চট্টগ্রাম সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

তুলি ও জুলি দুই বান্ধবী

কবির কাঞ্চন

২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ

তুলি ও জুলি দুই বান্ধবী। দু’জনে একই স্কুলে পড়ে। ফলে দু’জনের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়া ছিল। একজনে নতুন কিছু করলে অন্যজন তা করবার চেষ্টা করতো। তুলি তৃতীয় আর জুলি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।
তুলির বাবা যে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার, জুলির বাবা সে প্রতিষ্ঠানের একজন সিকিউরিটি গার্ড। একই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে ওরা একই কলোনীতে বসবাস করছে। তুলিরা থাকে এ টাইপের আর জুলিরা ডি টাইপের ভবনে থাকে। আবাসিক এলাকায় মনোরম পরিবেশে ওরা বড় হচ্ছে। অফিসারের মেয়ে হলেও তুলির মধ্যে কোন ধরনের অহংবোধ নেই। একটু সময় পেলেই ও বাসার বাইরে চলে আসে। সারাক্ষণ জুলির সাথে খেলায় মেতে ওঠে। জুলিকে কাছে পেলে তুলির যেনো আনন্দের সীমা থাকে না।
তুলির মা অবশ্য ওদের এতো মেলামেশা পছন্দ করেন না। মাঝে মধ্যে ওদের দুজনকে একসাথে একা পেলে জুলির সাথে না মিশতে তুলিকে রাগারাগিও করেন। তুলির কচি মন মায়ের মতো উঁচু নিচু বোঝে না। তাই সে একটু সময় পেলেই আনন্দের সারথিকে খোঁজে নেয়। জুলিও তুলির চোখের দিকে তাকিয়ে সব ভুলে যায়। দুই বান্ধবী কলোনির বাগানবাড়িতে বসে কত্তো রকম খেলা খেলে। খুশিতে লুটোপুটি খায়। ওদের এমন আনন্দের ভাগ নিতে এগিয়ে আসে বনের কতক পাখি। নানা রঙের প্রজাপতি এসে ওদের সেই আনন্দের শরিক হয়।একটু দূরে ঘাসফড়িংও ওদের দিকে চেয়ে চেয়ে আনন্দে ঘাসের বুকে তিড়িং বিড়িং করে নাচে। তুলির বাবা অবশ্য ওদের এই মেশামেশাকে ভালো চোখে দেখেন। জুলিকে তিনি নিজের মেয়ের মতো করে আদর করেন। মিষ্টি করে কথা বলেন।
একদিন বিকেলে তুলি আর জুলি কলোনির বাগানবাড়িতে বসে বসে খেলছে। হঠাৎ তুলির চোখে পড়ে কয়েকটি সুন্দর শালিক পাখি। পাখিগুলো একেবারে ওদের গা ঘেঁষে পায়চারি করছে। ওদের কান খাড়া করে এদিকওদিক চাহনি দেখে মনে হচ্ছে ওরা কী আলাপ করছে তা শুনতে এসেছে ওরা।
তুলি এক পা দুই পা করে পা চেপে চেপে শালিক পাখিকে ধরতে যায়। জুলি তা বুঝতে পেরে আলতো করে ওর হাতদুটো চেপে ধরে ক্ষীণ কণ্ঠে বললÑ ওদিকে যাসনে, তুলি। ওদেরকে খেলতে দে।
Ñ না, আমি শালিক পাখিটি ধরবো। দ্যাখ জুলি, পাখিটি আমাদের কতো কাছে চলে এসেছে। মনে হয় হাত বাড়ালেই ধরতে পারবো। এই সুযোগ আমি হাতছাড়া করবো না। জুলি আর্দ্র গলায় বললÑ ধরে কী করবি?
-বাসায় নিয়ে যাবো। তারপর ওকে আমি সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখবো। পেট ভরে খেতে দেবো। ও তখন আমায় ছেড়ে কোথাও যাবে না।
– কিন্তু জানিস? পাখিরা খাঁচায় থাকতে চায় না।
– আমি ওকে অনেক খাবার দেবো। ওর সাথে সুখদুঃখের গল্প করবো।
– কিন্তু কোথায় রাখবি? নিশ্চয় খাঁচায়। তুলি অবাক চোখে তাকিয়ে বললÑ মানুষ পাখি তো খাঁচায়ই পোষে। এতে আবার প্রশ্ন করার কী আছে? জুলি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বললÑ আচ্ছা, আমার একটা কথার জবাব দিবি?
– হ্যাঁ, বল।
– তোকে যদি ইচ্ছে মতো খাবারসহ সকল সুযোগসুবিধা দিয়ে কোন বদ্ধ ঘরে আবদ্ধ করে রাখা হয়। আর আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে দূরে রাখা হয় তখন তোর কেমন লাগবে? তুলি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে বললÑ না, আমি আমার আব্বু-আম্মু আর তোকে ছেড়ে থাকতে পারবো না। জুলি ওকে সান্ত¡না দিয়ে বললÑ শোন, তুই যেমন আমাদের ছেড়ে একাকী থাকতে কষ্ট পারবি না, তেমনি পাখিও তার স্বজনদের ছেড়ে তোর কাছে খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকতে কষ্ট পাবে।
– তুই একদম ঠিক কথা বলেছিস। আমি তোর মতো করে ভাবিনি। এই তোকে ছুঁয়ে কথা দিলাম- পাখিরা কষ্ট পাবে এমন কোন কাজ আমি আর কখনও করবো না। তুলির কথা শুনে জুলি খুশিতে ওকে জড়িয়ে ধরে চুমো খায়। তুলিও জুলির টোল পড়া গালে আলতো করে চুমো খেয়ে মিটিমিটি হেসে ওঠে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট