চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ই-পাসপোর্ট যুগে বাংলাদেশ

২৩ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ

১১৯তম দেশ হিসেবে ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট) যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ। গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও বাস্তবায়নে আরও একধাপ অগ্রসর হলো দেশ। যদিও আপাতত ই-পাসপোর্টের সুবিধা ঢাকার আগারগাঁও, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ী পাসপোর্ট অফিস থেকেই পাওয়া যাবে, তবে কিছুদিন পর সারাদেশেই চালু হবে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম। ‘মুজিববর্ষ’কে কেন্দ্র করে গৃহীত ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমকে সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলতে হবে। এতে গ্রাহকরা উপকৃত হবেন তা বলাই বাহুল্য। ই-পাসপোর্ট দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা জোরদার এবং ভুয়া পাসপোর্ট প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখবে। দেশ দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও এই উদ্যোগ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, সন্দেহ নেই।

উল্লেখ্য, ই-পাসপোর্ট প্রচলনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের ১১৯তম দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। এটি অত্যন্ত নিরাপত্তা সংবলিত একটি ব্যবস্থা। যে কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এখন ই-পাসপোর্ট ব্যবহার শুরু করেছে। আমরাও সেই তালিকায় যুক্ত হলাম এখন। জানা গেছে, বর্তমানে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপি’র (যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট) মতো ই-পাসপোর্টের বইও একই রকমের থাকবে। তবে যন্ত্রে পাসপোর্টের বইয়ের প্রথমে যে তথ্য সংবলিত দুইটি পাতা থাকে, ই-পাসপোর্টে তা থাকবে না। সেখানে বরং পালিমানের তৈরি একটি কার্ড ও অ্যান্টেনা থাকবে। সেই কার্ডের ভেতরে চিপ থাকবে, যেখানে পাসপোর্ট বাহকের সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। ডাটাবেজে থাকবে পাসপোর্টধারীর তিন ধরনের ছবি, ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ। ফলে যেকোনো দেশের কর্তৃপক্ষ সহজেই ভ্রমণকারীর সম্পর্কে সব তথ্য জানতে পারবেন। ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো যে, খুব দ্রুত ও সহজে ভ্রমণকারীরা যাতায়াত করতে পারবেন। ই-গেট ব্যবহার করে তারা যাতায়াত করবেন। ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে তাদের ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এর মাধ্যমে দ্রুত তাদের ইমিগ্রেশন হয়ে যাবে। তবে যখন একজন ভ্রমণকারী ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করে যাতায়াত করবেন, সঙ্গে সঙ্গে সেটি কেন্দ্রীয় তথ্যাগারের (পাবলিক কি ডাইরেক্টরি-পিকেডি) সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সম্পর্কে তথ্য জানতে পারবে। ই-গেটের নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। থাকবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের ব্যবস্থাও। সব ঠিক থাকলে ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবে। কোনো গরমিল থাকলে লালবাতি জ্বলে উঠবে। তখন সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা হস্তক্ষেপ করবেন। কারো বিরুদ্ধে ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা থাকলে, সেটিও সঙ্গে সঙ্গে জানা যাবে। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও) এই পিকেডি পরিচালনা করে। ফলে ইন্টারপোলসহ বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য যাচাই করতে পারে। ৩৮টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকায় এ ধরনের পাসপোর্ট জাল করাও সহজ নয়।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ২৪ এপ্রিলে পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ উদ্বোধনের সময়ে ই-পাসপোর্ট চালুর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালুর বিষয়ে জার্মানির সরকারী প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস জেএমবিএইচের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়।

কার্যক্রম উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন, মুজিববর্ষে ই-পাসপোর্ট জাতির জন্য একটি উপহার। এর মাধ্যমে ই-পাসপোর্ট যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। এই প্রকল্পের ফলে বাংলাদেশ আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। একইসঙ্গে বিশ^দরবারে বাংলাদেশ উচ্চমর্যাদায় আসীন হবে। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গবন্ধুকন্যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম তাতে সাফল্যের নবমাত্রা যোগ করবে। আমরা আশা করবো কোনো রকমের অনিয়ম-দুর্নীতি এই কার্যক্রমকে স্পর্শ করবে না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট