চট্টগ্রাম সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪

ছবিতে স্বপ্ন ধরেন মোহাম্মদ শাহজাহান

শহীদ রাসেল

১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:১৮ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ শাহজাহান। এই সময়ের তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল আলোকচিত্রশিল্পীদের একজন। বড়ো হয়ে খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ থাকলেও ছবি ও ক্যামেরার ঝোঁক তাঁকে বেশি টানত। ছবি, ক্যামেরা ও ক্লিকের এতদূর এগিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে শাহজাহানের প্রধানতম অনুপ্রেরণা হলেন শিক্ষক আলোকচিত্রী শোয়েব ফারুকী।
শাহজাহান ফটোআর্ট ইনস্টিটিউট থেকে ফটোগ্রাফির কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি মূলত স্টাডি-নির্ভর ছবির পিছনে ছুটতে পছন্দ করেন যে-ছবির মাধ্যমে সমাজে একটা সঙ্গতি তথা ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
বেশ সাদামাঠা জীবনের ফ্রেমে প্রচারবিমুখ এই তারুণ্যশক্তি নিবিড় শৈল্পিকতায় জনজীবনের হাসি-কান্না তুলে আনেন। ফুটিয়ে তোলেন চারপাশের প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য।
বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে আলোকচিত্রশিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ সম্ভাবনাময় বলে দাবি করেন শাহজাহান। তিনি বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেসব আলোকচিত্র-প্রতিযোগিতাগুলো হচ্ছে সেগুলোর প্রায় প্রতিটিতেই আমাদের মেধাবী আলোকচিত্রশিল্পীদের কাজ সম্মানজনক স্থান লাভ করছে।
জাতীয় পর্যায়ের পুরস্কারের মধ্যে শাহজাহান ইউনেস্কো আয়োজিত কালার অব বাংলাদেশ আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান অর্জন করেন।
দেশের সীমানা পেরিয়ে তিনি কৃতিত্ব দেখান আন্তর্জাতিক পরিম-লেও। তিনি যুক্তরাষ্ট ভিক্তিক মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতা আরবান ফটোগ্রাফি অব দ্য ইয়ার ২০১৮ পুরস্কার অর্জন করেন। বাংলাদেশ ফটোগ্রাফি সোসাইটি-আয়োজিত আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।
তাঁর ছবি বিশ্বের বিখ্যাত সংবাদ সংস্থা, সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পাশাপাশি প্রদর্শিত হয়েছে ইংল্যন্ড, আমেরিকা, ইতালি, গ্রিস, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, নরওয়ে, ডেনমার্ক, জার্মানি, দুবাই, ভারত, নেপাল, কোরিয়া. সুইজারল্যান্ডের আলোকচিত্র গ্যালারিসমূহে। এছাড়া ইউ এন এইচ সি আর, ইউনিসেফ, সেইভ দ্য চিলড্রেন, ইউএস এইড, রেডক্রসসহ বিভিন্ন সেবামূলক দেশি-বিদেশি উন্নয়নসংস্থার প্রকাশনায় কভার ফটো হিসেবে তাঁর ছবি প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন বই-পত্রিকায় প্রচ্ছদছবি, ক্যালেন্ডারসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও তাঁর ছবিসমূহ নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।
শাহজাহান তাঁর পুরস্কারপ্রাপ্ত কয়েকটি ছবির গল্প শোনান। এগুলোর মধ্যে একটি হলো কর্ণফুলী নদীর দূষিত পানির স্রোতে ওপার থেকে ডিঙিনৌকায় স্বচ্ছ পানি নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য এবং অপরটি হলো চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসের সারিবদ্ধ অসংখ্য গাছে দৃশ্যমান একাধিক পেরেক লাগিয়ে এক অমানবিক ব্যানার তৈরি করার চিত্র। এছাড়া তাঁর অগণিত ছবির ছোটো-ছোটো জীবনকাহিনি যা কেবল শিল্পমনকে নয়, সাধারণের মর্মমূলকেও ছুঁয়ে যায় গভীর থেকে।
আন্তর্জাতিক কিংবা জাতীয় পুরস্কার অর্জনের পর সেই ছবি সংশ্লিষ্ট সাধারণ মানুষগুলোর কাছে আবারো ছুটেযান তিনি। যথাসাধ্য চেষ্টা করেন তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করার।
ফটোগ্রাফি নিয়ে ভবিষৎ পরিকল্পনা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সুস্থধারায় আলোকচিত্রচর্চার মাধ্যমে অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে অনন্য ভূমিকা পালন করাই আমার মূল লক্ষ্য। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সৌভাগ্য আমাকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে।’ তিনি স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশে আলোকচিত্রশিল্প একটি শক্তিমান গণমাধ্যম হিসেবে তারুণ্যশক্তিকে আকৃষ্ট করবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট