চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশের তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা বহাল থাকছে

অনলাইন ডেস্ক

১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১০:১১ অপরাহ্ণ

বহুল আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা বিল, ২০২৩’ পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে সংসদীয় কমিটি। পরোয়ানা ছাড়াই তল্লাশি, সরঞ্জাম জব্দ, দেহ তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করতে পারবে পুলিশ—এমন বিধান বহাল রাখাসহ অংশীজনদের বেশির ভাগ সুপারিশ আমলে না নিয়েই সংসদে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। 

গতকাল রবিবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহর পক্ষে সংসদে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন কমিটির সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।

সংসদে উত্থাপিত বিলের ৪২ নম্বর ধারায় বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে পুলিশকে। সংসদীয় কমিটি এখানে সংশোধনী এনে সুপারিশ করেছে যে ‘এই ধারায় সাব-ইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মকর্তার জায়গায় পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) পর্যায়ের কর্মকর্তা বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করতে পারবেন।’

সংসদে উত্থাপিত বিলে থাকা ৩২ নম্বর ধারাটি বাতিলের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। ৩২ নম্বর ধারায় বলা ছিল, ‘যদি কোনো ব্যক্তি অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের আওতাভুক্ত কোনো অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংঘটন করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে তিনি অনধিক সাত বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

সাইবার নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলা দায়ের করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করে সাজার বিধান যুক্ত করার জন্য সংসদীয় কমিটির উপস্থাপিত প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মিথ্যা মামলার শিকার ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ দিলে আদালত তা আমলে নেবে—এমন বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি ধারায় শব্দগত পরিবর্তন আনারও সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

বিলে নতুন একটি ধারা যুক্ত করার সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি বলেছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ দায়ের করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ না জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তাহলে তা হবে একটি অপরাধ। এই অপরাধে মামলা বা অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি এবং যিনি অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন ঐ ব্যক্তি মূল অপরাধটির জন্য যে দণ্ড নির্ধারিত রয়েছে সেই দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

বিলটিতে বলা হয়েছে, ‘যদি এই আইনের একাধিক ধারায় কোনো মামলা বা অভিযোগ করেন, তাহলে ঐ ধারায় বর্ণিত অপরাধগুলোর মধ্যে মূল অপরাধের জন্য যে দণ্ডের পরিমাণ বেশি হয়, সেটাই দণ্ডের পরিমাণ হিসেবে নির্ধারণ করা যাবে।’ বিলে আরো বলা হয়, কোনো ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল এই অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ ও মামলার বিচার করতে পারবেন।

বহুল বিতর্কিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ রহিত করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন আইন প্রণয়নে গত ৫ সেপ্টেম্বর সংসদে ‘সাইবার নিরাপত্তা বিল, ২০২৩’ উত্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ঐ দিন সংসদ পাঁচ দিন সময় দিয়েছিল ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে। তবে, কমিটি গত বৃহস্পতিবার এক বৈঠকেই রিপোর্ট চূড়ান্ত করে। সংসদীয় কমিটির আমন্ত্রণে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ঐ দিনের বৈঠকে কয়েক জন সাংবাদিক নেতাও যোগ দেন।

পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার, তল্লাশি ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস জব্দের ক্ষমতাসহ নিপীড়নমূলক ধারা বহাল রেখে সাইবার নিরাপত্তা বিল সংসদে পাশের তোড়জোড়ের প্রতিবাদ জানিয়েছে সাংবাদিকদের ১৯টি সংগঠন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশ এবং এর অধীন সারা দেশের ১৮টি অঙ্গ ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ, মতামত ও প্রস্তাবনা উপেক্ষা করে দমনমূলক ধারাসহ বিলটি সংসদে পাশ করা হলে তা সাংবাদিক সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, সংসদে উত্থাপিত বিলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিতকরণের কথা বলা হলেও এর অধীনে বর্তমানে তদন্ত ও বিচারাধীন ৬ হাজার মামলা ডিজিটাল আইন অনুযায়ী বিচারের বিধান রাখা স্রেফ স্ববিরোধিতা এবং অসত্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিবৃতিতে তারা বিএফইউজের পক্ষ থেকে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বরাবর দেওয়া প্রস্তাবনা এবং সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপিত ১৪ দফা পর্যবেক্ষণ আমলে নিয়ে সাইবার নিরাপত্তা বিলটি পুনর্বিন্যাসের দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও তারা হুঁশিয়ারি দেন। বিএফইউজের একাংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকনসহ বিবৃতিদাতা সংগঠন ও নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনেয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি  মো. শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম প্রমুখ।

 

পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট