চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

শৈশবে ঘুড়ি উড়ানো

জহিরুল ইসলাম

১৯ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:৫৮ পূর্বাহ্ণ

মোগল আমলে ঢাকার অভিজাত লোকদের বিনোদনের জন্য ঘুড়ি উড়ানোর আয়োজন করা হত। ১৭৪০ সালের দিকে নায়েবে নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঢাকায় ঘুড়ি উড়ানো উৎসব একটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়। আজ থেকে প্রায় ২ হাজার ৮০০ বছর আগে চীনে ঘুড়ি উড়ানো শুরু হয়। পরবর্তীকালে এটি এশিয়ার অন্যান্য দেশ- বাংলাদেশ, ভারত, জাপান এবং কোরিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও ইউরোপে ঘুড়ি উড়ানো খেলাটির প্রচলন ঘটে প্রায় ১৬শ’ বছর আগে। কাগজ দিয়েই সাধারণত ঘুড়ি বানানো হয়। এর ফ্রেম তৈরিতে ব্যবহার হয় বাঁশের কাঠি বা শক্ত অথচ নমনীয় কাঠ।

এছাড়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে সুতা কিংবা পাতলা দড়ির ব্যবহার তো আছেই। আধুনিককালের ঘুড়িগুলোয় সিনথেটিক জাতীয় পদার্থের প্রচলনও রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত। কোনোটি আকারে খুব বড় ও দেখতে খুব সুন্দর। আবার কোনোটি আকারে খুবই ছোট, কিন্তু দ্রুত উড়তে পারে। ঘুড়ি উড়ানো একটি মজার খেলা হলেও বহু দেশে ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশে ঘুড়ি উড়ানো একটি বিনোদনমূলক খেলা। ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতা বিভিন্নভাবে হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত হচ্ছে কাটাকাটি খেলা। তার মানে দুই ঘুড়ির সুতায় প্যাঁচ লাগিয়ে কে কার সুতা কেটে দিতে পারে তার প্রতিযোগিতা। তবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য অবশ্যই প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের শহরে-গ্রামে সবসময় ছোটদের মধ্যে এই প্রতিযোগিতা লেগেই আছে। দেখা গেল কেউ একজন ঘুড়ি উড়াচ্ছে, অন্য একজন কাছাকাছি আরেকটি ঘুড়ি উড়াল। একটু পরেই দেখা যাবে এক ঘুড়ি তেড়ে যাচ্ছে অন্য ঘুড়ির দিকে। তারপর লেগে যায় তাদের মধ্যে প্যাঁচ। কিছুক্ষণ পরেই যে কোনো একটা ভোকাট্টা। মানে সুতা কেটে গেছে যে কোনো একটার। যে ঘুড়িটা ভোকাট্টা হল, সেটা নিয়েও আছে অন্যরকম এক প্রতিযোগিতা। ঘুড়ি ধরার প্রতিযোগিতা। কাটা ঘুড়ি বাতাসে টাল খেতে খেতে একসময় নিচে গিয়ে পড়ে। ছোট ছোট ছেলেরা আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকে কে ধরতে পারে সেই ঘুড়ি। যে ধরতে পারবে, কাটা ঘুড়ির মালিক সে। এও এক অন্যরকম আনন্দ, অন্যরকম মজা।বাংলাদেশের পুরনো ঢাকায় অনেক কাল আগে থেকেই ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতাটি হচ্ছে কাটাকাটি ধরনের। প্রতিযোগিতার নির্দিষ্ট দিনটির জন্য প্রতিযোগীদের মধ্যে আয়োজন চলতে থাকে অনেক দিন আগে থেকেই।

লড়াই করার জন্য বানানো হয় বেশ কিছু নিখুঁত ঘুড়ি। তারপর চলে সুতায় ধার দেওয়ার পালা, যাকে বলা হয় মাঞ্জা দেওয়া। প্রথমে আঠা জাতীয় কিছু লাগানো হয় সুতায়। তারপর তার সঙ্গে মিলানো হয় মিহি করে বাটা কাচের গুঁড়া। সঙ্গে দেওয়া হয় সামান্য রং, যাতে দেখতেও সুন্দর লাগে সুতাটি। যে যত সুন্দর করে সুতায় ধার দিতে পারবে, সে-ই টিকে থাকবে এই প্রতিযোগিতায়। তারপর নির্দিষ্ট দিনে সবাই যার যার নাটাই-ঘুড়ি নিয়ে বাড়ির ছাদ বা খোলা মাঠে গিয়ে হাজির হয়। উড়তে থাকে হাজার হাজার ঘুড়ি। বিভিন্ন দেশে ঘুড়ির বিভিন্ন রকম নামকরণ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে চারকোনা আকৃতির বাংলা ঘুড়ি, ড্রাগন, বক্স, মাছরাঙা, ঈগল, ডলফিন, অক্টোপাস, সাপ, ব্যাঙ, মৌচাক, কামরাঙা, আগুনপাখি, প্যাঁচা, ফিনিক্স, জেমিনি, চরকি লেজ, পাল তোলা জাহাজ, জাতীয় পতাকা প্রভৃতি সব নামের ঘুড়ি বানানো হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট