চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

নীলপরী ও সিলমান

দিপংকর দাশ

২৬ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:২৭ পূর্বাহ্ণ

বহুকাল আগে ঘ্যাচাংপুর নামে একটি গ্রাম ছিলো। সে গ্রামে একজন গরীব কৃষক ও তার স্ত্রী বাস করতো। তাদের সিলমান নামে একটি ছেলে ছিলো। ছেলেটির বয়স ছিলো বারো বছর। কৃষক সারাদিন মাঠে ফসল ফলানোর কাজে ব্যস্ত থাকত। তার স্ত্রীও ঘরের নানান কাজে ব্যস্ত থাকত। এদিকে সিলমান সারাদিন বাড়ির উঠোনেই খেলতো। বাড়ির সামনে ছিলো একটি বিশাল বড়ই গাছ। বিশাল এ বড়ই গাছে অগুণতি বড়ই আসতো। সিলমান গাছে চড়ে ইচ্ছেমতো বড়ই পারতো। কুটকুট করে খেতো আর বীজগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিতো দূরের ঝোপে।

একদিন খেলতে খেলতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। সিলমান তখনো বড়ই গাছে। চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে দেখে সে গাছ থেকে নামতে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই কে যেন ওর হাতে ধরে টান দিলো। সিলমান মাথা ঘুরিয়ে দেখলো ওর সামনে এক নীলপরি দাঁড়িয়ে আছে। নীলপরিকে দেখে সিলমান প্রথমে ভয় পেলো। কিন্তু পরি তাকে অভয় দিয়ে বলল, ‘হে সিলমান, তুমি ভয় পেয়ো না। আমি হলাম নীলপরী। আমাকে তোমার বন্ধু ভাবতে পারো।’
সিলমান বলল, ‘তুমি আমার বন্ধু! তাহলে তো খুব ভালো। আমার বাবা গরীব কৃষক বলে কেউ আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চায় না। তুমি যখন আমার বন্ধু হতে চেয়েছো তাহলে আজ থেকে আমরা একে অপরের বন্ধু।’

নীলপরী বলল, ‘ধন্যবাদ বন্ধু। তোমার মতো বন্ধু পেয়ে আমি খুব খুশি। শোনো তোমাকে একটা কথা বলি। আমাদের পরীদের রাজ্যে এক অভিশাপ লেগেছে। পরিরা একে একে তাদের শক্তি হারিয়ে ফেলছে। তারা পরীরাজ্য ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে আমাদের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। তাই বন্ধু হিসেবে তোমার কাছে একটু সাহায্য চাই। তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে?’

সিলমান বলল, ‘তুমি আমার বন্ধু। তাই তোমাকে সাহায্য করতে আমি রাজি।’
‘কিন্তু আমাকে সাহায্য করতে গিয়ে তোমার বিপদ হতে পারে। তুমি কি ঝুঁকি নিয়ে আমাকে সাহায্য করবে?’ পরি জানতে চাইলো।
উত্তরে সিলমান বলে, ‘বন্ধুর বিপদেই তো বন্ধু এগিয়ে যায়। বলো কি করতে হবে?’
নীলপরী বলল, ‘গ্রামের পাশেই একটা জঙ্গল আছে। সেই জঙ্গলের গভীরে একটা রাক্ষসীর ডেরা আছে। সেখানে একটা জাদুর লাঠি আছে। সেটা আনতে হবে। সেটা এনে আমাদের রাণী পরির মাথায় ছোঁয়ালে পরীরাজ্যের সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কথা হলো, রাক্ষসীর ডেরায় গেলে একটা ধাঁধা জিজ্ঞাসা করবে। উত্তর দিলে লাঠি পাবে, নইলে সেখানেই তোমাকে চিবিয়ে খাবে সে।’
সিলমান বলল, ‘আমি রাজি। আমি যাই। তুমি এখানেই অপেক্ষা করো।’

এই বলে সিলমান ঘন জঙ্গলের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। রাত গভীর হয়। চারিদিকে অন্ধকার। ভয়ঙ্কর আওয়াজ ভেসে আসছে কানে। সিমলান এগিয়ে যায়। যেতে যেতে সে রাক্ষসীর ডেরায় পৌঁছে যায়। ডেরার প্রবেশের আগেই রাক্ষসী এসে হাজির। ভয়ঙ্কর কণ্ঠে সে বলে উঠে, ‘এই ছেলে, কোথায় যাচ্ছিস? তোর মনে কি একটুও ভয় নেই? তুই আমার ডেরায় যাচ্ছিস আমাকে না বলেই!’
সিলমান বলে, ‘আমার জাদূর লাঠি দরকার। যেভাবেই হোক এটা আমার চাই।’
রাক্ষসী বলে, ‘ওটা আমি তোকে দেবো। আগে তুই আমার ধাঁধার উত্তর দে। যদি পারিস জাদুর লাঠি পাবি। আর যদি না পারিস তাহলে আমার পেটে যাবি। হু-হু-হু-হা-হা-হা।

বল, ‘এমন কি জিনিস আছে যে নিজের দেহ পোড়ায় অন্যকে আলোকিত করতে?
সিলমান কিছুক্ষণ ভাবে। ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে যায়। সে উত্তরে বলে, এটা হলো মোমবাতি।’ রাক্ষসী বলে, ‘আরে বাহ! তুই তো পেরেছিস। এই নে জাদুর লাঠি।’

সিলমান লাঠি নিয়ে আসে। ততক্ষণে শেষ রাত্রি। নীলপরি ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। সে ওই লাঠি এনে পরিকে দেয়। নীলপরি অনেক খুশি হয়। সিলমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তার রাজ্যে ফিরে যায়। পরির রাজ্যে আবার সুখ শান্তি ফিরে আসে। এরপর থেকে প্রতিদিনই সিলমান তার নীলপরি বন্ধুর সাথে খেলাধুলা করে আর সুখে দুখে পাশে থাকার বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট