এক যে ছিল ‘এই’। এক যে ছিল ‘ওই’। দু’জনের এক গ্রামেরই বাস। এই বলে, দেখো ওই, আমি কিন্তু দেখতে খুব সুন্দর। তোমার চেয়েও।
ওই ভাবে, আমিও বা সুন্দর কম কিসে ওর চেয়ে! ওই এবার বলে বসে, দেখো এই, আমি কিন্তু তোমার চেয়ে কোনো অংশে কম সুন্দর নই। বরং তুমিই আমার মতো সুন্দর নও।
এই বলে -না, আমি তোমার চেয়ে বেশি সুন্দর।
ওই বলে -না, আমি তোমার চেয়ে বেশি সুন্দর।
এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে লেগে যায় তর্ক। ভীষণ তর্ক। কারো চেয়ে কেউ যেনো কম যায় না।
এমন সময় তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো ‘অই’। তাদের তর্ক-কথা শুনে থামলো। সামনে এসে দাঁড়ায়। বললো, তোমরা এই আর ওই না!
এই বললো, -হ্যাঁ, আমি এই। ওই বললো, -হ্যাঁ, আমি ওই।
-তো তোমরা দু’জনে তর্ক করছিলে কেনো? কি নিয়ে তর্ক? কেনো তর্ক?
এই বললো, দেখো অই তুমি আমাদের সকলের বড়। তুমি বলো, আমি ওই এর চেয়ে কি বেশি সুন্দর নই?
অন্য পাশ থেকে ওই অই এর ডান হাত ধরে বলে, -অই, তুমি সত্যি করে বলোতো, এই এর চেয়ে আমি কি সুন্দর নই?
অই দু’জনকে থামিয়ে দিয়ে শান্ত হতে বললো। এই এবং ওই দু’জনেই অই এর কথায় শান্ত হয়।
অই বলতে থাকে। দেখো এই আর ওই। আসলে, তোমরা দু’জনই কিন্তু খুব সুন্দর। কেউ কারো চেয়ে কম নও। তোমরা কেউ কিন্তু অসুন্দর নও মোটেও। নিজেরদের মধ্যে সুন্দর অসুন্দর নিয়ে ঝগড়া-তর্ক নিয়ে থাকা ভালো কাজ নয়। শোনো, এই ওই আর আমি অইসহ আমরা সবাই কিন্তু সবসময় সুন্দর। ঝগড়া-তর্ক না করে আমরা সবাই মিলেমিশে চলবো। এমন হলেই কেবল, আমরা সত্যি সব সময় সুন্দর আর ভালো বলে পরিচিত হবো অন্য সকলের কাছে। আমরা সবাই একত্রে থাকলে সবসময় সব কাজে আমাদের সফলতা আসবে। এটাই নিয়ম। একে অপরের সাথে সহযোগি মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসলে প্রতিটা কাজে আমাদের সুফল বয়ে আসবে, এটা নিশ্চিত। তা ছাড়া আমরা কিন্তু একই গ্রামে বাস করি। ছোট্ট আমাদের এ গ্রামের নাম তো জানো নিশ্চয়ই?
হ্যাঁ সূচক মাথা কাত করে এই আর ওই সাথে সাথেই।
-আমাদের ছোট্ট এ গ্রামের নাম ‘স্বরবর্ণ’ গ্রাম। ছোট্ট স্বরবর্ণ গ্রামে আমরা সংখ্যায় মাত্র এগারো। আচ্ছা, আরেকটা কথা। আমাদের পাশের গ্রামের নামটা জানো তো!
-হ্যাঁ জানি তো! ‘ব্যঞ্জনবর্ণ। এবারও সমস্বরেই বলে ওঠে এই আর ওই।
-হ্যাঁ, ঠিক বলেছো। আমাদের পাশের গ্রামের নাম ব্যঞ্জনবর্ণ। ওরা কিন্তু সংখ্যায় আমাদের চেয়ে বেশি। ওদের সংখ্যা মোট ঊনচল্লিশ। ওরা আমাদের চেয়ে প্রায় তিনগুণ সংখ্যায় বেশি হয়েও সুন্দর মিলেমিশে থাকে সবসময়। ওরা কখনো ঝগড়া-তর্ক করে না। ওরা খুব ভালো। সবার কাছে ওদের খুব নাম। আমরাও সবার কাছে নামী হতে চাই। নিজেরা সুন্দরভাবে পাশাপাশি থাকা-চলাই হবে আমাদের প্রথম কাজ।
এই আর ওই হাতে হাত রেখে বলে, আমরা আর কখনো অযথা ঝগড়া-তর্ক করবো না। পাশের ব্যঞ্জনবর্ণ গ্রামের ওদের মতো আমরাও সবার কাছে ভালো হবো, সুন্দর থাকবো সবসময়।
এই আর ওই এর কথা শুনে অই দু’জনকে ধন্যবাদ জানিয়ে মিষ্টি হেসে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যেরে উদ্দেশ্যে এগিয়ে হয়ে যায় সামনের দিকে।