চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

মহামারী-যুদ্ধের ধাক্কায় বেড়েছে মন্দার ঝুঁকি

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

৯ জুন, ২০২২ | ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ

­একদিকে কোভিডের প্রকোপে ভেঙে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। তার উপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আরও বড় সংকট সৃষ্টি করেছে। যার ফলে অনেক দেশ (বিশেষত: স্বল্পোন্নত দেশগুলো) মন্দার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব ব্যাংক। আন্তর্জাতিক এ আর্থিক সংস্থাটি তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে প্রবৃদ্ধির নিম্নগতি অর্থনীতিকে স্থবির করে ফেলছে। আর তাতে ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার স্বল্পোন্নত দেশগুলো অর্থনৈতিক মন্দার বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। উদ্বেগজনকহারে বেড়ে যাচ্ছে ‘ঋণ’ সমস্যা। এক একটি দেশের মাথাপিছু ঋণ বৃদ্ধির পাশাপাশি ঝুঁকি বেড়েছে দেশগুলোর ‘ঋণ খেলাপি’ হয়ে পড়ারও। এ অবস্থাটা ১৯৮০’র দশকের সেই দুঃসময়কে মনে করিয়ে দিচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বাড়ছে। ইউক্রেনের যুদ্ধ, চীনের লকডাউন, সরবরাহ-শৃঙ্খলায় বিঘ্ন এবং অর্থনৈতিক ধীরগতি প্রবৃদ্ধির গতি টেনে ধরছে। এ পরিস্থিতিতে অনেক দেশের জন্য মন্দা এড়ানো কঠিন হবে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
এই প্রেক্ষাপটে সদ্য প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ প্রতিবেদনে এ বছরে বিশ্বের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে এক তৃতীয়াংশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে এ ছাড়াও বিশ্বের বেশিরভাগ এলাকায় বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এ দশকজুড়েই হয়ত প্রবৃদ্ধির ধীরগতি অব্যাহত থাকবে। বহু দেশে মূল্যস্ফীতির হার ইতোমধ্যে কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। উৎপাদন বাড়ার গতিও খুব ধীর। মূল্যস্ফীতির এই উচ্চ হার হয়ত দীর্ঘ সময় ভোগাবে।
উন্নয়নশীল দেশগুলো ধাক্কা সামলে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বটে কিন্তু খাদ্য ও জ্বালানির ক্রমবর্ধমান খরচ মানুষের জীবনকে ফের উল্টো স্রোতে নিয়ে ফেলছে। কেবল দরিদ্র দেশগুলো যে দুর্দশায় পড়েছে, তা নয়। এক জরিপে দেখা গেছে, উন্নত অনেক দেশেই প্রতি ছয়টি পরিবারের মধ্যে একটি খাদ্য ক্রয়ের সামর্থ্য হারিয়ে বসেছে। অনেক সরকারই মূল্যস্ফীতি কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। তাতে বিশ্বব্যাপী বিপর্যস্ত মানুষের সংগ্রাম আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশ্ব ব্যাংক এসব বিষয়ে এখনই উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দিচ্ছে। ঋণ থেকে মুক্তির পাশাপাশি খাদ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ না রাখার আহ্বান জানিয়েছে দেশগুলোকে।
এ ছাড়া খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ বজায় রেখে অস্থিতিশীল বাজার ও দামের ঊর্ধ্বগতি হ্রাসে নীতিনির্ধারকদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। বলেছে, বিশ্বের সব দেশকে ইতোমধ্যে একটি মহামারী মোকাবেলা করতে হয়েছে। তাদের সেই সম্মিলিত চেষ্টায় এবার ঢিল পড়লে বিশ্ব আরও দীর্ঘ সংকটে পড়বে।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৭ শতাংশ পয়েন্ট কমে যেতে পারে, যা ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৯ সালের অচলাবস্থার সময়ের প্রবৃদ্ধি কমার দ্বিগুণেরও বেশি।
প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সুদের হার বৃদ্ধি জরুরি হয়ে পড়েছিল। কিন্তু সেই পদক্ষেপই ১৯৮২ সালে ডেকে এনেছিল মন্দা। উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছিল। তবে ১৯৭০-এর দশকে ডলারের দাম কম ছিল এবং তেলের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনের ডাটা অনুযায়ী নিম্ন আয়ের দেশগুলোর বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ২০২০ সালে ১৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬৬ বিলিয়ন ডলার। মধ্য আয়ের দেশগুলোর ক্ষেত্রে সেটা ৪২৩ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৮.৫ ট্রিলিয়ন ডলার হয়েছে। বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিও ৫.৭ শতাংশ থেকে কমে এ বছর দাঁড়িয়েছে ২.৯ শতাংশে। ধারণা দেয়া হয়েছে আগামী বছর সেটা ৩ শতাংশ হতে পারে।
উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গেল বছর ছিল ৫.১ শতাংশ। এ বছর সেটা ২.৬ শতাংশ এবং আসছে বছর তা ২.২ শতাংশ কম হতে পারে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে। তবে ঝুঁকি মোকাবিলা সাপেক্ষে সেটা যথাক্রমে ২ শতাংশ ও ০.৮ শতাংশ কম হতে পারে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে। উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি গত বছর ছিল৬.৬ শতাংশ। এ বছর সেটা ৩.৪ শতাংশ এবং সামনের বছর ৪.২ শতাংশ কম হতে পারে বলা হয়েছে। তবে ঝুঁকি মোকাবিলা সাপেক্ষে সেটা যথাক্রমে ২.২ শতাংশ ও ২.৬ শতাংশ কম হতে পারে বলা হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, মহামারী আর যুদ্ধের যুগপৎ প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উৎপাদন ২০১০-২০১৯ সময়কালের চেয়ে ২০২০-২০২৪ সময়কালে ২০ শতাংশেরও বেশি কম হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংক এসব বিষয়ে এখনই উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দিচ্ছে। ঋণ থেকে মুক্তির পাশাপাশি খাদ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ না রাখার আহ্বান জানিয়েছে দেশগুলোকে। এছাড়া খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ বজায় রেখে অস্থিতিশীল বাজার ও দামের ঊর্ধ্বগতি হ্রাসে নীতিনির্ধারকদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।
[তথ্যসূত্র : ফিনান্সিয়াল টাইমস]

পূর্বকোণ/এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট