চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফিরে দেখা ২০২০: করোনায় দমেনি আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা অফিস

২৮ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১:৫৮ অপরাহ্ণ

আর কয়েকদিনের মধ্যেই শেষ হতে চলেছে ২০২০ সাল। সমসাময়িক বিশ্বে বিদায়ী বছরটি নানা কারণে ঘটনাবহুল হলেও সবকিছু তলিয়ে দিয়েছে কোভিড-১৯ নামের এক ভাইরাস।

বছরজুড়ে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে আলোচিত ছিল প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারীর খবর। এ ভাইরাসটি গোটা পৃথিবীকে তছনছ করে দিয়েছে। রাজনীতি-অর্থনীতি-শিক্ষা, সবকিছুই থমকে গিয়েছে এই ভয়ঙ্কর ভাইরাসের প্রকোপে। কবে এই ভাইরাস ধ্বংস হবে, কিংবা কিভাবে এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে মানুষজাতি, তা এখনও অজানা। বছরের শুরুতে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ২০২০ সাল নিয়ে নানা পরিকল্পনা করলেও কার্যত সে সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেছে খুব সামান্যই। যা সম্ভব হয়েছে, তাতে ছিল ডিজিটালাইজেশনের স্পর্শ।

বিগত এক দশকে দেশে ইন্টারনেটের ব্যাপক বিস্তৃতির কারণেই মূলত করোনা দুর্দিনেও বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালু ছিল। মাঠের রাজনীতি জায়গা করে নিয়েছে ইন্টারনেটে। আলোচনা সভা হচ্ছে জুম কিংবা স্টিমইয়ার্ড কানেকশনে। এরপরও বছরজুড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগ যতটা সক্রিয় ছিল, ততটা ছিল না বিএনপি। কমবেশি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে সারাবছর সক্রিয় ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বছরের শুরুতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিল দলটি। পরবর্তীতে মুজিববর্ষের শুরুতে অর্থাৎ মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহেই দেশে করোনাভাইরাসের সন্ধান মেলে।

মহামারী করোনার আঘাতে তছনছ হয়ে যায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বছর উদযাপনের বছরব্যাপী কর্মসূচি। এর মধ্যেও মানুষের পাশে ছিল দলটি। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও চলতি বছরে বিভিন্ন অঞ্চলের বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ান দলটির নেতাকর্মীরা। দলের বেশ কয়েকটি সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদনও দেওয়া হয়। মোদ্দাকথা, করোনাকালেও বছরজুড়ে বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে চাঙ্গা ছিল দলটি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বছরে আড়ম্বর ও জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের পরিকল্পনা ছিল আওয়ামী লীগের। কিন্তু করোনা সে পরিকল্পনায় বাধ সাধে। তাই সীমিত পরিসরে ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে দলটি। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলীয় সভাপতির বক্তব্য, জুমের মাধ্যমে বৈঠক, সামাজিক দূরত্ব মেনে সীমিত পরিসরে জাতির জনকের মাজার ও প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়।

করোনাকালে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্নদলের উন্মুক্ত সভা সমাবেশ বন্ধ ছিল। টানা সাত মাস পর গত ৩ অক্টোবর গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সভা সভাপতিত্ব করেন। এরপর থেকে কেন্দ্রীয় নেতারাও রাজনীতিতে সক্রিয় হন। কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেন। বিভাগীয় নেতারা তৃণমূলে আলোচনা সভা, বর্ধিত সভা ও সম্মেলনের কার্যক্রমে অংশ নেন।

শুরু থেকেই করোনা মোকাবিলায় মাঠে ছিলেন মূল দল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ঘরবন্দী মানুষের পাশে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে সারা দেশে কর্মহীন হয়ে পড়া হতদরিদ্র মানুষের মাঝে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা সারাদেশে ৯০ লাখ ২৫ হাজার ৩২৭ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। পাশাপাশি নগদ ৮ কোটি ৬২ লাখ ৮ হাজার টাকা অর্থসহায়তা প্রদান করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, দলীয় সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিরা এসব সহায়তা প্রদান করেন। এছাড়া পিপিই, চশমা, মাস্ক, সাবান, হ্যান্ড গ্লাভস, ফিনাইল, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ব্লিচিং পাউডার ও স্প্রে মেশিনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম ও টেলিমেডিসিন ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে।

বিভিন্ন এলাকায় ফ্রি এম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা হয়েছে, যার সেবা এখনো চলমান। সেই সাথে সারাদেশে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও কৃষক লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কৃষকের ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার মত অভিনব জনবান্ধব কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। একই সাথে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় রমজানে ইফতার, সেহরি ও বিনামূল্যে সবজি বিতরণ এবং বর্তমানে টেলিমেডিসিন, ফ্রি এম্বুলেন্স সার্ভিস ও লাশ দাফনসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

মহামারী করোনা মোকাবিলায় রাজনৈতিক নেতারা প্রথমদিকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে জনসাধারণের সঙ্গে সংযোগ রেখেছেন। সশরীরে যোগাযোগ না হলেও কর্মীদের সঙ্গে ভিডিও বার্তায় তথ্য আদান-প্রদান করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। পরে, কেন্দ্রীয় সম্মেলন ও সিটি নির্বাচনের পর সাংগঠনিক ভিত মজবুত করতে তৎপরতা বাড়ায় দলটি। এর অংশ হিসেবে নেয়া হয় বেশ কিছু কর্মসূচি। এ সময় সম্মেলন সম্পন্ন হওয়া ইউনিটগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের তাগিদ দেয় দলটি। পাশাপাশি জেলাগুলোর অসমাপ্ত সম্মেলন শেষ করা, সাংগঠনিক সফর, সদস্য সংগ্রহ অভিযান, প্রতি জেলার কমপক্ষে দু’জন প্রবীণ নেতাকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে সংবর্ধনা দেয়া, জেলা-উপজেলায় বর্ধিত, প্রতিনিধি ও কর্মীসভা সম্পন্ন করারও নির্দেশনা দেয়া হয়।

করোনা দুর্যোগে দলের পক্ষ থেকে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তাসহ প্রায় ১০ কোটি টাকা নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির উদ্যোগে সারাদেশের সব জেলা-উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হয়। সভানেত্রীর নির্দেশে ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি নগদ সহায়তা, ফ্রি এম্বুলেন্স সার্ভিস, টেলিমেডিসিন, লকডাউন এলাকায় রাতে খাবার পৌঁছানো, ইফতার ও সেহরি বিতরণ, সবজি বিতরণসহ কৃষকদের ধান কেটে ঘরে তুলে দেওয়া হয়।

সম্মেলনের দীর্ঘদিন পর পাঁচ সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে দলটি। সেগুলো হলো স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ এবং যুবলীগ। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট