চট্টগ্রাম রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪

চলচ্চিত্র সমালোচনা স্বপ্নছোঁয়া

শফিকুর রহমান মিঠু

২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ২:৩২ পূর্বাহ্ণ

স্বপ্নছোঁয়া সিনেমাটি তরুণ নির্মাতা শফিক হাসানের প্রথম ছবি। সঙ্গত কারণে তিনি খুব যতœবান হবেন এটাই স্বাভাবিক। এটি ট্র্যাজেডিক গল্পের সিনেমা। গল্পের শুরুতে দেখা যায়, তানভীর ফেইসবুকে তার পরিচিত মেয়েকে লেখে, সে তার সঙ্গে দেখা করতে চায়। রিপ্লেই আসে তাদের দেখা হবে। তানভীর সংসদ ভবনে অপেক্ষা করতে থাকে। এ সময় সাইমন আসে। সে তানভীরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। সে জানায়, মেয়ে সেজে সেই তানভীরের সাথে মজা করেছে। তানভীর তাকে ক্ষমা করে। তারা দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে যায়। একজন অপরজনের জন্য মরতেও রাজি হয়। সাইমন তানভীরের বাড়ির সবার মন জয় করে নেয়। সাইমন এতিম বলে তানভীরের মা রেবেকা চৌধুরী সাইমনকে নিজের ছেলের মত মেনে নেয়। সাইমন এতিম কিভাবে হল সিনেমায় তার কিছুই দেখানো হয় না। এটা দেখানো উচিত ছিল। এতিমখানায় বড় হলেও সাইমন গাড়ি চালানো, মারামারি করা, মদ খাওয়া, জুয়া খেলা, কম্পিউটার জানা সব তার নখদর্পণে। এতিম খানায় এত কিছু শেখানো হয় তা জনগনের জানা ছিল না। আদতেই তা হয় কিনা এটি কাহিনীকার খোলাসা করে লিখলে পারতেন। একদিন সাইমনদের মেসে তানভীরসহ জুয়া খেলছে। খেলার এক পর্যায়ে সবাই বিদায় নিয়ে ঘুমাতে যায়। এমন সময় মধ্যরাতে তানভীরের বালিশের নিচে যে টাকা ছিল তা নিতে আসে ঐ খেলায় অংশ গ্রহণকারী এক জুয়াড়ী। তানভীর ঘুম ভেঙে উঠে জুয়াড়ীকে দেখতে পায়। জুয়াড়ী তাকে পিস্তলের ভয় দেখায়।

তানভীর তার পিস্তল কেড়ে নিয়ে জুয়াড়ীকে মেরে ফেলে। সে হত্যাকারী হিসেবে ফেরারী হয়। সাইমন খুনের দায়ভার নেয়। আদালত তানভীরের অনুপস্থিতিতে সাইমনকে নির্দোষ ঘোষণা করে। কিছুদিন পর তানভীর তার পরিবারের কাছে ফিরে এসে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করে। পুলিশ কি ফেরারী আসামী খুঁজে পায়না, খুনের মত এত বড় একটা ঘটনা ঘটলতাও! সাইমনকে রেবেকা চৌধুরী এবং তার শ্বশুর প্রবীর মিত্র যেই ভাবে মেনে নিলেন যেন খুন কোন ঘটনাই না। এখানে আরো ড্রামা দেখানো উচিত ছিল। প্রবীর মিত্র তানভীরদের কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি তার ব্যবসা নাতি তানভীরকে বুঝিয়ে দেন। সে হয় কোম্পানির এমডি আর সাইমন হয় ডিএমডি। সাইমন এত বড় একটা কোম্পানির ডিএমডি হল। তার পড়ালেখা কি তার কিছুই দেখানো হয় না। যদিও সাইমনকে তার মুখ দিয়ে উক্তি বের করানো হয়। আমি এ পদের যোগ্য না। সাইমন ডিএমডি হোক এই কোম্পানীর জি.এম মিশা সওদাগার তা মেনে নেননি। তিনি কোম্পানিকে ধ্বংসের জন্য যা করার সব ষড়যন্ত্র করতে থাকেন। মিশা মেয়েদেরকে চাকুরি দেয়ার নামে তাদেরকে ভোগের সামগ্রী বানান। নায়িকা ববির বান্ধবী এ কোম্পানীতে চাকুরি নিতে এলে মিশা তাকে শ্লীলতাহানি করতে চেষ্টা করে। মেয়েটি দৌড়ে পালিয়ে যায়। গিয়ে ববিকে এসব জানায়। ববি এসে মিশাকে মারধর করে।

একদিন ববিদের কলেজের থেকে বান্ধবীরা পিকনিকে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে যায়। সাইমন আগে থেকে ববিকে পছন্দ করে। সে গাড়ি নিয়ে তাদের পিছু পিছু যায়। ববি একা একা ঘুরে বেড়ানোর সময় মাস্তানদের হাতে পড়ে। সাইমন তাদের হাত থেকে ববিকে উদ্ধার করে। ববি সাইমন কে শুধু ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসে। এদিকে সাইমন তার ঠিকানা তাকে খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে যায়। তাকে ভালবাসার প্রস্তাব দেয়। ববি সায়মনকে তার তার চাচার সাথে দেখা করতে বলে। সাইমন তার মেজর চাচার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি ববিকে ডিস্টার্বের অজুহাতে সাইমনকে জেলে পাঠায়। সাইমন মনে খুব দুঃখ পায়। সে প্রতিজ্ঞা করে ববিকেই বিয়ে করবে। ববি এবার সাইমনকে তার বাবা কাজী হায়াৎ এর কাছে পাঠায়। তিনি বড় ব্যবসায়ী, রাগী এবং অহংকারী। সাইমনকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। সাইমন খুব কষ্ট পান। এদিকে তানভীর ব্যবসায়ীক কাজে সিঙ্গাপুর যায়। কাজী হায়াৎ তার মেয়ে ববিকে বিয়ে দেবার জন্য উঠে পড়ে লাগেন। তানভীরের সাথে ববির বিয়ে ঠিক হয়। সায়মন নিজেকে গুটিয়ে নেয়। মদ, সিগারেট খেয়ে নিজেকে নিঃশেষ করে দিতে চায়। তানভীর বিদেশ থেকে ফিরে আসে। একদিন মাতাল অবস্থায় সাইমন পড়েছিল। তাকে বিছানায় শুইয়ে দেবার সময় অনুশোচনায় ভোগা ববি সাইমনকে ফোন করে। তানভীর ফোন হাতে নিয়ে সেখানে তার হবু স্ত্রীর ডায়াল দেখতে পায়। সে ববির বাসায় যায়। বলে যে, হয় সাইমনকে বিয়ে করবে, নাহয় তাকে বিয়ে করবে। ববি বলে যে, এসব আপনাদের দুই বন্ধুর ব্যাপার। অবশেষে ববি তানভীরের সাথে যেতে রাজী হয়। পথের মাঝে মিশা সওদাগর তাদেরকে রাস্তায় অপহরণ করে। খবর পেয়ে সাইমন তাদেরকে উদ্ধার করতে আসে। মিশার বাহিনী পরাজিত হয়। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। মৌলিক গল্পের এ ছবিটিতে প্রত্যেকেই খুব ভাল অভিনয় করেছেন। সাইমন যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। ববি অহংকারী এবং অন্যান্য দৃশ্যে পূর্বের তুলনায় ভাল অভিনয় করেছেন। তার অভিনয় মনে দাগ কাটার মত। তানভীরকে কখনো নবীন অভিনেতা মনে হয় নাই। যথেষ্ট ভাল করেছেন। রাগী পিতার চরিত্রে কাজী হায়াৎকে যথার্থ মনে হয়েছে। প্রবীর মিত্র, মিশা সওদাগর, কাজের ছেলে, শ্রমিকনেতা, রেবেকা চৌধুরী প্রত্যেকেই ভাল করেছেন।

তবে অযাচিত ভাবে শ্রমিক নেতা হিসেবে পরিচাল নিরঞ্জন সরকারকে উপস্থাপন না করে অন্য কোনো নিয়মিত শিল্পীকে এ চরিত্রে নিলে আরো ভাল হত। কিছু অসঙ্গতি ছাড়া কাহিনী মোটামুটি ভাল। ছবিতে বেশ কটি গান রয়েছে। তার মধ্যে তানভীর ও ববি অভিনীত গানটি বেশি ভাল ছিল। গানগুলোর মূখে মুখে ফেরার মত না হলেও লোকেশনওগুলো খুব ভাল ছিল। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ট্র্যাজেডি পূর্ণ দৃশ্যে অসফল। আরো যতœ দরকার ছিল। ক্যামারার কাজ কোথাও কোথাও খুবই ভাল হয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট