চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন পিছিয়ে দেবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

৭ আগস্ট, ২০২২ | ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

যে মুহূর্তে দেশের পোশাক কারখানাগুলো একের পর এক বিদেশি রপ্তানি আদেশ পাচ্ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে হঠাৎ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ওইসব রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে পিছিয়ে দেবে বলে মন্তব্য করছেন তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতৃবৃন্দ।

গত শুক্রবার রাতে সরকার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার পর গতকাল পৃথক বিবৃতিতের এই শঙ্কা প্রকাশ করেন পোশাক খাতের নেতৃবৃন্দ।

বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন বলেন, বহির্বিশ্বে জ্বালানি সংকটের কারণে সরকার বাধ্য হয়ে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করাতে পোশাক শিল্পের উৎপাদন খাতে খরচ বৃদ্ধি পাবে, যা রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিশ্চিত পিছিয়ে পড়তে হবে। করোনা সংক্রমণ পরবর্তীতে বিদেশি ক্রেতা কর্তৃক বর্তমানে বাংলাদেশে রপ্তানি আদেশ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে জ্বালানি তেলের উপর নির্ভর করে পোশাক শিল্পের উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হচ্ছে। এখন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে রপ্তানি ব্যয় আরো বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাকের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ফলে শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধে বিলম্ব / সমস্যার কারণে শ্রমিক অসন্তোষসহ এ’সেক্টরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।

বিকেএমইএ’র সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান বলেন, বিশ্ব বাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম কমতির দিকে, ঠিক তখন আমাদের দেশে জ্বালানির তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আমাদের হতবাক করেছে। এ সিদ্ধান্তের কারণে নিঃসন্দেহে চাপে পড়বে রপ্তানিমুখি শিল্পখাত। যদিও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য পুনঃবিবেচনা করা হবে বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রাণালয় থেকে জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ডিজেলের দাম ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি করে প্রতিলিটার ১১৪ টাকা করার সিদ্ধান্তের কারণে এর প্রভাব সরাসরি বিদ্যুৎ, পরিবহন তথা অন্যান্য উপখাতগুলোতে পরবে নিঃসন্দেহে; যা প্রকারান্তরের নিট খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে হ্রাস করবে। ফলে দেশের নিট পোশাক শিল্প উদ্যোক্তাদের রপ্তানি প্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা থাকছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনায় বসে খাতোয়ারি বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি বলে বিকেএমইএ মনে করছে।

বিকেএমইএ’র বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ২০২২-২৩ সালের অনুমোদিত বাজেটে উৎসে কর শূন্য দশমিক ৫০% থেকে বৃদ্ধি করে ১% করায় শিল্প উদ্যোক্তারা মারাত্মকভাবে চাপে পড়ে গেছে। এতো কিছুর পরেও গত বছর একদফা বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি এবং মাত্র কিছুদিন পূর্বেই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করে সরকার এবং উক্ত সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাদের ব্যাপক চাপে ফেলবে জেনেও দেশের স্বার্থে আমরা বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকে এটিকে স্বাগত জানায়। কিন্তু এখন জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপরই একটি মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করবে, ফলে বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

 

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রধানতম রপ্তানিখাত নিট শিল্পের ধারাবাহিক বিকাশকে ধরে রাখতে ও গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে যে অর্থনৈতিক বোঝা এই শিল্পের উদ্যোক্তাদের উপর পড়েছে, তা নিরসনকল্পে জরুরিভাবে আপাতকালীন সময়ের জন্য নগদ সহায়তার হার বৃদ্ধি করে, তা সমন্বয়ের অনুরোধ জানাচ্ছে বিকেএমইএ।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট