চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রোজা : জানা-অজানা যাকাতযোগ্য সম্পদ ও তার নেসাব

২১ মে, ২০১৯ | ৩:০২ পূর্বাহ্ণ

কোন্ কোন্ সম্পদের যাকাত আদায় করতে হবে পবিত্র কুরআন তা অতি সংক্ষেপে এবং মহানবী সা.-এর হাদীসে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। ইসলামী ফিকহ বিশেষজ্ঞগণ এ দুই উৎস থেকে নেয়া নীতিমালার আলোকে যেসব সম্পদের ওপর যাকাত আবশ্যিক তার যে পরিচয় তুলে ধরেছেন তা নি¤œরূপ:
স্বর্ণ, রৌপ্য ও নগদ অর্থ বা বিহিত মুদ্রা (লিগ্যাল টেন্ডার) : ২০ মিসকাল বা সাড়ে সাত ভরি বা ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ; অথবা ২০০ দিরহাম বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি বা ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্য অথবা সমপরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি নগদ অর্থ থাকলে যাকাত আবশ্যিক হয়। নগদ অর্থ বলতে নিজের কাছে রক্ষিত টাকা-পয়সা, অন্যের কাছে পাওনা টাকা, ব্যাংকে রক্ষিত টাকা ইত্যাদিকে বোঝায়। মোটকথা নিজের মালিকানাধীন সমুদয় নগদ টাকা নিজের কাছে থাকুক বা অপরের কাছে, সবগুলোই যাকাতযোগ্য সম্পদ। এসব ক্ষেত্রে প্রদেয় যাকাতের পরিমাণ হবে এক দশমাংশের চার ভাগের একভাগ অর্থাৎ ২.৫%। ব্যবসায়িক সম্পদ : ইসলাম স্বর্ণ-রৌপ্য ও নগদ অর্থের মতো ব্যবসায়িক পণ্যেও যাকাত ফরজ করেছে। এ সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, সামুরা ইবনে জুনদুব রা. বলেন, “আমরা যা কিছু বিক্রয়ার্থে প্রস্তুত করি তার যাকাত দেয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সা. আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।” (আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫৬২) ব্যক্তিগত ও অংশিদারী উভয় ব্যবসার ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য।
পশুসম্পদ : পশুর সংখ্যা নেসাবমাত্রা পর্যন্ত পৌঁছালে, তাতে মালিকানার এক বছর অতিবাহিত হলে এবং তা সায়েমা বা বিচরণশীল হলে তার ওপর যাকাত ফরজ হয়। উল্লেখ্য, পশুর ক্ষেত্রে নেসাব হলো যথাক্রমে উট ৫টি, গরু ও মহিষ ৩০টি এবং দুম্বা, ভেড়া ও ছাগল ৪০টি।
ভূসম্পত্তি : মুসলমানদের মালিকানাধীন ভূমিতে উৎপন্ন ফসলের যাকাতকে বলা হয় উশর। হাদীসে এর পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে এভাবে: “যেসব ভূমি বৃষ্টির পানি, নদী-নালার পানি, ঝর্নার পানি দ্বারা সিক্ত হয় অথবা যা নিজে নিজেই সিক্ত থাকে, তার ফসলের এক দশমাংশ, আর যে ভূমি কৃত্রিম পানি সিঞ্চনের কোনো প্রক্রিয়ায় সিক্ত করা হয়, তার ফসলে উশরের অর্ধেক অর্থাৎ বিশ ভাগের এক ভাগ উশরস্বরূপ আদায় করতে হয়। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ১৩৬১) অবশ্য ফকীহগণ বলেন, উৎপাদিত ফসল পাঁচ ‘ওয়াসক’ পরিমাণ হতে হবে। আর ‘অসক’ হলো রাসুলুল্লাহ সা.-এর যুগে প্রচলিত সা’-এর পরিমাণে ষাট সা’। বর্তমানে পাঁচ ওয়াসক এর সমপরিমাণ হলো ৬৫৩ কেজি। (আল-হিদায়া, ১/২০১)
ব্যাংক ব্যালেন্স ও আর্থিক ইনস্ট্রুমেন্ট : আধুনিক প্রেক্ষাপটে যাকাতযোগ্য সম্পদের তালিকায় যেসব বিষয় যুক্ত হয়েছে তার মধ্যে ব্যাংক হিসাবে সঞ্চিত অর্থ, বন্ড, প্রাইজবন্ড ও মনিটরি পেপার, শেয়ার ও সিকিউরিটিজ, বিনিয়োগ ফান্ড, বীমা পলিসি অন্যতম। এগুলোর মূল্য নেসাব পরিমাণ হলে এবং তা একবছর পূর্ণ হলে তাতে যাকাত প্রদান করতে হবে।
শিল্প-কলকারখানা : শিল্প-কলকারখানার মেশিনের মূল্যের ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে না; তবে শিল্প-কারখানায় উৎপাদনের মৌলিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত কাঁচামাল এবং উৎপাদিত ও বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত পণ্য বছরাধিক কাল মজুদ থাকলে এবং তা নেসাব পরিমাণ হলে এর ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে।
যেসব সম্পদের যাকাত নেই: ইসলাম মানুষের সব সম্পদে যাকাত আবশ্যিক করেনি। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সাধারণভাবে ব্যবহার্য যেসব সম্পদের যাকাত নেই তার মধ্যে রয়েছে, ব্যবহার্য জমি; দোকান, কারখানা, গুদাম ও এর আসবাবপত্র; বসবাসের ঘর-বাড়ি; এক বছরের কম বয়সী গবাদি পশু; ব্যবহারের পোশাক; অধ্যয়নের বইপত্র, খাতা ও অন্যান্য সরঞ্জাম; গৃহস্থালীর তৈজসপত্র ও অফিসের আসবাবপত্র; গৃহপালিত হাঁস-মুরগি ও পাখি; চলাচলের জন্য গাড়ি; যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাম; নেসাব পূর্ণ হয়নি এমন যাকাতযোগ্য সম্পদ; নেসাব পরিমাণ অথচ এক বছর পূর্ণ হয়নি এমন সম্পদ; দাতব্য সংস্থাসমূহের মালিকানাধীন দাতব্য কাজে ওয়াফকৃত সম্পত্তি; ব্যবসার জন্য নয় এমন পুকুরের মাছ; ঋণ পরিশোধের জন্য জমাকৃত অর্থ ইত্যাদি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট