ভার্জিনিয়া উল্ফের জন্ম ২৫ জানুয়ারি ১৮৮২সালে। অবস্থাপন্ন এক ইংরেজ পরিবারে। তাঁর বাবা স্যার লেসলি স্টেফেন একজন ইতিহাসবিদ ও লেখক হিসেবে সমাদৃত ছিলেন। তাঁর মা জুলিয়া প্রিন্সেপ এর জন্ম হয়েছিল ভারতে। তিনি প্রি-রাফায়েলাইট পেইন্টিংয়ের মডেল হিসেবে কাজ করেছিলেন। পেশায় সেবিকা প্রিন্সেপ নার্সিংয়ের উপর একটা বই ও লিখেছিলেন। মুক্তমনা বা-মা’র হাতে বেড়ে ওঠেন উল্ফ। যুবতী বয়সে তিনি লেখালেখিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। ১৯১৫সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দ্য ভয়েজ আউট ‘ প্রকাশিত হয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলো হলো মিসেস ড্যালোওয়ে, টু দি লাইটহাউজ, এবং অরল্যান্ডো। নন-ফিকশন এর মধ্যে ‘অন বিয়িঙ ইল’ এবং নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা ‘আ রুম অভস ওয়ান’স ওন’ বিখ্যাত।
ব্যক্তি জীবনে হতাশা ও মানসিক সংকট থেকে কখনো বেরিয়ে আসতে পারেননি উল্ফ। একের পর এক পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু তাঁর সেই সংকট আরো বাড়িয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে উল্ফের মানসিক সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করে। তাঁর স্বামী লেওনার্ড সবসময় তাঁর পাশে ছিলেন। যুদ্ধচলাকালীন সময়ে উল্ফ দম্পতি সিদ্ধান্ত নেন যদি জার্মানি ইংল্যান্ড দখল করে নেয় তাহলে তাঁরা দু’জন আত্মহত্যা করবেন। উল্ফের ভয় ছিল তাঁর ইহুদি স্বামী লেওনার্ডের নিরাপত্তা নিয়ে। ১৯৪০ সালে উল্ফ দম্পতির লন্ডনের বাড়িটা গুড়িয়ে যায় জার্মানদের নিক্ষিপ্ত বোমায়।
মানসিক কষ্ট সহ্য করতে না পেরে উল্ফ তাঁর ওভারকোটের পকেটে পাথর ভরে ‘ওস’ নদীতে ঝাঁপ দেন। তিন সপ্তাহ পর তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে প্রশাসন।
আত্মহত্যা করার আগে উল্ফ তাঁর স্বামীকে লিখে গিয়েছিলেন-
মার্চ ২৮,১৯৪১
প্রিয়,
নিশ্চিতভাবে বলা যায় আমি আবারো পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমি মনে করি আমরা আর কোন দুঃসময়ের মুখোমুখি হবার জন্য প্রস্তুত নই। উপরন্ত সুস্থ হবার আর কোন নিশ্চয়তাও দেখছি না। আস্তে আস্তে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছি এবং কোনভাবেই কোনকিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছি না। সুতরাং আমার মতে সবচেয়ে ভাল কাজটা করতে যাচ্ছি এবার। তুমি আমাকে সর্বোচ্চ সুখ দিয়েছ। সবক্ষেত্রে তুমি সর্বোচ্চটা-ই দিয়েছ আমাকে। অসুখে আক্রান্ত হবার আগমূহুর্ত পর্যন্ত আমরা দুইজন সবচেয়ে ভাল সময়টা কাটিয়েছি। আমি আর পারছি না। আমি জানি আমি তোমার জীবন ধবংস করে যাচ্ছি। জানি আমাকে ছাড়া কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। তুমি পারবে এ – আমার বিশ্বাস। দেখ, আমি ঠিকঠাকমত এটাও লিখতে পারছি না। আমি পড়তে পারছি না আর। যেটা বলতে চেয়েছি, জীবনের সমস্ত সুখের জন্য তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ। সারাটা জীবন তুমি অসম্ভব ধৈর্যশীল ছিলে আমার প্রতি। অসম্ভব ভালো আচরণ করেছ তুমি। এ কথা সবাই জানে। তুমিই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছ এতদিন। তোমার ভালোত্ব ছাড়া আর সবকিছুই আমাকে ছেড়ে গেছে। তোমার জীবনটাকে এভাবে তিলেতিলে শেষ করতে চাই না আর।
আমি মনে করি পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী ‘মানিকজোড়’ ছিলাম আমরা।
শিক্ষক, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়।