চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪

বাস্তব জীবনে কে ছিলেন মোনালিসা ? লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির বিখ্যাত চিত্রকর্মের পেছনের গল্প

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

১৭ জুলাই, ২০২২ | ১২:১১ অপরাহ্ণ

অনেক ইতিহাসবিদই বলার চেষ্টা করেছেন, ‘মোনালিসা’র অস্তিত্ব বাস্তব জীবনে আসলেই ছিল। এর সবচেয়ে চর্চিত উত্তরটি হল মোনালিসা হল আসলে লিসা ঘেরার্ডিনি নামের এক ফ্লোরেনটাইন ব্যবসায়ী ফ্রান্সেসকো দেল জিওকোন্ডোর স্ত্রীর প্রতিকৃতি। যিনি ১৫ জুন, ১৪৭৯-এ ফ্লোরেন্স প্রজাতন্ত্রের ভায়া ম্যাগিওতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং ১৫ জুলাই, ১৫৪২ সালে মারা যান। তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মতের অভাব নেই। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন মোনালিসার আদৌ কোনোও বাস্তব ভিত্তি নেই, বরং এটি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ঊর্বর কাল্পনিক চিত্র য একইসাথে একাধিক নারীর প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রতিকৃতি। আবার কেউ-বা বিশ্বাস করেন- এটি লিওনার্দো দা ভিঞ্চির একটি স্ব-প্রতিকৃতি। নানা মত থাকলেও এ নিয়ে চর্চা কিন্তু থেমে নেই। বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত পেইন্টিংগুলির মধ্যে অন্যতম এ পেইন্টিংটি সুরক্ষিত আছে প্যারিসের বিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়ামে। সেই ১৮০৪ সাল থেকে।

মোনালিসার ভ্রু নেই কেন?
মোনালিসার আসলে ভ্রু আছে (বা ছিল) যা আর পেইন্টিংয়ে দেখা যায় না। প্যাসকেল কোট নামে একজন প্যারিসিয়ান প্রকৌশলী এ চিত্রকর্মটি গভীরভাবে পরীক্ষা করে দেখেছিলেন। তিনি বলেছেন, এক সময় চিত্রটিতে থাকা মহিলার চোখের দোররা এবং ভ্রু দুটোই ছিল, তবে সময়ের সাথে সাথে সেগুলো আর দৃশ্যমান থাকেনি।

কী লুকিয়ে আছে ‘মোনালিসা’র মধ্যে?
ওই প্রকৌশলী প্যাসকেল জনপ্রিয় চিত্রকর্মটির নীচে আরো একটি আকর্ষণীয় আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি একটি খঁসরবৎব প্রযুক্তির ক্যামেরা ব্যবহার করে পেইন্টিংটিতে চারকোল রেখা সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ল্যুভর মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ প্যাসকেলকে মোনালিসার ফটোগ্রাফিক স্ক্যান করার অনুমতি দেয় এবং তিনি তার প্রাপ্ত ফলাফল ২০২০ সালের আগস্টে জার্নাল অফ কালচারাল হেরিটেজে প্রকাশ করেন। তার ক্যামেরাটি ১৩টি তরঙ্গদৈর্ঘ্যে প্রতিফলিত হওয়া আলো শনাক্ত করতে লেয়ার এমপ্লিফিকেশন পদ্ধতি (খঅগ) ব্যবহার করে। সহজ কথায়, এই পদ্ধতিটি তাকে পেইন্টিংয়ের নীচে লুকানো ক্ষুদ্র বিবরণ দেখতে দেয় যা খালি চোখে দৃশ্যমান ছিল না।

প্রকৌশলী প্যাসকেল আবিষ্কার করেন যে, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি পেইন্টিং তৈরি করার সময় ‘স্পেøাভেরো’ কৌশল ব্যবহার করেছিলেন- যার অর্থ হল স্কেচের বাইরের দিকে গর্ত করে একটি ক্যানভাসে বেদনার প্রাথমিক স্কেচগুলি স্থানান্তর করা। তিনি দেখতে পেলেন, পেইন্টিংটির আন্ডার ড্রয়িং একটি ভিন্ন সিলুয়েট দেখায়, অথচ সাধারণভাবে সেটা ধরার জো নেই। সবশেষে, তিনি মোনালিসার মাথার ঠিক উপরে রাখা একটি ছোট হেয়ারপিন আবিষ্কার করেন, যা তার কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল। কারণ সেই সময়ে, ফ্লোরেন্সের মহিলাদের সাধারণ হেয়ার স্টাইল ঠিক এরূপ ছিল না। ফলে প্যাসকেল বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, চিত্রটির কোনোও বাস্তব ভিত্তি ছিল না, বরং এটি কোনও দেবী বা ওইরূপ অন্য কেনোও কাল্পনিক ‘মহিলা’র চিত্রকর্ম।

‘মোনালিসা’র ওপর হামলা
‘মোনালিসা’ মোট পাঁচবার হামলার শিকার হয়েছে যার প্রথমটি এর পরিচিতির সময়- ১৯৫৬ সালে এবং সা¤প্রতিকতমটি ২০২২-এ। ১৯৫৬ সালে মোনালিসা একবার নয়, দু’বার হামলার শিকার হয়েছিল। প্রথমে কেউ এসিড ছুঁড়ে পেইন্টিংয়ের নিচের অংশে আঘাত করে। সেই বছরই মোনালিসার দিকে ঢিল ছোঁড়াও হয়েছিল। ভাগ্যক্রমে, পেইন্টিংটি কাঁচের পিছনে রাখা হয়েছিল বলে বেঁচে গিয়েছিল।
১৯৭৪ সালে মোনালিসাকে রাস্তাতেই আঘাত করার চেষ্টা হয়েছিল। টোকিও জাতীয় জাদুঘরে থাকাকালীন, একজন মহিলা মোনালিসার উপরে লাল রঙ দিয়ে স্প্রে করেছিলেন।

মোনালিসাকে ২০২২ সালে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের এক প্রতিবাদকারী’ কেক ছুঁড়ে মেরেছিল। একজন ৩৬ বছর বয়সী ব্যক্তি, যিনি হুইলচেয়ারে একজন মহিলার পোশাক পরে ফরাসি ভাষায় চিৎকার করতে করতে এ কাজ করেছিলেন। ২০০৯ সালেও মোনালিসায় চা-কাপ দ্বারা আঘাতের চেষ্টা হয়েছিল। ১৯১১ সালে ওপরের ঘটনাগুলোর বাইরে ‘মোনালিসা’কে চুরি করে বিক্রির চেষ্টাও হয়েছিল। ভিনসেনজো পেরুগিয়া নামের এক ব্যক্তি ল্যুভরের পায়খানায় লুকিয়ে থেকে এটি চুরি করেছিলেন। তিনি দুই বছর পরে শিল্পকর্মটি বিক্রি করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ধরা পড়ে যান।

মোনালিসার ওপর কে বা কারা এসিড ছুঁড়েছে?
মোনালিসার ওপর এসিড নিক্ষেপ ছিল পাঁচবার পেইন্টিংটির ওপর হামলার অন্যতম। বিখ্যাত চিত্রকর্মটিতে কারা এসিড নিক্ষেপ করেছে তা জানা যায়নি। এই ঘটনার পর ১৯৫৬ সালে অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্য পেইন্টিংটি কাঁচের পিছনেই রাখা হয়েছিল। সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট