চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সাক্ষরতায় পিছিয়ে দেশ

আজ আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পুরুষ শিক্ষার হার ৭৬.৭ শতাংশ নারী শিক্ষার হার ৭১.২ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:২২ পূর্বাহ্ণ

সাক্ষরতা একটি দেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দেশের অগ্রযাত্রায় এর একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষার সঙ্গেও সাক্ষরতার রয়েছে নিবিড় যোগসূত্র। দেখা গেছে, যে দেশে সাক্ষরতার হার যত বেশি সে দেশ তত বেশি উন্নত। দেশের মানুষের শিক্ষার হার বেড়েছে। তবে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন থেকে বাংলাদেশ বহুদূর পিছিয়ে। ২০১৮ সালে দেশের ১৫ বা তদূর্ধ্ব বয়সী জনসংখ্যার মধ্যে শিক্ষার হার ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৭ সালে শিক্ষার হার ছিল ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরোর (বিবিএস) ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্টাটিসটিকস-২০১৮’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি) (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় এ জরিপটি পরিচালনা করা হচ্ছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিবিএসের মহাপরিচালক ড. কৃষ্ণা গায়েন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক একেএম আশরাফুল হক। সাক্ষরতা কী? ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো সাক্ষরতার যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দেয়, সেটি পরবর্তী প্রতি দশকে পরিবর্তিত হতে থাকে। সাক্ষরতা হলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এক মানবীয় অধিকার। প্রায় সকল দেশই বহু আগে থেকে নিজের মতো করে এর সংজ্ঞা নির্ধারণ করে রাখে। এক সময় কেউ বর্ণমালা পড়তে বা নিজের নাম লিখতে পারলেই তাকে সাক্ষর বলে মনে করা হতো। বর্তমানে এ ধারণা অনেকটা প্রসারিত হয়েছে। এখন সাক্ষরতার জন্যে তিনটি শর্তের কথা বলা হয়েছে। ১. ব্যক্তি নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে পারবে ২. নিজের ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারবে। ৩. দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিক হিসেব-নিকেশ করতে পারবে।
শিক্ষার হার : ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে ১৫ ও এর বেশি বয়সী জনসংখ্যার মধ্যে শিক্ষার হার দাঁড়িয়েছে ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশে। এর মধ্যে পুরুষদের মধ্যে শিক্ষার হার ৭৬ দশমিক ৭ শতাংশ। নারীদের ক্ষেত্রে এ হার ৭১ দশমিক ২ শতাংশ। এর আগে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে জাতীয়ভাবে শিক্ষার হার ছিল ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ। এ হিসাবে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষার হার বেড়েছে। সাত বছর ও এর বেশি বয়সী জনসংখ্যার মধ্যে সাক্ষরতার হার গড় ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে এ অংশের স্বাক্ষরতার হার ছিল ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের যাত্রা ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ৮ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সে বছর ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইরানের রাজধানী তেহরানে বিশ্ব সাক্ষরতা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনের সুপারিশের প্রেক্ষিতে ইউনেস্কো ৮ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের মর্যাদা প্রদান করে। সেই থেকে প্রতি বছর দিনটি সারা পৃথিবীতে পালিত হয়ে আসছে। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ থেকে দিবসটি যথানিয়মে পালিত হয়ে আসছে ।

১৯৯১ সালে সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করে সাক্ষরতা আন্দোলনকে আরও একধাপ এগিয়ে নেয়া হয়। সরকার সাক্ষরতা কর্মসূচি সফল করার জন্য প্রশংসনীয় অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতভাগ শিশুভর্তি ও ঝরেপড়া রোধে সকলের জন্যে অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করে উপবৃত্তি প্রদান করছে। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হয়ে থাকে। সবার জন্য না হলেও ডিগ্রি স্তর পর্যন্ত উপবৃত্তি চলমান আছে। হাওর-বাওর ও দুর্গম এলাকার শিশুদের শিক্ষার জন্য বিশেষ বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। স্কুল ফিডিং চালু করা হয়েছে। শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চালু আছে। এসব কর্মসূচি সরকারের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট