাতুল ফিত্র নামেও অভিহিত করা হয়েছে। এ ছাদাকাহটি আমাদের দেশে ‘ফিত্রাহ’ নামে অভিহিত।
ইসলামে ফিতরাহ‘র বহু গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। ফিত্রাহ গরীবের হক। ঈদুল ফিতর উদযাপনের খরচ যোগানোর জন্য এটি আল্লাহ পাকের তরফ থেকে গরীবের প্রতি এক বিশেষ অনুগ্রহ। এছাড়া ফিতরাহ‘র আরো একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, রমজানের রোজা রাখতে গিয়ে আমাদের যে সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে যায় তার প্রতিবিধান করা। এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে ‘আব্বাস (রা.) বর্ণিত হাদীসের উদ্ধৃতি দেয়া যায়। তিনি বলেছেন: আল্লাহর রাসুল (সা:) ছাদাকাতুল ফিতর বাধ্যতামূলক করেছেন। রোজাদারের রোজাকে বাজে ও অশ্লীল কথার ত্রুটি বিধানকল্পে ও ফকীর-মিসকীনদের আহার্যের ব্যবস্থাকরণের উদ্দেশ্যেই। (আবু দাউদ, ইবন মাজা)। ঈদের দিন সকালে যদি কোন ব্যক্তি সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মালিক হয় অথবা সমপরিমাণ অন্যান্য সম্পদের অধিকারী হয় তাহলে তার উপর ফিতরাহ দেয়া ওয়াজিব। যার ফিতরাহ সে কিংবা পরিবারের পক্ষ থেকে যে কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি প্রদান করলেও আদায় হয়ে যাবে।
ফিতরাহ ঈদের নামাযের পূর্বে কিংবা আরো কয়েকদিন আগে আদায় করা উত্তম। তবে পরে আদায় করলেও আদায় হয়ে যাবে। ফিতরাহ যথাযথভাবে আদায় না করলে বান্দাকে গুনাহগার হতে হবে। ঈদ যে মুসলিম উম্মাহর সার্বজনীন উৎসব গরীবরা এ দান প্রাপ্তির ফলে তা অর্থবহ হয়ে উঠে। ফিতরাহ সম্পর্কে রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “এর (ফিতরাহ) দ্বারা তোমাদের ধনীদের আল্লাহ পবিত্র করেন এবং দরিদ্রদের তারা যা দান করে আল্লাহ তার চেয়ে তাদেরকে অনেক বেশি দান করেন।” (আবু দাউদ)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জামানায় ঈদুল ফিতরের দিনে আমরা ফিতরাহ বাবদ খাদ্য দান করতাম। আর আমাদের খাদ্য ছিল যব, কিশমিশ, মোনাক্কা,পনীর ও খোরমা।”-(বুখারী শরীফ)।
উপরোক্ত হাদীসসমূহের আলোকে আমাদের দেশে খাদ্যদ্রব্য না দিয়ে নগদ টাকা দিলেও ফিতরাহ আদায় হয়ে যাবে। সে হিসেবে এ বছর সারা দেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে ব্যক্তির আর্থিক সংগতি অনুসারে জনপ্রতি সর্বনি¤œ ৭০ টাকা আর সর্বোচ্চ ১৯৮০ টাকা ফিতরাহ ধার্য করেছেন। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়েদের পক্ষ থেকেও তার বাবা মা কিংবা অভিভাবকদের ফিতরাহ দিতে হবে। পিতামাতা, পুত্র-কন্যা, নাতী-নাতনী ও স্বামী-স্ত্রী ছাড়া সমাজের ফকীর-মিসকীনদেরকেই এ ফিতরাহ প্রদান করতে হবে। ফিতরাহ ছাড়াও আমরা যদি ঈদের কেনাকাটায় নিজ নিজ এলাকার অনাথ-দরিদ্র, অসহায়-বিধবা ও দিন মজুরের জন্য কিছু টাকা বরাদ্দ করি তাহলে আল্লাহ পাক আমাদের নেকী ও বরকত দান করবেন। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে ফিতরাহ যথাযথভাবে আদায়ের তৌফিক দান করুন। আমিন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট