চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

শীতের অসুখ ও সচেতনতা

২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৩:২২ পূর্বাহ্ণ

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে প্রতি বছরই শীত আসে বাংলাদেশে। দিনকয়েক আগে দুয়ারে কড়া নাড়লেও এখন দেশেজুড়ে প্রচ- প্রতাপে নেমে এসেছে শীত। জাঁকিয়ে শীত পড়তে শুরু করেছে সারাদেশে। নানা কারণে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে শীতের তীব্রতা একটু কম হলেও উত্তরের জেলাগুলোতে এরই মাঝে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। অনেক এলাকায় তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। বুধবার মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায় ৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অনেক স্থানে হাড় কাঁপানো শীত আর হিমেল বাতাসে থমকে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ঘনকুয়াশা এবং কনকনে হিমশীতল বাতাসের প্রবাহ বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের তীব্রতা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, গত ১ নভেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫০ দিনে বিভিন্ন শীতজনিত রোগে মারা গেছে ৪৯ জন। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এবারের শীতে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে কয়েকটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ফলে শীত আর শীতজনিত রোগবালাই আরো বেশি কষ্ট ও প্রাণনাশের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

আবহাওয়া দপ্তর বলছে, পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে দু’তিন দিন হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হবে। যদিও এ সময় শীতের তীব্রতা কিছুটা কম অনুভূত হবে। তবে বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর শীতের তীব্রতা বাড়বে প্রচ-ভাবে। দুয়েকটি মৃদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহও বয়ে যেতে পারে। উল্লেখ্য, উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা ঠা-া বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটারের বেশি হলে শীতের অনুভূতি বাড়ে। গত কয়েকদিন ধরে ঠা-া বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটারের বেশি ছিল। সে কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কনকনে শীত অনুভূত হয়েছে। গ্রামীণ জনপদগুলোতে হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শৈত্যপ্রবাহে সাধারণত বিপর্যস্ত হয় দেশের খেটে খাওয়া মানুষের জীবন। ছিন্নমূল মানুষ, যারা রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, ফুটপাতে সংসার পেতে বসবাস করেন, তারাই সবচেয়ে বেশি কষ্ট ভোগ করেন। অবস্থাপন্নরা শীত-কষ্ট তেমন অনুভব না করলেও দরিদ্রপাড়ার বাসিন্দারা হাড়ে হাড়ে শীতের তীব্রতা তথা শীত-যন্ত্রণা অনুভব করে। যে কোনো দুর্যোগ দৈবপাকে এই দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষরাই বিপাকে পড়েন বেশি। তাদের পক্ষে একদিকে শীতবস্ত্র ও লেপ-কম্বল কিনে শীত নিবারণ করা যেমন দুরূহ, অন্যদিকে পুষ্টিহীনতার কারণে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও তাদের কম। ফলে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে তারাই আক্রান্ত হয় বেশি। তাদের গায়ে বিঁধে যায় কনকনে ঠা-া বাতাস। গরীব ও গরম কাপড়হীন এসব দুঃস্থ মানুষের যেন কষ্টের শেষ নেই। শীত যতোই তীব্র হয়, ততোই তাদের জীবন হয়ে পড়ে স্থবির। একে শীতের কষ্ট, তার ওপর নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ শীতজনিত রোগের প্রকোপ গরীব-অসহায়দের জীবনে জেঁকে বসে। গ্রাম-নগরে চারপাশে তাকালেই শীতার্ত অসহায় মানুষের দুর্ভোগ চোখে পড়ে। যদিও শহুরে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার কারণে শীতবস্ত্র ক্রয় করে শীত নিবারণ তেমন কঠিন হচ্ছে না। তবে প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জের অবস্থা এখনো উদ্বেগজনক। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পয়লা নভেম্বর হতে ৫০ দিনে সারাদেশে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৬৩ জন। এর মধ্যে শ্বাসতন্ত্র ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৩৮ হাজার ২৩৯ জন এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৯৭ হাজার ৪৩৬ জন। মারা গেছে ৪৯ জন। এমন চিত্র কোনো মতেই জনকাম্য নয়। এ অবস্থায় শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর কোনো বিকল্প থাকতে পারে না।

আবহাওয়া দপ্তরের মতে, উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বায়ুপ্রবাহ সক্রিয় হলে শৈত্যপ্রবাহ আরও তীব্র হবে। চলতি মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বয়ে যেতে পারে ২টি শৈত্যপ্রবাহ। আমরা মনে করি, শীত আরো তীব্র আকার ধারণের আগেই দরিদ্র-দুঃস্থদের রক্ষায় সবার এগিয়ে আসা উচিত। পর্যাপ্ত পরিমাণ গরম কাপড় সংগ্রহ করে তা সামর্থ্যহীনদের মধ্যে বিতরণের পাশাপাশি তারা যাতে চিকিৎসাসেবা পেতে বিড়ম্বনার শিকার না হয় তাও নিশ্চিত করা উচিত। দেশের ব্যাংক, বীমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তাদের সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কর্মসূচি নিলে মানুষ উপকৃত হবে। ওষুধকোম্পানি ও চিকিৎসকদের সংগঠনগুলোও বিভিন্ন স্থানে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করে বাড়িয়ে দিতে পারে সহযোগিতার হাত। বিত্তবানদের যৎসামান্য ভালোবাসা ও সহানুভূতিই পারে শীতার্ত মানুষের হৃদয়ে উষ্ণতার পরশ বুলিয়ে দিতে। মানুষ তো মানুষের জন্যই। পারিবারিক পর্যায়ে পরিচ্ছন্নতা রক্ষা এবং সাবধানতা অবলম্বনের বিষয়টিও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি থাকা উচিত। এই সময়ে গরম কাপড়, খাবার ও পানি ব্যবহার করা দরকার। তবে গ্যাসের চুলা ও গরম পানির ব্যবহার, চুলার উপর ভিজা জামা-কাপড় শুকানো, এমনকি খড়কুটা দিয়ে আগুন পোহাবার সময় দরকার বাড়তি সতর্কতা। আমরা আশা করতে চাই, শীতার্ত মানুষদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ার আগেই সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। তবে, সরকারের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসহায় শীতার্ত মানুষের সাহায্যার্থে আমাদের সবার সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আসুন সবাই নিজ নিজ সামর্থ্য নিয়ে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট