চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

ধর্ষণ প্রতিরোধে কমিশন গঠনে হাইকোর্টের আদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক হ ঢাকা অফিস

২০ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

দেশে ধর্ষণ ‘মহামারি’ আকার ধারণ করায় নারীদের জন্য স্বয়ংক্রিয় ‘এন্টি রেপ ডিভাইস’ সহজলভ্য করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করাসহ ৬০ দিনের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও চিলড্রেন’স চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে দায়ের করা এক রিটের শুনানি শেষে গতকাল রবিবার হাইকোর্ট এ আদেশ দেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। একইসঙ্গে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের হাত থেকে নারীদের রক্ষা করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়েও সরকারের ওপর রুল জারি করেছে আদালত।
রিটটি দায়ের করা হয়েছিল গত ১২ জানুয়ারি। রিটের পক্ষে আরেক আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, ‘এই ডিভাইসটি আমাদের দেশে সহজলভ্য নয়। তবে মালয়েশিয়াসহ এশিয়ার অনেক দেশে ব্যবহার করা হয়। আমরা চাইছি বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ডিভাইসটি আমাদের দেশের উপযোগী করে বাজারজাত করা হোক। আর পুলিশের ৯৯৯-এর সহায়তা আমরা যুক্ত করতে চাইছি। এটার যাতে অপব্যহার না হয় সেইভাবে করতে হবে। এই ডিভাইসটি নানা আকারের ও নানা কৌশলের হয়। এমনকি শরীরের সেনসিটিভ স্থানেও স্থাপন করা হয়।’
ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়েছে, হাইকোর্টের আদেশে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে ধর্ষণ প্রতিরোধক যন্ত্র বা ‘এন্টি রেপ ডিভাইস’ কমিটিতে বুয়েটের একজন বিশেষজ্ঞ অএপককে রাখতে বলা হয়েছে। আরো থাকবেন পুলিশের আইজি ও সরকারের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের মহাপরিচালক। আর এই ডিভাইসটি পুলিশের ৯৯৯ নাম্বারের সাথে কিভাবে যুক্ত করা যায় সে ব্যাপারেও মতামত দিতে বলা হয়েছে।
রিটের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম বলেন, ‘এন্টি রেপ ডিভাইস এমন একটি ডিভাইস যা ছোট ঘড়ির মত বা অন্য কোনো আকারের। এটা অনলাইন ও টেলিফোন নেটওয়ার্কে চিপস বা সিমের মাধ্যমে যুক্ত থাকে। কোনো নারী আক্রান্ত হলে বা যৌন সহিংসতার শিকার হলে ডিভাইসটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে এলার্ম দেয়। ফলে লোকজন এগিয়ে আসতে পারেন। আবার এটা ঘটনান্থলের ভিডিও, অডিও, ছবি বা তথ্য সংগ্রহে রাখে। ফলে আলামত পাওয়া সহজ হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এটাার সঙ্গে পুলিশের হেল্পলাইন নাম্বার ৯৯৯ সংযুক্ত করার কথা বলেছি। আদালতও সম্মতি দিয়েছেন। ওই কমিটি এখন ৬০ দিনের মধ্যে সুপারিশ করবে, এটা কিভাবে করা সম্ভব। এই ডিভাইস আলিবাবাসহ অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কিনতে পাওয়া যায়। বিশ্বের উন্নত দেশে এই ডিভাইস নারীরা ব্যবহারও করেন। দামও বেশি না। আমরা চাচ্ছি এটা বাংলাদেশে সহজলভ্য করা হোক। বাংলাদেশে এটা ব্যবহারে বাধা নেই। তবে সেটা সরকারের মাধ্যমে আসুক। এতে সচেতনতাও বাড়বে। নারীদের সাথে একটা সিকিউরিটি ডিভাইস থাকবে। ৯৯৯ এ যুক্ত হলে স্বয়ংক্রিভাবে ডিভাইস সহায়তা চাইবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ধর্ষণ মহামারি আকার ধারণ করেছে। এক বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়েছে। এর প্রধান কারণ বিচার হয়না। মাত্র তিনভাগ মামলায় অপরাধীর শাস্তি হয়। এই সিকিউরিটি ডিভাইসটা এখানে ব্যবহার হলে নারীরা শুধু ধর্ষণ নয়, যৌন হয়রানি, ইভটিজিংসহ আরো অনেক নিরাপত্তাহীনতা থেকে রক্ষায় সাহসী হবেন।’
মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট ইশরাত হাসান আরও বলেন, ‘এটা নারীর মধ্যে নিরাপত্তাবোধ বাড়াবে। আর যেহেতু এটা ঘটনার সময়সহ অনেক কিছু রেকর্ড করতে পারে তাই আলামতও সংরক্ষণ করবে। মামলায় ঘটনা প্রমাণে সহায়ক হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে নিরাপত্তা ডিভাইস ও আত্মরক্ষার ডিভাইস ব্যবহারের আগ্রহ আছে। কোনো কোনো নারী শারীরিক কসরতও শেখেন। এটা নিয়ে নীতিমালা করে সরকার এগিয়ে এলে নারীদের মধ্যে ভয় কমবে। অনেক নারী শুরুতে ভয়েই দুর্বল হয়ে যান। ফলে দুর্বৃত্তরা সহজেই তাদের ওপর যৌন সহিংসতা চালায়।’
এদিকে, গতকাল হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ সারাদেশে ধর্ষণ প্রতিরোধে একটি কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে এই কমিশন গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ওই কমিটিকে পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে ধর্ষণ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে একটি সুপারিশমালা তৈরি করে আদালতে প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট