চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নায়িকা প্রধান উপন্যাস কাচের মেয়ে

বিটুল দেব

২২ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:৩৭ পূর্বাহ্ণ

‘কাচের মেয়ে’ নারী সচেতন মূলক নায়িকা প্রধান উপন্যাস। সহজ সরল বাক্যে বিচিত্র বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। মাঝে-মাঝে কথোপকথনে আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়।
চাণক্য বাড়ৈ মূলত কবি। ‘পাপ ও পূর্ণজন্ম’ (ঐতিহ্য- ২০১২), ‘চাঁদের মাটির টেরাকোটা’ (বিভাস- ২০১৫) তার দু’টি কাব্যগ্রন্থ । এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এসেছেন ‘কাচের মেয়ে’ উপন্যাস নিয়ে।
উপন্যাসের নায়িকার নাম সানিয়া মেহজাবীন। নায়িকার ফুফু রেহানা। রেহানার বড় ছেলে সালাউদ্দীন। ছোট ছেলে আলাউদ্দীন। নায়িকার বাবা জহির। মামা কাওসার আর সৎ মা মরিয়ম। বিশ^বিদ্যালয়ের বন্ধু ও বান্ধবীর মধ্যে মালিকা, ধ্রুব, জেনি, রেজাউল করিম রিপন স্যার ছাড়াও ছোট-বড় আরো চরিত্রে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখিকা।

“ যতদিন পরীক্ষা দিয়ে এসেছি ততদিন ছেলে আর মেয়েদের আলাদা কোন প্রশ্ন অথবা পরীক্ষা পদ্ধতি ছিল না।” এমন যুক্তি দিয়ে দাঁড় করেছেন উপন্যাসের প্রেক্ষাপট। আসলে ঠিক তো, পরীক্ষায় একই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে উত্তীর্ণ মেয়েরা। তবু তাদের নানা কাজে ছোট করে রাখা হয়।
ছোট ছোট কিছু নিষেধ আর উপদেশ ছিল মায়ের। “মাথায় স্কার্ফ না পরে স্কুলে যাবি না, দরকার না হলে ছেলেদের সাথে কথা বলবি না, খিল খিল করে ছোট মাইনষের মতো হাসবি না, বাজারের উপর দিয়ে একা যাওয়া-আসা করবি না” – এরকম একগাদা ‘না’ এসে পথ আটকে দাঁড়াল আমার।
না শব্দগুচ্ছ ছুঁড়ে দিয়ে কেড়ে নেয় মেয়েদের স্বাধীনতা। ভয়ের বীজ রোপন করে দেয় মনে ও মেয়েদের মাথায়। অনিরাপদ তাদের জন্য পৃথিবীটা তা ইশারায় দেখিয়ে দেয়।

“পেছন থেকে নাম ধরে ডাক দিচ্ছে। শিস বাজাচ্ছে কেউ। কেউ প্রায় গা ঘেঁষে অদরকারি ক্রিং ক্রিং আওয়াজ তুলে সাইকেল চালিয়ে চলে যাচ্ছে সিনেমার নায়কের মতো। তখন মা নেই পৃথিবীতে। আমার বড় হয়ে ওঠার এইসব উপসর্গ আর বলার সুযোগ পেলাম না তাকে। শুধু রাস্তাতেই নয়, স্কুলের ভেতরে, মাঠে, ক্লাস রুমে। চেয়ার টেবিল আর ব্ল্যাকবোর্ডে অদৃশ্য হাত এসে আমার নাম লিখে রেখে যেতে শুরু করল। চিঠি আসতে লাগল উড়োখামে। বিষ খাওয়ার হুমকি এল, যদি ‘হ্যাঁ’ না বলি। হাত কেটে রক্তের হরফে লাভ চিহ্ন এঁকে কেউ লিখল ‘আই লাভ সানিয়া’। বেপরোয়া কেউ তার নিজের নামের সাথে যোগ চিহ্ন দিয়ে যে বেঞ্চিতে আমি বসি, সেখানে খোদাই করে লিখে রেখে গেল আমার তিন অক্ষরের নাম।”
উপন্যাসে গ্রামীণ জীবন সচিত্র হুবহু তুলে এনেছেন লেখিকা। মাধ্যমিক ক্লাসে পা দেয়ার সাথে সাথে ছেলেদের অশান্তিতে পার করতে হয় মেয়েদের স্কুলজীবন।

আমার মনের সা¤্রাজ্যে সবসময় একজন রাজকুমারই বাস করে। যদিও আমি কোনো দিন তার যোগ্য হয়ে উঠতে পারব না। তবু আমি গভীরভাবে বিশ^াস করি, ভালোবাসা যদি নিখাদ হয়, তাহলে যোগ্যতার সমস্ত ঘাটতি একদিন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। আর সেই পূর্ণ হৃদয় নিয়েই আবার, দরকার হলে বারবার তার সামনে গিয়ে বলব, “আপনাকে আমি খুব তীব্রভাবে অনুভব করি। জ্যৈষ্ঠের মেঘে যেমন বজ্র থাকে, তেমনি সারাক্ষণ আমার সমস্ত ভাবনাজুড়ে আপনি থাকেন। আপনিই আমার ভালোবাসার রাজকুমার। বুকের ভেতরে বিনা মেঘে বজ্রপতনের অসহ্য অনুভূতি শুধু আপনি।”
বাস্তব জগতের মতো ভার্চুয়াল জগতটাও মেয়েদের জন্য নিরাপদ নয়। বরং আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এর পরই আমি আমার সব ছবি সরিয়ে ফেললাম। প্রোফাইলে জুড়ে দিলাম কাচের পুতুলের ছবি আর আমার আইডির নাম বদল করে রাখলাম কাচের মেয়ে।
উপন্যাসিক সত্যি কথাগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন। মেয়েদের জন্য বর্তমানে ফেসবুকটাও নিরাপদ না। অযথা ইনবক্সে চ্যাটিং আর আজেবাজে কমেন্টে বিরক্তি করে তুলে।

– বিশ^াস করুন, স্যার। ছাড়–ন, প্লিজ। আপনি আমার বাবার মতো।
বর্তমানে স্কুল কলেজে এমন হাজারো নোঙরা ঘটনা ঘটে। এমন শিক্ষকের জন্য কালো দাগ লাগে বিদ্যালয়ের দেয়ালে। শিক্ষকের চরিত্র যদি ঠিক না থাকে, তাহলে তো এমন ঘটবে-ই।
সমসাময়িক বাস্তব চিত্রে ‘কাচের মেয়ে’ একটি সার্থক উপন্যাস। রহস্য রেখে লেখিকা মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। শুধু একবার পাঠ নিলে অক্ষয় হয়ে থাকবে এটাই আমার বিশ^াস। বইটি প্রকাশ করেছে ভাষাচিত্র। প্রচ্ছদে কুশল ভট্টাচার্য্য। ২১৪ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য ৩৯৮ টাকা। উৎসর্গ করেছে- পবিত্র বিদ্যাপীঠে লাঞ্ছিত বোনদের উদ্দেশে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট