চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

দাঁড়াতে হবে শীতার্তদের পাশে

জাবেদুর রহমান

২২ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ

গ্রীষ্মকালের পর যেমন শীতকাল আসে তেমনিভাবে সুখের পর দুঃখ আসে। আর সুখ-দুঃখকে নিয়েই আমাদেরকে জীবনযাপন করতে হয়। একইভাবে, শীতকাল এসেছে ধনীদের জন্য সুখ, আনন্দ ও উল্লাস নিয়ে এবং গরীবদের জন্য দুঃখ, হতাশা ও অশান্তি নিয়ে। একদিকে, শীতকাল আসলে বিত্তবান শ্রেণির মানুষগুলো খুশিতে আনন্দিত হয়। অন্যদিকে শীতকাল আসলে গরীব, দুর্ভাগা, সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো দুঃখিত হয়। আমাদের সমাজে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য শীতকাল হল এক ধরনের অভিশাপ। আমরা জানি, সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো গ্রীষ্মকালে বা গরমের দিনে ফুটপাত, রেলস্টেশন ও বস্তিতে থাকতে পারে। কিন্তু শীতকালে তাদের জন্য ফুটপাত কিংবা রেলস্টেশনে থাকা খুবই কষ্টকর বা অসহনীয়। তাছাড়া শীতে তাদেরকে মাঝেমধ্যে না খেয়েও থাকতে হয়। কারণ খেতে হলে তো কাজ করতে হবে, কাজকর্ম ছাড়া কেউ তো তাদেরকে আহার দিবে না। তাই শীতকালে না পারে তারা শান্তিতে ঘুমাতে, না পারে ভালোভাবে খেতে, না পারে তারা ঠিকমত কাজ করতে। শীতে তাদের জীবনযাপন শুধু কষ্টকরই না মৃত্যুর ঝুঁকিও বটে।
এই বিশ্বে সবাই জীবনযাপন করতে চায় দুঃখ ও কষ্ট ছাড়া এবং আনন্দের সাথে তাদের জীবনকে পরিচালনা করতে চায়। আল্লাহতায়ালা আমাদের মধ্যে কাউকে ধনী বানিয়ে পাঠিয়েছেন, কাউকে গরিব বানিয়ে পাঠিয়েছেন, কাউকে আবার ফকির বানিয়ে পাঠিয়েছেন। এইটায় দুনিয়ার নিয়ম। তাছাড়া আরেকটি নিয়ম যা আমরা সবাই জানি, এই পৃথিবীতে চিরকাল কেউ বেঁচে থাকে না, সময়ের পরিবর্তনে সবাই এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়। আর যারা এই পৃথিবীতে ভালো কাজ করে যেমন- একজন লেখক মৃত্যুর পর তার লেখাগুলো এই পৃথিবীতে রেখে আর পাঠক লেখকের লেখাগুলো পড়া দ্বারা তাকে স্মরণ করে। তেমনিভাবে যারা এই পৃথিবীতে জীবিত অবস্থায় দেশের জন্য ও সমাজের জন্য কাজ করে। তাদেরকে মৃত্যুর পরও জাতি স্মরণ করে। যেমন- মুক্তিযোদ্ধা। ঠিক একইভাবে যখন শীতকাল আসে, তখন সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো অসহায়ত্বের মতো থাকিয়ে থাকে প্রভাবশালী ও বিত্তবান মানুষের দিকে। যখন তারা এসে বলবে এই নাও তোমার শীতের কাপড়। শীতে আমরা যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল আছি, তারা শীতকালে নতুন কাপড়, নতুন সু-জুতা, নতুন জ্যাকেট ক্রয় করে থাকি। পাশাপাশি, যদি আমরা নতুন কাপড় ক্রয় করার পর, আমাদের পুরাতন কাপড় ঘরে না রেখে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মধ্যে বিতরণ করে দেই। তাহলে একটু হলেও তাদের শীত নিবারণ হবে।
ধণাঢ্য ব্যক্তিদের পাশাপাশি তরুণ সমাজকে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে। বর্তমান সময়ে তরুণ-তরুণীরা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে অসহায় মানুষদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য শীতকালে বস্ত্র বিতরণ, খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে থাকে। এ কাজে সবাইকে সংযুক্ত করা গেলে শীতার্তরা উপকৃত হবেন।
পল্লীকবি জসিমউদ্দিন ‘সবার সুখে’ কবিতায় বলেছেন-
‘সবার সুখে হাসব আমি
কাঁদব সবার দুখে,
নিজের খাবার বিলিয়ে দিব
অনাহারীর মুখে।’
কবি বুঝাতে চেয়েছেন, আমি সবার আনন্দের সময়ে তাদের পাশে থেকে আনন্দ উপভোগ করব। পাশাপাশি, আমি সবার দুঃখে দুঃখিত হব এবং আমি তাদের খারাপ সময়েও পাশে দাঁড়াব। যদি অসহায় মানুষরা খেতে না পারে, আমি তাদেরকে খাবার দিয়ে সাহায্য করব। কবিতাটির মর্মার্থ উপলব্ধিতে আমাদের সবার উচিত গরীবের পাশে দাঁড়ানো। আমাদেরকে একে অপরের পাশে থাকা উচিত। দৈনন্দিন জীবনের কাজে কে কোন সময় উপকারে আসবে কেউ আমরা জানি না। তবে আমাদের দুর্দিনের সময় কেউ না কেউ আমাদের পাশে থাকে এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি আমাদেরকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা জোগায়। যদি আমরা সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের প্রতি একটু মানবতা দেখাই এবং পাশে দাঁড়াই তাহলে আমরা তাদের অশান্তি একটু হলেও দূর করতে পারব পাশাপাশি তাদের মুখে হাসি ফুটাতে সক্ষম হব। এই কনকনে শীতে ফুটপাত, রেলস্টেশন ও বস্তিতে বসবাস করার মানুষগুলো শান্তিতে নেই। আমাদের সবার উচিত সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদেরকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া। সরকারের পাশাপাশি আমরা সবাই এগিয়ে আসলে শীতার্তরা উপকৃত হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট