চট্টগ্রাম সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

দেশে সাড়ে ৩ কোটি শিশুর রক্তে উচ্চমাত্রার সিসা

নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ মে, ২০২২ | ৬:৫৪ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশে অন্তত সাড়ে ৩ কোটি শিশুর রক্তে উচ্চমাত্রার সিসা পাওয়া গেছে। গত মাসে ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংস্থাটি বলেছে, সিসার বিষক্রিয়া শিশুদের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য বেশি ক্ষতিকর। এটি শিশুদের মস্তিষ্কের অপূরণীয় ক্ষতি করতে পারে এবং তাদের পূর্ণ বিকাশকে করতে পারে বাধাগ্রস্ত।

ঢাকা থেকে উত্তর-পশ্চিমে ১৫ কিলোমিটা দূরে কাঠগোড়া এলাকায় গড়ে ওঠে ব্যাটারি রিসাইকেল কারখানা। সেখানে অনিক নামে এক শিশুর রক্ত পরীক্ষা করে তাতে পাওয়া যায় স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অন্তত পাঁচগুণ সিসা।

শিশুদের মধ্যে সিসার দূষণ ঠেকাতে ইউনিসেফের সহযোগী সংগঠন ‘পিওর আর্থ’ বর্তমানে বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর স্থানীয় বাসিন্দা ও কর্মীদের নিয়ে কাঠগোড়ার কারখানার স্থানটি পরিষ্কার করেছে। তারা এক সাথে ব্যাটারির বর্জ্য নিরাপদে অপসারণ করে, যা রিসাইকেল কারখানার কর্তৃপক্ষ যাওয়ার সময় ফেলে গিয়েছিল। তারা মাটিতে ছড়িয়ে থাকা অ্যাসিডে দূষণের শিকার বাঁশ গাছগুলোও অপসারণ করে এবং কয়েক ইঞ্চি বিষাক্ত মাটি সরিয়ে নেয়।

পিওর আর্থের ফিল্ড ইনভেস্টিগেটর মোহাম্মদ লুৎফুল কবির বলেন, ‘এখন এটি পরিষ্কার জমি। এখানে কোনো দূষণ নেই, কোনো সিসাদূষণ নেই।’

তিনি বলেন, ‘উচ্ছেদ অভিযান সম্পন্ন হওয়ার প্রায় ১৮ মাস পর শিশুদের রক্তে সিসার মাত্রা গড়ে কমে যায় প্রতি ডেসিলিটারে ৯.১ মাইক্রোগ্রাম, যা ছিল আগের তুলনায় ৪২ শতাংশ কম।’

ইউনিসেফ ও পিওর আর্থ প্রকাশিত এ ধরনের প্রথম বৈশ্বিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, বিশ্বে প্রায় ৮০ কোটি শিশুর রক্তে সিসার মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে পাঁচ মাইক্রোগ্রাম বা তার বেশি। এই মাত্রা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ প্রয়োজন। এসব শিশুর প্রায় অর্ধেক দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাস করে।

শুধু বাংলাদেশে আনুমানিকভাবে সাড়ে ৩ কোটি শিশুর রক্তে সিসার মাত্রা খুব বেশি। ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স ইভালুয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, সিসার বিষক্রিয়ার কারণে মৃত্যুর হারের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ।

লোকালয়ের কাছাকাছি ব্যবহৃত লেড অ্যাসিড ব্যাটারির অবৈধ রিসাইক্লিং কারখানাগুলো প্রায়শই সিসার বিষক্রিয়ার জন্য দায়ী। মসলাতেও উচ্চমাত্রায় সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। উদাহরণস্বরূপ লেড ক্রোমেটে, যা হলুদের রঙ ও ওজন বাড়াতে ব্যবহৃত হয়।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঝারি থেকে উচ্চমাত্রার দূষণ শিশুদের মাথাব্যথা, পেটে ব্যথা, নিস্তেজ হয়ে পড়া, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, দুর্বল মনোযোগ, ক্ষুধা কমে যাওয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগার কারণ হতে পারে। সিসার বিষক্রিয়া স্নায়বিক প্রক্রিয়া এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যার ফলে তাদের মধ্যে দেখা দিতে পারে অস্থিরতা বা আলস্য।

 

পূর্বকোণ/মামুন/পারভেজ

শেয়ার করুন