চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

শুধু ফেসবুক নয়, সময় রাখুন নিজের জন্যও

মন্তব্য প্রতিবেদন আমরা চাইলে সচেতন হতে পারি এবং ফেসবুককে ভালভাবে ব্যবহার করতে পারি।

ডা. আফতাবুজ্জামান , নিউজিল্যান্ড

১২ মে, ২০১৯ | ৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ

ক্রিস হিউজ ফেসবুকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, পরে তিনি ফেসবুক ত্যাগ করেন। কিছুদিন আগে নিউইয়র্ক টাইমসে মতামত লিখে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তার মতে ফেসবুক মনোপলিতে পরিণত হয়েছে এবং এর অভাবনীয় জনপ্রিয়তার কারণে মার্ক জাকারবার্গ আমেরিকার সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। মনোপলির কারণে ফেসবুককে কোনো প্রতিযোগিতার সম্মুখিন হতে হচ্ছে না। প্রতিযোগিতাহীন ব্যবসাতে গ্রাহকদের বাছাই করার সুযোগ থাকে না এবং উদ্ভাবনের গতি কমে যায়। ক্রিস হিউজের মতে ফেসবুক ভেঙ্গে দেয়া উচিত। ফেসবুক ভাঙ্গা বলতে তিনি ফেসবুক বিলুপ্ত করার কথা বলেননি। ফেসবুক পরে যেসব লাভজনক এবং প্রতিযোগী কোম্পানি কিনেছে (যেমন ওহংঃধমৎধস, ডযধঃংধঢ়ঢ় ইত্যাদি), সেসব আলাদা করে দিতে বলেছেন। অহঃরঃৎঁংঃ খধি দিয়ে বড় মনোপলি কোম্পানিকে আগেও ভাঙ্গা হয়েছে।
ফেসবুকের জন্ম ফেব্রুয়ারি ৪, ২০০৪। শুরুতে ফেসবুক ছিল শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য, পরে তা সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। আরো কয়েকটা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ছিল সেই সময়। সবার বেসিক কনসেপ্ট ছিল মানুষ শেয়ার করতে চায়, তাই মানুষের এই প্রবৃত্তিকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পয়সা কামানো। ফেসবুক নিজের অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলো না। ফেসবুকের লক্ষ্য ছিল আরো বেশি গ্রাহক এবং প্রতিটা গ্রাহক যেন ফেসবুকে বারবার ফিরে আসে এবং প্রতিবার বেশি সময় কাটায়। ফেসবুক নতুন নতুন ফিচার দিতে থাকে এই উদ্দেশ্যে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তারা খরশব ফিচারটির প্রবর্তন করে যা অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা লাভ করে। লাইক পাওয়ার আনন্দ অনেক মানুষের সাদামাটা
জীবনের এক দৈনন্দিন লক্ষে পরিণত হয়। মানুষ প্রশংসা পছন্দ করে, এই তথ্য নতুন নয়। কিন্তু ফেসবুকের আগে কেউ প্রশংসাকে এভাবে বর্ধমান সংখ্যায় পরিণত করেনি। ফেসবুক এ ব্যাপারে সফল আণবিক বোমার মতো। এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে ফেসবুক নিজে এই ব্যাপারটা আবিষ্কার করেছে, এসব ব্যাপারে অনেক গবেষণা হয়েছে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে, ফেসবুক এটা প্রয়োগ করেছে সবচেয়ে সফলভাবে।
ফেসবুকের মূল আয়ের উৎস বিজ্ঞাপন। এই উদ্দেশ্যে ফেসবুক আমাদের সবাইকে পণ্য করেছে, আমাদের পছন্দ-অপছন্দ তারা বিক্রি করছে যারা এড দেয় তাদের কাছে। আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা বুঝি না। যারা বুঝি তারা কিছু মনে করি না, কারণ ফেসবুক ব্যবহার করতে পয়সা লাগে না। বিনে পয়সায় আনন্দ, নিজের মুখ বাঁকানো ছবির প্রশংসা, এই দ্রুতগতির অনিশ্চয়তার জীবনে তাও কম কি।
আমরা চাইলে সচেতন হতে পারি এবং ফেসবুককে ভালভাবে ব্যবহার করতে পারি।
১। লাইক এর আশা না করে পোস্ট দিতে পারি যদি মনে করি আমার ছবি, মতামত ইত্যাদি কিছু মানুষের কাজে লাগবে।
২। লাইক এর আশা না করে মানুষকে আনন্দ দেয়ার জন্য পোস্ট দিতে পারি।
৩। অন্যের পোস্টে লাইক/লাভ করা কমিয়ে দিতে পারি, সত্যিকারের ভালো লাগলে অন্য কথা।
৪। শুধু লাইক না দিয়ে তেমন পোস্ট হলে কমেন্ট বা আলোচনা করতে পারি।
৫। বন্ধুর সংখ্যা যতোটা সম্ভব কমিয়ে আনতে পারি। বেশির ভাগ মানুষের ১০০-২০০ এর বেশি বন্ধু থাকার দরকার নেই। জনস্বার্থে যারা পোস্ট দেয় তাদের বন্ধুর সংখ্যা বেশি হওয়া দরকার।
৬। সপ্তাহে ২-৫ দিন ফেসবুক বন্ধ রাখতে পারি। ভাবতে পারি ছেলে, মেয়ে, বউ, স্বামী, বন্ধু, পরিবেশ, সমাজ, দেশ বা জীবন নিয়ে, নিজের এবং অন্যের ভালোর জন্য অনেক কিছু করতে পারি, বা কবিতা গান লিখতে পারি, পড়তে/শুনতে পারি, বা ছবি দেখতে পারি, ছবি তুলতে পারি, ইন্টারনেটের বাইরে অনেক কিছু করতে পারি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট