সম্প্রতি বৈশ্বিক সংকটের মুখে কাগজের বাজার লাগামহীন। বাজারে কাগজের মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতারা। কাগজ সংকট দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বাজারে শিক্ষা উপকরণ- কাগজ, কলম, পেন্সিল, ব্যবহারিক খাতা, মার্কার, ফাইল, বোর্ড, ক্যালকুলেটর, স্কেল, কালিসহ সব পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। কাগজের দাম বাড়ার ফলে ছাপাখানা, প্রকাশনী, বিপণিকেন্দ্র আর ফটোকপির দোকানগুলোয় চলছে হাহাকার। কাগজের অতিরিক্ত দামের ফলে বিপাকে পড়ছেন শিক্ষার্থী, সৃজনশীল বই প্রকাশক, পত্রিকা শিল্পসহ বিভিন্ন কার্টন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।
পুস্তক প্রকাশনার সঙ্গে সংশ্নিষ্টদের কাছ থেকে জানা যায়, ৮০, ৯০ ও ১০০ গ্রামের ডিডি অফসেট গত বছর যেখানে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা প্রতি রিম বিক্রি হতো, সেটি এখন ৩ হাজার ৫০০ টাকা। ডলার ও জ্বালানির তীব্র সংকটে দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিভিন্ন পুস্তক প্রকাশনা, মুদ্রণ, পত্রিকা শিল্প, ছাপাখানা ও প্যাকেজিংয়ের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট ব্যবসায়ী ও কর্মীদের কর্মসংস্থান পড়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে।
আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়া ও কাঁচামাল সংকটে পড়ছে কাগজকল। চলমান নানামুখী সংকটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী শিক্ষা উপকরণ। এসবের দাম বাড়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের অভিভাবকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
করোনার অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের বাজারে যেখানে সংসার চালাতে টালমাটাল অবস্থা, সেখানে সন্তানদের লেখাপড়া তো কাঁটা হয়ে বিঁধছে। সংবাদপত্রের তথ্য অনুযায়ী দেশে শ-খানেক কাগজকল রয়েছে। বহু আগেই বাংলাদেশ কাগজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। দেশের কাগজকলগুলোয় অফসেট, নিউজপ্রিন্ট, লেখা ও ছাপার কাগজ, প্যাকেজিং পেপার, লাইনার স্টিকার পেপার, সিকিউরিটি পেপারসহ বিভিন্ন গ্রেডের টিস্যু পেপার উৎপাদন করা হয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ থেকে ৪০টিরও বেশি দেশে কাগজ রপ্তানি হওয়ার উদাহরণও রয়েছে। আমাদের কাগজকলগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ১৬ লাখ টন হলেও দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের কাগজের চাহিদা মাত্র ৯ লাখ টন।
কাগজের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিপাকে পড়েছেন সৃজনশীল বই প্রকাশক, পত্রিকা শিল্পসহ বিভিন্ন কার্টন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে ৩৫ কোটি বই তুলে দেবে সরকার।
এ অবস্থায় কাগজের অনিয়ন্ত্রিত মূল্যবৃদ্ধি ও দুষ্প্রাপ্যতা নিরসনে অকেজো কারখানাগুলো চালু, কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ, কাগজের অপচয় রোধ, সিন্ডিকেট কারসাজি বন্ধ করে স্বল্প শুল্কে কাঁচামাল আমদানি, রিসাইক্লিংসহ কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সরকারের সংশ্নিষ্ট মহলের সুদৃষ্টি একান্তই কাম্য। তথ্যসূত্র: সমকাল
পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ