চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

নতুন ট্যারিফে ব্যয় বাড়ছে ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডেও

অনলাইন ডেস্ক

২১ জুন, ২০১৯ | ৮:০৪ অপরাহ্ণ

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে কার্ডের জন্য আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন করে পাঁচ থেকে ছয়গুণ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে নতুন ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড ইস্যু করা ব্যয়বহুল হবে। একে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ার নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, ব্যাংকের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড তৈরির আমদানিকৃত পণ্যগুলোর (তিন ধরনের কার্ড) ওপর নতুন করে ট্যারিফ প্রস্তাব করা হয় : ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ড আমদানি প্রতিটি ০.৭০ ইউএস ডলার, চিপ ও পিন কার্ড দুই ডলার এবং কন্টাক্টলেস কার্ড তিন ডলার ট্যারিফ ধার্য করা হয়েছে। আগে আমদানি করা কার্ডের ওপর কোনো ঘোষিত ট্যারিফ রেট ছিল না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এ তথ্যানুযায়ী, কাস্টমস বিভাগ সাধারণত এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫২ সেন্ট ট্যারিফ নিত।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, ‘ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনে এবং নাগরিক সেবায় ডিজিটাইজেশনের জন্য সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতি কার্ডের এই নতুন মূল্য এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন এই হার সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক।’
তিনি আরো জানান, এই নতুন ট্যারিফ প্রত্যাহারে আমরা দুই-একদিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে যাব, কারণ এই নতুন হার বাস্তবায়ন হলে ব্যাংকগুলো কার্ড প্রদানে গ্রাহকদের থেকে চার্জ নিতে বাধ্য হবে, যা ক্রেডিট ও ডেবিট হোল্ডারদের কাছে ব্যাংককে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন করবে এবং নতুন করে কার্ড নিতে নিরুৎসাহিত করবে।
শীর্ষস্থানীয় কার্ড আমদানিকারক লার্ক টেকনোলজিসের এমডি জুবায়ের হোসেন সায়েম জানান, নতুন করে শুল্ক আরোপের কারণে প্রতিটি ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ডের দাম পড়বে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। বর্তমানে এই কার্ডের মূল্য ২০ থেকে ২৫ টাকা। চিপ-বেসড কার্ডের আমদানি খরচ ১০০-১২০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৭০ টাকায় গিয়ে দাঁড়াবে এবং কন্টাক্টলেস ক্রেডিট কার্ডের খরচ তিনগুণ বেড়ে ৫৫০ টাকায় গিয়ে পৌঁছাবে।
সায়েম জানান, দেশের চাহিদা পূরণের জন্য স্থানীয় কোম্পানিগুলো প্রতি বছর প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ কার্ড আমদানি করে।
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমান জানান, স্থানীয় ব্যাংকগুলো আমদানি কার্ডের ওপর ব্যাপক মাত্রায় নির্ভরশীল। কারণ, বাংলাদেশে শুধু একটি কোম্পানিই ভিসাকে স্বীকৃতি দেয়। তিনি জানান, এই কার্ড কোম্পানিটির সক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। নির্ভরশীল এবং কন্টাক্টলেস কার্ড তৈরির জন্য ভিসা থেকে অনুমোদন পেতে তাদের এখনো বেগ পেতে হচ্ছে।
একজন ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, কোনো কোম্পানি স্থানীয়ভাবে কার্ড তৈরি করতে চাইলে তাকে প্রতি বছর এক লাখ ইউএস ডলারেরও বেশি ভিসা, মাস্টারকার্ড, নেক্সাসের মতো কার্ড ইস্যুকারী সংস্থাকে রয়ালটি এবং অডিট ফি বাবদ প্রদান করতে হবে। তিনি জানান, স্থানীয় কোম্পানিকে ব্রেক-ইভেন করতে প্রায় এক কোটি নতুন কার্ড তৈরি করতে হবে, যা দেশের বর্তমান কার্ড বাজারের আয়তনসাপেক্ষে করা বেশ কঠিন হবে। ‘নতুন শুল্ক আরোপের মাধ্যমে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আহরণ করতে সক্ষম হবে না। তবে ক্যাশলেস সমাজ গঠনে দেশের এই অগ্রযাত্রার ওপর প্রতিকূল প্রভাব পড়বে,’ যমুনা ব্যাংকের এমডি শফিকুল আলম জানান।

মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল জানান, যেখানে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশ এরই মধ্যে চিপ-এন্ড-পিন কার্ডে চলে এসেছে, যা ধীরে ধীরে কন্টাক্টলেস কার্ডের দিকে আপডেট হচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে নতুন ট্যারিফ গ্রাহকদের প্রচলিত পদ্ধতিতে (ট্র্যাডিশনাল) ফিরে যেতে উৎসাহী করতে পারে।

পূর্বকোণ/ময়মী

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট