চট্টগ্রাম সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

অনলাইন ব্যবসায় ছয় চ্যালেঞ্জ

মরিয়ম জাহান মুন্নী

৮ এপ্রিল, ২০২৩ | ১২:৫১ পূর্বাহ্ণ

সুনির্দ্দিষ্ট ছয়টি কারণে ই-কর্মাস বা অনলাইন ব্যবসার প্রসার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এসব বাধা ডিঙ্গিয়ে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে এখনই ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। অন্যথায় এই খাতের ব্যবসায়ীরা গভীর সংকটে পড়বেন, এমনই আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

 

ই-কর্মাস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম জোন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ছয়টি কারণের মধ্যে অন্যতম হল ক্যাশ-অন-ডেলিভারি অর্ডার, কালেকশনে জটিলতা ও পণ্যের ডেলিভারি সাপোর্ট কম। তৃণমূল পর্যায়ে এখনো পণ্য পৌঁছানো কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে ডেলিভারি খরচও অনেক বেশি। ডেলিভারি সিস্টেমে যদি সরকারি উদ্যোগে নেয়া হয় তবে খরচ কমবে। এ খাতে বেশিরভাগই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শ্রেণির উদ্যোক্তা। যারা অর্থের অভাবে ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারেন না। অনলাইন উদ্যোক্তাদের ঋণ ও বিনিয়োগের ব্যবস্থা কম। এটি আরো বাড়ানো দরকার। সাম্প্রতিককালে ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে আমদানিনির্ভর বিভিন্ন পণ্য এখন আর আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে ই-কমার্স খাতে ৩২ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যবসায়িক বিনিয়োগ হচ্ছে। প্রতিদিন ৪ লাখের বেশি  ডেলিভারি হয়। ফুড ডেলিভারিসহ এই সংখ্যা ৬ লাখের মতো।

 

ই-ক্যাব নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম শোভন জানান, সাম্প্রতিক ডলার সংকটের কারণে আমদানিনির্ভর বিভিন্ন পণ্য এখন আগের মতো অনলাইনে পর্যাপ্ত নেই। ফলে এই সমস্যার সমাধান না হলে এই প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। করোনার আগে এর প্রবৃদ্ধি ছিল ৫০ শতাংশ। করোনাকালীন সময়ে এটি কমে ৪০ শতাংশ হয়েছে। কিন্তু বিগত বছরের শেষ দিকে অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে আশঙ্কা দেখা দেয়ার পর এই প্রবৃদ্ধি আরো কমে ৩০ শতাংশে নেমে আসে। এটি সমাধান করতে হলে এই মুহুূর্তে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ ও বিনিয়োগের ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। এছাড়া ডিজিটাল কমার্স পলিসি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে প্রাইভেট সেক্টর ডেভলপমেন্ট কমিটির ১৩তম সভায় যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা জরুরি।

 

ব্যবসার প্রসারে (ই-ক্যাব) চট্টগ্রাম জোনের কো-চেয়ারম্যান ও র‌্যাফসন কমিউনিকেশনের স্বত্বাধিকারি জহিরুল আলম তুহিন বলেন, ই-কমার্স ব্যবসায় সবচেয়ে বড় চ্যলেঞ্জ হল ডেলিভারি সাপোর্ট। যদিও এই জায়গায় আগের তুলনায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের একটি প্রতিষ্ঠান ই-পোস্ট কার্যক্রমে এগিয়ে আসে। তাহলে তৃণমূল পর্যায়ে গ্রাহকের কাছে পণ্য পৌঁছানো সম্ভব হবে অল্প খরচে। সরকার এক্ষেত্রে ডাক বিভাগকে ই-কমার্সের সাথে সংযুক্ত করার পরও তা বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়নি। ঢাকায় ই-পোস্টের কার্যক্রম থাকলেও চট্টগ্রামে পণ্য পিক করে তা গ্রাহকের কাছে ডেলিভারির ব্যবস্থা এখনো চালু করা হয়নি।

 

(ই-ক্যাব) চট্টগ্রাম জোনের কো-চেয়ারম্যান ও রেড গ্রোসার লিমিটেডের নির্বাহী প্রধান মো. আশিকুর রহমান বলেন, ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত উদ্যোক্তারা প্রতিনিয়ত লড়াই ও সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে চট্টগ্রামে সংশ্লিষ্ট উদ্যেক্তারা আরো বেশি প্রতিকূলতার মাঝে কাজ করছে। কারণ ঢাকায় যেসব সুযোগ চালু হয়েছে সেটি চট্টগ্রামে নেই। সমস্যা হলো এই খাত নিয়ে যে সকল উদ্যোক্তা কাজ করছেন তারা বেশিরভাগই ছোট বা মাঝারি পরিসরে ব্যবসা শুরু করতে পারে। বড় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা এখনো কম। তাদের ঋণ দিয়ে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে হবে।

 

ই-ক্যাব, চট্টগ্রাম জোনাল কমিটি সদস্য ও মিম টেকনোলজিস্ট লি. প্রতিষ্ঠাতা শহীদুল আলম বলেন, ঢাকার তুলনায় চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে ডেলিভারি করতে খরচ বেশি এবং ডেলিভারিতে সময় লাগে বেশি। এতে গ্রাহক সেবায় ভোগান্তিতে পেতে হয়। সবকিছু ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়াতে চট্টগ্রাম ই-কমার্স সেক্টর অনেক বিষয় থেকে বঞ্চিত। সরকারিভাবে বিভিন্ন কোর্স- সেমিনারের আয়োজন করে ব্যবসায়ীদের আরো স্কিল ডেভেলপমেন্ট করা অতীব জরুরি। এছাড়া ক্যাশ অন ডেলিভারি থেকে কার্ড পেমেন্ট বা ক্যাশলেস পেমেন্ট সিস্টেমে গ্রাহক এবং বিক্রেতা  উভয়কে হয়রানির শিকার হতে হয়। এই জায়গায় সরকার পেমেন্টের ক্ষেত্রে  স্ক্রো সিস্টেম চালু করায় গ্রাহকের সুবিধা হয়। কিন্তু গ্রাহক এই বিষয়ে অবগত না বিধায় এখনো ক্যাশ অন ডেলিভারিতে তারা অর্ডার করতে চান। এটি সাধারণ মানুষের মধ্যে জানান দিতে হবে।

 

স্ক্রো সেবা প্রসঙ্গে শহীদুল আলম বলেন, অনলাইন ক্রেতা যখন অর্ডার করবেন তখন তার দেয়া অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে জমা থাকবে। তাতে একটি নির্দ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্রেতার সন্তুষ্টির ভিত্তিতে ই কমার্স শপকে অর্থ ছাড় দেবে ব্যাংক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্ক্রোর সেবা অনেক প্রচলিত সেবা। এর মাধ্যমে ক্রেতার অর্থের নিরাপত্তা বিধান করা হয়।

 

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট