চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ক্যাসিনোতে এতো অর্থের লেনদেন কল্পনাও করা যায় না

সমাজ বিজ্ঞানী ড.অনুপম সেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:২৭ পূর্বাহ্ণ

যারা ক্লাবের নেতৃত্বে রয়েছেন তাদের মধ্যে সুবুদ্ধির উদয় হতে হবে। আর একটি বিষয় দেখা যায়, যারা খেলোয়ার না, তারা খেলাকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। এটা একেবারেই কাক্সিক্ষত না। খেলাটা খেলোয়াররা নিয়ন্ত্রণ করবে। আবার অন্য কেউ যদি খেলার প্রতি খুব উৎসাহি হয় তাহলে তিনিও খেলাধুলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তবে মূল কর্তৃত্ব খেলোয়ারদের হাতেই দিতে হবে।

আমাদের সময়ে আমরা খেলাধুলা নিয়ে খুবই মগ্ন থাকতাম। সাঁতার, ক্রিকেট, ফুটবল নিয়ে আমরা ব্যস্ত থাকতাম। তখন অসংখ্যা পুকুর ছিল। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে পুকুর ছিল। শহরে জমির দাম বাড়ার সাথে সাথে সেসব পুকুর এখন ভরাট হতে শুরু হলো। তখন আমরা এসব ক্রীড়া নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকতাম। আমরা শুনেছি বড় বড় ক্লাবগুলোতে হাউজি খেলা হয়। কিন্তু ক্যাসিনোর কথা কখনো শুনিনি। ক্যাসিনোকে ঘিরে এত বিশাল অর্থের লেনদেন এগুলো আমরা কল্পনাও করতে পারিনি।

দেশে প্রচুর উন্নয়ন হচ্ছে। উন্নয়নের ফলে লোকের হাতে প্রচুর সম্পদ সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের ছোট বেলায় চট্টগ্রাম ও ঢাকা শহরে গাড়ির সংখ্যা ছিল খুব কম। ১৯৫০ সালে আমার মনে হয় সব মিলে হাজার খানেক গাড়ি ছিল। এখন প্রচুর পরিমানে গাড়ি রয়েছে। আমাদের মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্তের সংখ্যা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন বাংলাদেশে ১ হাজার লোক পাওয়া যাবে, যারা কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক।

আমাদের দেশে জিডিপির পরিমান অনুযায়ী আমরা টেক্স দিই না। বৃত্তশালীরা একেবারেই টেক্স দিতে চাই না। এর ফলে কিছু লোকের হাতে বিশাল সম্পদ পুঞ্জিভুত হচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকে অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করেছে। এই বিশাল সম্পদ তারা বিভিন্নভাবে ব্যয় করছে। চিত্ত বিনোদনের বদলে তারা এই ক্যাসিনোর মত অনৈতিক পথে যাচ্ছে। বিশে^র উন্নত দেশসহ বিভিন্ন দেশে ক্যাসিনো থাকলেও আমাদের দেশে ক্যাসিনো অবৈধ। ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী আমাদের দেশে মদ ও জুয়া অবৈধ।

কিন্তু ধীরে ধীরে আমাদের সবার অগোচরে মদ, জুয়া যে বিশাল আকার ধারণ করেছে এই কয়েকদিনে আমরা তা জানতে পেরেছি। যে ক্লাবগুলোতে ফুটবল ক্রিকেট খেলতে বলে আমরা জানতাম, দেখছি সেখানেও ক্যাসিনোসহ মদ ও জুয়ার আসর হচ্ছে।

সবাই খেলাধুলা করতে পারে, কিন্তু সে খেলার পিছনে যদি অন্যায়ভাবে বিত্তের বিনিয়োগ হয় এবং সে বিনিয়োগ থেকে যদি অন্যায়ভাবে বিনিয়োগ সৃষ্টি হয় এটা সমাজের জন্য অন্ত্যন্ত ক্ষতিকারক। কারণ এর ফলে সমাজ বিপথে পরিচালিত হবে। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সব সময় মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন। নানান অন্যায় ও অনৈতিক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে যেভাবে অভিযান পরিচালনা করছেন, এমন কি নিজের দলের কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না, তা সত্যি প্রশংসনীয়। তবে শুধু এই ক্ষেত্রে নয়, যেখানে অন্যায়, অভিচার, দুর্নীতি হচ্ছে সেগুলো বন্ধ করতে হবে। আমাদের দৈননদিন জীবনে ঘুষের যে দৌরত্য সেটা খুব কষ্টকর। সাধারণ কোন কাজ করতে গেলেও আমরা দেখেছি ঘুষ দিতে হয়। এমন কি খাজনা দিতে গেলেও ঘুষ দিতে হয়। এর চেয়ে দুঃখ জনক ব্যাপার আর কি হতে পারে। রাস্ট্রের যে প্রাপ্য আমি রাস্ট্রকে দেব, সে রাস্ট্রের প্রাপ্য যিনি গ্রহণ করবেন তিনি গ্রহণ করতে রাজি নন যতক্ষণ না তাকে সন্তুষ্ট করা যায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট