চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

১০ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:৪৬ পূর্বাহ্ণ

বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য ঐতিহাসিক দিন আজ। আজ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শহীদের রক্তস্নাত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন। জীবন-মৃত্যুর কঠিন চ্যালেঞ্জের ভয়ঙ্কর অধ্যায় পার হয়ে সারা জীবনের স্বপ্ন, সাধনা ও নেতৃত্বের ফসল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মহান এই নেতার প্রত্যাবর্তনে পূর্ণতা পেয়েছিল স্বাধীনতাযুদ্ধের বিজয়। সেদিন স্বজনহারানো সর্বস্বান্ত মানুষ হৃদয় উজাড় করে বরণ করে নিয়েছেন তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে। নেতা ও জনতার আনন্দাশ্রু মিলে-মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল সেদিন। আর নেতা ও জনতার এই মহামিলনের মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণতা পায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। স্বয়ং বঙ্গবন্ধু তাঁর এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘এ অভিযাত্রা অন্ধকার থেকে আলোয়, বন্দিদশা থেকে স্বাধীনতায়, নিরাশা থেকে আশায় অভিযাত্রা।’ সংগতকারণে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের এই দিনটি বাঙালি জাতির কাছে খুবই গুরুত্ব ও তাৎপর্যবহ। মুজিববর্ষের ক্ষণগণনাও শুরু হচ্ছে আজ।

পাক হানাদার বাহিনী বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে তার ধানম-ির বাসা থেকে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তাঁকে বন্দী করে রাখা হয় পাকিস্তানের কারাগারে। বাঙালি যখন বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বাংলার জনগণ মহান স্বাধীনতাকে অসম্পূর্ণ বলে মনে করছিল। তারা জাতির জনকের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেন। বাঙালি জাতির চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বিশ্বনেতারাও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। আন্তর্জাতিক চাপে পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে পিআইয়ের একটি বিশেষ বিমানে লন্ডনে পৌঁছান। সেখান থেকে ১০ জানুয়ারি ব্রিটেনের রাজকীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। একই দিনে তিনি ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানে স্বাধীন স্বদেশে ফিরেই সরাসরি তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত হয়ে এক সমাবেশে ভাষণ দেন। ওই সময় আবেগ আপ্লুত বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘লক্ষ মানুষের প্রাণদানের পর আজ আমার দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজ আমার জীবনের সাধ পূর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’ প্রাণপ্রিয় নেতাকে পেয়ে দেশবাসীও সেদিন আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বদেশ গড়ার শপথ নেন। সেদিন থেকেই বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্নিমাণের কাজ শুরু করে দেন। যদিও স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্র ৭৫-এর ১৫ আগস্ট পৈশাচিক কায়দায় সপরিবারে জাতির জনককে হত্যার পর দেশের অগ্রযাত্রা থমকে যায়, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে দেশ আজ জাতির জনকের স্বপ্নকে ধারণ করে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ সারাবিশে^ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। দেশ এখন নি¤œমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বিশ^ব্যাংকের স্বীকৃতি পেয়েছে। ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে চলতি বছরেই পরিণত হচ্ছে মধ্যম আয়ের দেশে। ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে শামিল হবে উন্নত দেশের কাতারে।

চলতি ২০২০ খ্রিস্টাব্দ আমাদের জাতীয় জীবনে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ বছর উদযাপিত হতে যাচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। আগামী ১৭ মার্চ বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার শুভ সূচনা হবে। সরকার ইতোমধ্যে ২০২০-২১ খ্রিস্টাব্দকে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে। আজ রাজধানীর তেজগাঁও পুরনো বিমান বন্দরে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা উদ্বোধন ঘোষণা করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল পাঁচটায় এটি উদ্বোধন করবেন। ২০২১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠানমালা যুগপৎভাবে চলতে থাকবে। এই উদযাপন শুধু আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব নয়, এই উদযাপনের লক্ষ্য জাতির জীবনে নতুন জীবনীশক্তি সঞ্চারিত করা; স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে জাতিকে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া।

আমরা যত দিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত থাকব, ততদিন আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অটুট থাকবে। বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু একটি সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন। তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আজ সে স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আজ বাংলাদেশের নাম পৃথিবীর উদীয়মান ১১টি অর্থনীতির দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যারা এক সময় বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’সহ নানা অভিধায় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছিল, তারাই আজ অকপটে স্বীকার করছেন যে, বাংলাদেশের সাফল্য উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোর জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বিশ্বব্যাংকপ্রধানসহ সবাই আজ একবাক্যে বলছেন, বাংলাদেশের অবস্থান এখন ‘বিশ্বসমীহযোগ্য’ পর্যায়ে চলে গেছে। আমাদের সবার উচিত হবে, সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ অর্জনে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করা। দেশকে অগ্রগতির পথে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। কোনো অপশক্তি যাতে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার এ ধারাকে ব্যাহত করতে না পাওে, সে ব্যাপারে সতর্ক-সাবধান থাকা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট