চট্টগ্রাম শনিবার, ১১ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ

অধ্যাপক আয়েশা পারভীন চৌধুরী

১৩ জানুয়ারি, ২০২০ | ২:০৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একে অপরের সমার্থক। বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্ব ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা যেমন প্রশ্নাতীত, ঠিক তেমনি মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা একক ও অনন্য। কিন্তু স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে দল ও মতের অমিলে আমাদের ইতিহাসে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। স্বাধীনতার পক্ষের ও বিপক্ষের মধ্যে তফাৎ দিন দিন বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করে জাতির জনককে। এরপর কয়েক বার সরকার বদল হয়েছে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাঁর সরকার মাদক, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, পাশবিকতা, নিষ্ঠুরতা ও হত্যাকা-সহ সব সমাজবিরোধী ও মানবতাবিরোধী অপতৎপরতা বন্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছেন। এতে জনসমর্থন মিলছে, সাফল্যও আসছে। তিনি নিজ দল থেকেই শুরু করেছেন শুদ্ধি অভিযান। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সে যেই হোক, তাকে বিচারের আওতায় আনা হবে। নিজের দল হোক, বিরোধী দল হোক, আপন হোক, পর হোক সবাইকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। শিক্ষার গুণগত উন্নয়ন এবং সবাইকে শিক্ষার আওতায় আনতে তিনি বাস্তবমুখী কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন। মুজিববর্ষেই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার কাজ সম্পন্ন করবেন।
দেশের ইতিহাসে শুধু নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও এ হত্যাকান্ড বর্বরোচিতও জঘন্যতম। বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার নিশ্চিন্ন করতে শেখ রাসেলকে হত্যা করা হয়েছে। শিশু রাসেলকে যেভাবে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল তা একজন বিবেকবান মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। পচাত্তরের ১৫ আগস্ট শিশু রাসেলও খুনীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। শিশু রাসেলকে স্মরণে রেখে তিনি বাংলাদেশের সব শিশুর সুরক্ষা এবং শিক্ষা-দীক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রে উন্নয়নে পদক্ষেপ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করে চলেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে অনেকগুলো অনুষ্ঠান হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় পৃথক পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করবে। প্রতি বছর বঙ্গবন্ধুর স্মরণে বক্তৃতার আয়োজন করা হবে। এসব বক্তৃতা জনগণকে সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান বাংিলাদেশের সাথে যৌথভাবে উদ্যাপন করবে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান সংস্কৃতিক সংস্থা। বিশে^র ১৯৫ দেশে একত্রে উদ্যাপিত হবে মুজিববর্ষ। ইউনেস্কোর ৫০তম অধিবেশনে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জন্মশতবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশ^ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
১৭ই মার্চ থেকে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপিত হবে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশে^ও নানান প্রান্তে বছর জুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা করা হবে। জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভূটানের রাজা জিগমে ওয়াংচুক, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কিমুন, ইউনেস্কোর সাবেক মহাসচিব ইরিণা বুকোভো, আরবলীগের সাবেক মহাসচিব আমর মুসাসহ বিশে^র বেশ কয়েকটি দেশের নেতাসহ কয়েকজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। ১০ জানুয়ারি থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের দিন গণনা শুরু হয়েছে। ১৭ই মার্চ বিকেলে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শত শিশুর কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীতসহ বাঙালি সংস্কৃতির প্রতিফলন থাকবে। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কাজের দৃশ্যকল্প তুলে ধরে আগামী প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত করার চেষ্ঠা করা হবে। বিশে^র গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সম্মেলন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ১২টি স্বল্পদৈর্ঘ্য, ১২টি তথ্যচিত্র এবং একটি ওয়েব সিরিজ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ এই বই দুইটি দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপে প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণটির একটি সংকলন বের করারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নামে চলতি বছর থেকে একটি পুরস্কার প্রবর্তন করতে যাচ্ছে ইউনেস্কো। গবেষণা ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিকাশে তরুণদের উৎসাহিত করতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর এই পুরস্কারের জন্য ইউনেস্কোকে অর্থ দেবে বাংলাদেশ। মুজিববর্ষ উদ্যাপনকালে দেশজুড়ে নানা কর্মসূচী পালনের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন আরও ব্যাপক পরিসরে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হলে, একটি প্রতিবাদী চেতনা সকল অন্যায়-অত্যাচারকে প্রতিহত করতে অনুপ্রাণিত করবে। প্রায় এক বছর ধরে প্রস্তুতি নিতে গিয়ে অনেক ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে বাংলাদেশ। শুধুমাত্র পালন ও স্মৃতিচারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বরং প্রজন্মের পর প্রজন্মের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করতে হবে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিজের পরিচয় তুলে ধরতে হবে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই জন্মশতবার্ষিকী পালনের উদ্দেশ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বকে আমন্ত্রণ করে বঙ্গবন্ধুর মহান রাজনৈতিক জীবনের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। শুধুমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তি নয়, বর্তমানে আমাদের দেশের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখা দেশগুলোর আমন্ত্রণের তালিকায় থাকা আন্তর্জাতিক নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধি, ভারতের ক্ষমাতাসীন দল বিজেপির নেতা ও ভারতের উপ-প্রধানমন্ত্রী এলকে আদভানি, জার্মানির চ্যান্সেলর আঞ্জেলা মার্কেল, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, মালেশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মহাথীর মোহাম্মদ প্রমুখ এই মহতী অনুষ্ঠানে একাধিক বিশ^নেতার উপস্থিতি আমাদের আয়োজনকে অলংকৃত করবে। নিউইয়র্ক, লন্ডন, দিল্লী, কলকাতা, বার্লিন, টোকিওসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে আয়োজিত অনুষ্ঠানগুলো আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে জানাতে সাহায্য করবে। এসব উদ্যোগ শুধুমাত্র বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাঙালীদের অনুপ্রেরণা দেবে না, বিদেশী ভাই-বোনরাও আমাদেরকে জানতে ও বুঝতে পারবে। ফলে আমাদের প্রবাসী বাঙালী ভাই-বোনের সাথে সম্পর্কটা আরো জোরদার হবে। ১৭ মার্চ একটি আনন্দের দিন, একটি প্রতিবাদী দিন আর এই দিনটি হোক সকল অন্যায় প্রতিহতের প্রতীক, একটি জাতির মুক্তির প্রতীক ও একটি দেশের আপামর জনসাধারণের উন্নয়নের শিখরে আরোহণের প্রতীক। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে সম্প্রতি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের আন্তর্জাতিক স্মারকগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ‘‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্মারক গ্রন্থ’’,আগরতলার কৃতীপুরুষ ড. দেবব্রত দেবরায় ও তাঁর সহযোগীদের উদ্যোগে ১০ মার্চ ২০১৯ তারিখে এর সূচনা করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আন্তর্জাতিক স্মারক গ্রন্থটি প্রকাশের মাধ্যমে আগরতলার মানুষ বাঙালি জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমাদের ঋণী করেছেন।

মানুষের প্রতি প্রেম ও ভালবাসার কথা সবসময় বঙ্গবন্ধুর আলাপ-আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে আছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরিমন্ডলে নয়, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলেও এই দিবসটিকে ঘিরে চলছে নানান আয়োজন। এই দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে বিশ^ দরবারে পরিচয় করে দিতে সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত গান, কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক ইত্যাদি আগামী প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের দলিল হতে পারে। আমাদের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি শিক্ষকসমাজ এবং অন্যান্য পেশার মানুষও তাদের কর্মকা-ে ও প্রচার-প্রচারণায় বঙ্গবন্ধু ও তাঁর মহান আদর্শকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারেন।

অধ্যাপক আয়েশা পারভীন চৌধুরী কলামিস্ট ও শিক্ষক, ইংরেজি বিভাগ, ডা. ফজলুল-হাজেরা ডিগ্রি কলেজ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট