চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

পাড়ি দিতে হবে আরও অনেক পথ লিঙ্গ সমতায় অগ্রগতি

২১ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:১২ পূর্বাহ্ণ

বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন সূচকে এক ধাপ এগিয়ে ১৩৫তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। শিক্ষা, আয়, সম্পদের উৎস, বৈষম্য, লৈঙ্গিক সমতা, দারিদ্র্য, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, স্বাস্থ্য, শিক্ষাখাতসহ বিভিন্ন মাপকাঠির অগ্রগতি নিয়ে ইউএনডিপি প্রতি বছর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এখন লিঙ্গ সমতায়ও দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২০’-এ নারী-পুরুষের সমতার দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সব দেশের ওপরে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। আর এ বিষয়ে সূচক তৈরিতে ব্যবহৃত মানদ-গুলোর চারটিতেই বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম। প্রাথমিক স্তরে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা, মাধ্যমিকে ছেলেমেয়ের সমতা, ছেলে ও মেয়েশিশুর জন্মানোর ক্ষেত্রে এবং সর্বশেষ সরকারপ্রধান হিসেবে নারীর সর্বোচ্চ ক্ষমতায়নে এগিয়ে বাংলাদেশ। ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৫০তম। এটি নিশ্চয়ই আমাদের জন্যে আশা জাগানিয়া সুখবর।

ডব্লিউইএফ’র প্রতিবেদন তৈরিতে অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সম্ভাবনা, রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা- এই চারটি উপসূচক ব্যবহার করা হয়েছে। আর এগুলোর জন্য মোট ১৪টি মানদ- বিবেচনা করা হয়েছে। এসব মানদ-ের মধ্যে চার মানদ-ে বাংলাদেশ এক নম্বরে আছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পরে রয়েছে নেপাল। দেশটির অবস্থান ১০১তম। এ ছাড়া শ্রীলংকা ১০২, ভারত ১১২, মালদ্বীপ ১২৩, ভুটান ১৩১ ও পাকিস্তানের অবস্থান ১৫১তম। বিশ্বে সবচেয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে আইসল্যান্ড। এর পরেই রয়েছে যথাক্রমে নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও নিকারাগুয়া। একেবারে শেষে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইয়েমেন। এবার বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৭২৬। প্রথম অবস্থানে থাকা আইসল্যান্ডের স্কোর শূন্য দশমিক ৮৭৭। প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম, স্বাস্থ্যে ১১৯তম এবং শিক্ষায় অর্জন সূচকে অবস্থান ১২০তম। অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সম্ভাবনা উপসূচকে বাংলাদেশের অবস্থান তেমন ভালো নয়। ১৪১তম। উল্লেখ্য, ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে থেকে ডব্লিউইএফ এ সূচক প্রকাশ করছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটি বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় রাষ্ট্র পরিচালনায় নারী রয়েছেন। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তবে প্রতিবেদনে শীর্ষ পদে নারী থাকলেও মন্ত্রিপরিষদে মাত্র ৮ শতাংশ নারী প্রতিনিধি এবং সংসদে রয়েছেন ২০ শতাংশ নারী থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণের পর লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দেন। সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা ক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃণ করে দেন। ছেলে ও কন্যাশিশুর মধ্যে বৈষম্য হ্রাস, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিস্তৃৃতকরণ, পরিকল্পিত উপায়ে নারীর অবৈতনিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা, উপবৃত্তি এবং অভিভাবকদের প্রণোদনা দেওয়া, স্বাস্থ্যসেবার পথ সুগম করা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নসহ নানাক্ষেত্রেই তিনি নারীবান্ধব নীতি গ্রহণ করেন। এর সুফল আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। সমাজ ও রাষ্ট্রে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। নারীশিক্ষার প্রসার এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কারণে নারীনির্যাতনের চিত্রেও পড়েছে ইতিবাচক প্রভাব। লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠায় এসব উদ্যোগ ও অর্জন ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। আবার লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠায় সাফল্য দেশের অগ্রগতির চাকাকেও বেগবান করেছে। তবে নারীর এগিয়ে যাওয়ার পথে ইভটিজিং, গোঁড়ামি ও কুসংস্কার, বাল্যবিয়ে, যৌন হয়রানি, দারিদ্র, শ্রম অনুযায়ী পারিশ্রমিক না পাওয়াসহ এখনো অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূরীকরণে নিতে হবে যুক্তিপূর্ণ উদ্যোগ। সরকারের পাশাপাশি সব সচেতন নাগরিককেও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে। সবার আন্তরিক চেষ্টা থাকলে লিঙ্গসমতায় শীর্ষে অবস্থানের পাশাপাশি বাংলাদেশে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রাও দ্রুততর হবে। ২০৪১-এর আগেই দেশ পৌঁছে যাবে উন্নত দেশের কাতারে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট