চট্টগ্রাম সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে দৃষ্টি চট্টগ্রামের বিশেষ আয়োজন মুক্তির কথা শুনি

হাসান মাহদি

২১ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৩:৫৭ পূর্বাহ্ণ

১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১, তালিকাবদ্ধ বাঙালি মেধাবী সূর্যসন্তাদের রাজাকার-আলবদর বাহিনীরা চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে যায় । কারো শরীর ক্ষত-বিক্ষত করে, চোখ উপড়ে ফেলা হয় কারো, কারো বা কণ্ঠ ব্যবচ্ছেদ করা হয়, কেউ বা বুকের মধ্যে ধারণ করে অগণিত বুলেটের গভীর গর্ত; তবে একটা স্বাদ সবাই পায়Ñ ‘নির্মমতম মৃত্যুর’ । তাদের একটাই অপরাধ, তারা দেশের জন্য লড়েছিল, তারা দেশকে ভালোবেসেছিল সেই সকল বুদ্ধিজীবীরাই সৃজন করেছিলেন বাংলার স্বাধীনতার সূর্যপথ, তাদের অবদান নিঃশেষে বিভাজ্য হবার নয় ,আর তাইতো ডিসেম্বরের এই দিনটিতে বাঙালি জাতি অবনত মস্তকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বীতশ্রদ্ধ সূর্যসন্তানদের।
দৃপ্ত করোটির এ বুদ্ধিজীবীদের অন্তরের অর্ঘ্য টুকুন নিবেদন করার জন্য ‘দৃষ্টি চট্টগ্রাম’ টিআইসিতে এক ভিন্ন ব্যঞ্জনায় ‘এসো মুক্তির কথা শুনি’ শিরোনামের একটি ভিন্নধর্মী কার্যক্রমের আয়োজন করে।
“মুক্তির-মন্দির সোপান তলে, কত প্রাণ হলো বলিদান ”- গানটির সুরের মূর্ছনায় অনুষ্ঠানটি সূচনা হয়। দর্শকসারিতে সুরের মোহ কাটতে না কাটতেই খুদে আবৃত্তিশিল্পী শ্রুতির সম্মোহনী আবৃত্তি সবাইকে আলোড়িত করে। কানায় কানায় পূর্ণ মিলনায়তন একেবারেই চুপচাপ, সেই নিরবতার মধ্যে উপস্থাপক সাবের শাহ প্ন্যানচেটের আবহে জাতির শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একে একে আমন্ত্রণ জানান মঞ্চে। উপ-পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের চরিত্রায়ন করেন। কবি ও ছড়াকার জিন্না চৌধুরীর ‘নতুন চন্দ্র সিংহ’, সাইফুদ্দিন মুন্না ‘জহির রায়হান’, কাজী আরফাত ‘ডা. আব্দুল আলীম চৌধুরী’, মিলি চৌধুরী ‘জাহানারা ইমাম’, মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম ‘মুনীর চৌধুরী’ এবং তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী শহীদুল্লাহ কায়সারের চরিত্রায়ন করেন । পুরো কার্যক্রম জুড়ে দেশের গান পরিবেশন করেন বনকুসুম বড়–য়া নুপুর ,প্রিয়ম দাশ এবং মাহফুজুল ইসলাম।
সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান তার বাবার ( আতাউর রহমান খান কায়সার) শেষ চিঠিটুকু পাঠ করে অশ্রুজলে ভাসান সবাইকে। নাট্যজন সাবিরা সুলতানা বিনা পাঠ করেন যুদ্ধদিনের কথা। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক নিতাই কুমার ভট্টাচার্য, দৈনিক পূর্বকোণের ফিচার স¤পাদক এজাজ ইউসুফীসহ আরো অনেক সাংবাদিক, লেখক, আবৃত্তিশিল্পী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন প্রাজ্ঞজনেরা। দৃষ্টিনন্দন এই কার্যক্রমের সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন দৃষ্টি চট্টগ্রাম-এর সভাপতি মাসুদ বকুল।
স্মৃতি গীতিকা, পাঠ পরিবেশন, আবৃত্তি, গান ও ভৌতিক প্ন্যানচেটের এক মোহনীয় সন্নিবেশে সাজানো ‘মুক্তির কথা শুনি’ অনুষ্ঠানটি আলোড়িত করে টিএসসিতে উপস্থিত থাকা দর্শকদের, তাদের ভাষ্যমতে অনুষ্ঠানটি ছিল মোহনীয়, আবেগতাড়িত ও রোমাঞ্চিত।
কার্যক্রমটির মাধ্যমে শুধু শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন নয় এছাড়াও জীবিত বুদ্ধিজীবীদের এবং সর্বস্তরের জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় তাদের সামাজিক ও জাতীয় কর্তব্য স¤পর্কে। সহস্র শহীদ ও বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রেখে, গহনতম আবেগে “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি” জাতীয় সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে কার্যক্রমটি উপসংহার টানা হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট