চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

ডায়াবেটিসের সাগরে ভাসছি আমরাও

অনলাইন ডেস্ক

১৩ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৯:১৫ অপরাহ্ণ

এই মুহুর্তে আমেরিকার ১৮ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যার প্রায় ৫১% হয় ডায়াবেটিক নয় প্রিডায়বেটিক। বাংলাদেশে এখন ডায়াবেটিস রোগী আছে সরকারি তথ্যমতেই ৭০ লাখের বেশি, বেসরকারি তথ্যমতে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি। তার ওপর, আমাদের এমন বহু মানুষ আছে যারা এখনো ভালো করে বোঝেন না ডায়বেটিস কি।

ঠিকঠাক অনুসন্ধান হলে আমার ধারণা এই মুহুর্তে বাংলাদেশে দেড় কোটির ওপর মানুষ ডায়বেটিক এবং আরো দেড় থেকে দু কোটি মানুষ প্রিডায়বেটিক হবেন বলে আমি মনে করি। ডা. শাহীনুল আলমের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গবেষনায় ২০১৭-১৮ সালে দেখা গিয়েছিল, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫% মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। সাধারনত ফ্যাটি লিভার টু ডায়াবেটিস কনভারশন রেট ৬৬-৮০% এর মধ্যে হয়। মানে, আপনার ফ্যাটি লিভার থাকলে তা যদি দূর করা না হয় তবে ভবিষ্যতে সেটা ডায়াবেটিসে রুপ নেয়ার সম্ভাবনা ৬৬-৮০% এর মত।

 

এখন আমরা যদি সাড়ে চার কোটিকে ৬৬% দিয়ে গুন করি, তাহলে পাবো ৩ কোটি, ৮০% দিয়ে গুণ করলে পাই ৩ কোটি ৬০ লাখ। এর মানে, ফ্যাটি লিভারকে ইন্ডিকেটর ধরলে, বাংলাদেশে সরাসরি ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের পরিমান ৩ কোটি থেকে ৩ কোটি ৬০ লাখের মধ্যে। পরোক্ষ ঝুঁকির কথা তো বাদই দিলাম।

বুঝতেই পারছেন, আমরা একপ্রকার ডায়াবেটিসের সাগরে বসবাস করছি। আপনার বাসায় পাঁচজন মানুষ থেকে থাকলে সম্ভাবনা খুবই বেশি যে অন্তত একজনের যেকোন মুহুর্তে ডায়াবেটিস ধরা পড়তে পারে। ডায়াবেটিস হচ্ছে একটা গুপ্তঘাতক, যে আপনার শরীরের ভেতর ৩-১৭ বছর পর্যন্ত লুকিয়ে থাকতে পারে।

 

ডায়াবেটিস একদিনে ডায়াবেটিসে পরিনত হয় না। আমরা যদি নিজের শারীরিক অবস্থাকে মাঝে মাঝে নিজে নিজেই যাচাই করি, ফরমাল ল্যাঙ্গুয়েজে যাকে বলে সেলফ ইভ্যালুয়েশান, তাহলে অনেক সময়েই আমরা বুঝতে পারবো যে আমাদের মধ্যে ডায়াবেটিসের কোন পূর্বলক্ষণ দেখা দিচ্ছে কিনা। এমন কিছু দেখা দিলে সেক্ষেত্রে আমাদের গ্রুপ-পেইজ-চ্যানেলে যারা এক্টিভ, তাদের জন্য সুযোগ থাকবে গ্রুপে-চ্যানেলে থাকা গাইডলাইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে ডায়বেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে ফেলার।

তাহলে এক নজরে দেখে নিন ডায়াবেটিসের প্রধান কিছু পূর্বলক্ষণ। খেয়াল রাখতে হবে, পূর্বলক্ষণ মানেই ডায়াবেটিস হয়ে যাওয়া নয়, বরঞ্চ আপনি ডায়াবেটিসের ঝুকিতে আছেন কিনা তা বোঝার উপায় এটা। মাঝে মাঝে এই পূর্বলক্ষণের ভিত্তিতেই ডাক্তাররা রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা নিরীক্ষা দেন।

 

১) খাওয়ার পর হাত পা কাঁপা, চোখ ঝাপসা হয়ে আসা
২) রাতের বেলা বারবার প্রস্রাব করতে উঠতে বাধ্য হওয়া
৩) চেষ্টা করা সত্ত্বেও রাতে ঘুমাতে না পারা এবং এলার্ম ছাড়া বেলা ৮টা ৩০ বাজার পরেও নিয়মিত ঘুম থেকে উঠতে না পারা (বিশেষভাবে পুরুষদের জন্য সকালে উঠতে না পারাটা একটা বিপদ সংকেত)
৪) বারবার পানি পান করার পরেও সারাদিন তৃষ্ণা লাগতে থাকা
৫) কম খাওয়া সত্ত্বেও ওজন না কমা অথবা খাওয়া দাওয়া করার পরেও দ্রুত ওজন কমতে থাকা
৬) সারাক্ষণ ক্লান্তি ও দুর্বলতা বোধ করা
৭) শরীরের কোথাও কোন ক্ষত হলে তা সারতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগা
৮) পুরুষদের জন্য, উচ্চ রক্তচাপ এবং দিনে ২ বারের বেশি লিঙ্গোত্থান না হওয়া অথবা লিঙ্গোত্থানে ব্যর্থতা
৯) নারীদের জন্য, অনিয়মিত মাসিক অথবা চেষ্টা সত্ত্বেও গর্ভধারণে ব্যর্থতা
১0) ভিটামিন ডি লেভেল মেয়েদের ১৫ এর নিচে এবং পুরুষদের ২৫ এর নিচে থাকা
১১) হাতে পায়ে মাসলস না থাকা বরঞ্চ শরীরের বেশিরভাগ ওজন পেটের দিকে থাকা
১২) ওজন কমানোর চেষ্টা করলে হাত পা শুকিয়ে যাওয়া কিন্তু পেট না কমা

 

এই পূর্বলক্ষণগুলির মধ্যে অন্তত ২টা যদি কারো থাকে, তার উচিত নিজের HbA1C টেস্ট করিয়ে ফেলা। HbA1C ৫.৭ এর ওপরে থাকলে টানা তিন থেকে চার মাস ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এবং এসময় প্যালিও/লো কার্ব ডায়েট করা।

এখানে থাকা পূর্বলক্ষণগুলোর মধ্যে কারো যদি ৩টি বেশি সমস্যা থাকে, তার উচিত একজন ডাক্তার বা ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্টের শরনাপন্ন হয়ে চিকিৎসা ও লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট নেয়া। ৩টির বেশি পূর্বলক্ষণ থাকা মানে খুব সম্ভবত হাই কোলেস্টেরল/ফ্যাটি লিভার/পিসিওএসের সমস্যা থেকে থাকতে পারে এবং সাথে শক্তিশালী ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সও রয়েছে। (সজল’র ডায়েট ফালসাফা’র সৌজন্যে)

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট