চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

স্মরণ : অধ্যক্ষ আল্লামা সৈয়্যদ শামসুল হুদা (র)

শাহজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ মুহিব উল্লাহ নক্সবন্দী

১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:০৯ পূর্বাহ্ণ

তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। (সূরা মুজাদালাহ)। এভাবেই মহান রব তার স্বীয় বানী দ্বারা হক্কানি আলেমগণের মর্যাদা কুরআনুল কারিমে তুলে ধরেছেন। মহান রব কর্তৃক ঘোষিত এ সুমহান নেয়ামতের অধিকারী হিসেবে অন্যতম একজন ব্যাক্তিত্বের নাম আউলাদে রাসূল (দ) অধ্যক্ষ আল্লামা সৈয়্যদ শামসুল হুদা (র)। পূর্ববর্তীদের যোগ্য উত্তরসূরী, পরবর্তীদের দলীল, আলিমগণের সূর্য, আল্লাহর নূররাশির প্রকাশস্থল, নবীকূল সর্দার সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় পাত্র, গুনীদের পূর্ণিমা চাঁদ এবং কামিলদের গর্ব হিসেবে এ মহান মনীষি এদেশের মানুষের কাছে শ্রদ্ধার আসনে আসীন হয়ে আছেন। বহু আউলিয়ার স্মৃতিধন্য, আদর্শবান তাপসগণের অন্যতম প্রকাশস্থল ফটিকছড়ি উপজেলার ১৭নং জাফতনগর ইউনিয়নের তেলপারই নামক গ্রামে সৈয়দ বাড়ী দরবার শরীফের অন্যতম আধ্যাত্মিক পুরুষ হিসেবে এ মহান মনীষী স্বীয় রওজা শরীফে শায়িত থেকেও আলোকিত জীবনচরিতের মাধ্যমে আজো সকলের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

“তোমরা আমার নিকট হতে দ্বীনের একটি বাণী হলেও প্রচার করো। রাসূলুল্লাহর এ পবিত্র বাণীর প্রতি আমল রেখে দ্বীন ইসলামের একজন যোগ্য দ্বায়ী এবং একই সাথে ত্বরিকায়ে কাদেরিয়া এবং নক্সবন্দীয়ার একজন যোগ্য রাহবার হিসেবে যাবতীয় অহংকার, আমিত্ব, জাগতিক লোভ-লালসাকে পদদলিত করে প্রকৃত সূফীতত্ত্বের চর্চাকারী হিসেবে তিনি সর্বদা সাধারণ জীবনযাপন এবং সুমিষ্ট আচরণের মাধ্যমে ইলমে দ্বীন এবং তরিক্বতের সুবিশাল খিদমত আনজাম দিয়েছেন। ইসলামী সুশিক্ষার আলোই দেশ ও জাতির সফলতার চাবিকাঠি ও পথনির্দেশক। এ শিক্ষাই মানুষকে দান করে জাগতিক মর্যাদা এবং নিশ্চিত করে পরকালীন মুক্তি। আর এ শিক্ষার প্রচারক হিসেবে একজন আলোকবর্তিকা হিসেবে আউলাদে রাসূল (দ) অধ্যক্ষ আল্লামা সৈয়দ শামসুল হুদা (র) সুদীর্ঘ ৩৮ বছর চট্টগ্রাম সোবহানিয়া আলীয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ পদে আসীন থেকে ইসলামি সুশিক্ষার প্রচারক হিসেবে আদিষ্ট হয়ে এবং একইসাথে তরিক্বতের রাহবার হিসেবে একজন যোগ্য পীরে কামেল, বাংলার সুন্নীয়তভিত্তিক আদর্শ প্ল্যাটফর্মের অন্যতম অভিভাবক, সব মিলিয়ে তিনি যে দ্বীনি খিদমত জাতিকে উপহার দিয়েছেন তার বর্ণনা সংকিপ্ত পরিসরে দেয়া সম্ভব নয়।

হযরত ইবনে আব্বাস রাদি আল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- এ উম্মাতের আলেমরা দু’শ্রেণিতে বিভক্ত। প্রথম শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন সে আলেম যাকে আল্লাহতায়ালা ইলম দান করেছেন, আর সে তাঁর ইলম জনগণের মধ্যে ব্যয় করেছেন, লোভ-লালসার বশীভূত হয়ে মানুষের নিকট থেকে কোন রূপ বিনিময় গ্রহণ করেন নি কিংবা তা বিক্রয়ও করেননি। সেই আলেমের জন্য জলভাগের মৎস্য, স্থলভাগের সকল প্রাণী এবং মহাশূন্যে উড়ন্ত পক্ষীকুল তার জন্যে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর দ্বিতীয়শ্রেণির আলেম হচ্ছে- যাকে আল্লাহ ইলম দান করেছেন, কিন্তু সে আল্লাহর বান্দাদের সাথে (তার ইলম খরচ করার ব্যাপারে) কৃপণতা করেছে, লোভ-লালসার বশবর্তী হয়ে (ইলম খরচ করে কিংবা ইলম শিক্ষা দিয়ে) বিনিময় গ্রহণ করেছে এবং মূল্যের বিনিময়ে বিক্রয় করেছে। (তার শাস্তি হলো) কিয়ামত দিবসে তাকে আগুনের লাগাম দেয়া হবে এবং একজন আহ্বানকারী শব্দ করতে (বলতে) থাকবেন যে, “এ ব্যক্তি হচ্ছে ঐ আলেম, যাকে আল্লাহতায়ালা ইলম দান করেছিলেন কিন্তু সে আল্লাহর বান্দাদের সাথে (ইলমের ব্যাপারে) কৃপণতা করেছে, লোভের তাড়নায় বিনিময় গ্রহণ করেছে এবং মূল্যের বিনিময়ে ইলম বিক্রয় করেছে।” আর এ’ভাবে হাশর ময়দানের কাজ সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত শব্দ করতে থাকবে। [তিবরানী]।এ হাদীসের আলোকে আল্লামা সৈয়দ শামসুল হুদা(র) এর জীবনচরিত বিশ্লেষণ করলে সহজেই বুঝা যায় তিনি প্রথমশ্রেণির একজন আলেমে দ্বীন ছিলেন।।

এ জাগতিক জীবন থেকে পর্দা করে আপন মাজারে শায়িত হয়ে তিনি এখনো ফয়ুজাতের বরকত দ্বারা জাগতিক মানুষের অন্তরাত্মার পরিশুদ্ধতা দিয়ে চলেছেন, এরই মাধ্যমে বুঝা যায় তিনি মহান আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দাগণের অন্যতম একজন। শুধু তাই নয়, সঠিক দ্বীনি ইলমের প্রসার যেন বহমান থাকে সে প্রচেষ্টায় তাঁর নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত সৈয়দ বাড়ী দরবারস্থ শামসুল উলুম গাউছিয়া সুন্নিয়া সিনিয়র মাদরাসা এবং জাফত নগর সৈয়দা জোহরা বেগম হেফজখানা ও এতিমখানা আজো ইলমে দ্বীনের সুঘ্রাণ ছড়িয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, প্রতি বছর ১৯ ডিসেম্বর এ মহান মনীষীর বার্ষিক উরস এবং মাদ্রাসাটির সালানা জলসা নানবিধ আয়োজনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। জাগতিক জীবনে সম্পূর্ণ লোভ-লালসা মুক্ত জীবনের অধিকারী হিসেবে জীবন অতিবাহিত করা এ জ্ঞানসাধক তাঁর ভক্তবৃন্দের কাছে দুনিয়াবী কোন চাহিদা না রেখে, শুধুমাত্র দ্বীন ইলমের চর্চার সহযোগী হতে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাটিকে আমানত হিসেবে পরবর্তী প্রজন্মকে প্রদান এবং সেটির সেবায় নিয়োজিত থাকার নসীহতনামা প্রদান করেছেন। জ্ঞানীব্যক্তিগণের জীবনচরিত পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পথনির্দেশক। সে হিসেবে বহুগুণে গুণান্বিত এ মহান জ্ঞানসাধকের জীবনচরিত সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। প্রকৃত জ্ঞানীদের অনুসরণের মাধ্যমে বেড়ে উঠুক জ্ঞানের প্রসারতা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট