চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জানাই বিন¤্র শ্রদ্ধা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৩৪ পূর্বাহ্ণ

আজ বাঙালি জাতির শোক আর বেদনার দিন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতি যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন বুঝে নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে তাদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী, ঠিক তখনই তারা জাতিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশায় বুদ্ধিজীবী হত্যায় মেতে ওঠে। আর তাদের পাশবিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করে একাত্তরের এই দিনে। বাস্তবায়ন করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ দেশীয় দোসররা। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নীলনকশায় রাজাকার, আলবদর, আলশামস চক্রের সদস্যরা এ দেশের প্রথিতযশা সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গুণীজনদের নির্বিচারে হত্যা করে বাঙালি জাতির ওপর চরম আঘাত হানে। এদিন হানাদার বাহিনীর তৈরি করা তালিকা অনুযায়ী রাজাকার, আলবদর, আলশামস চক্রের সদস্য কুলাঙ্গাররা ঘর থেকে ধরে নিয়ে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে। আজ আমরা ঘাতকদের প্রতি চরম ঘৃণা প্রকাশ করছি। গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের, জাতি যাদের হারিয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনালগ্ন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত বিজয়ের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত। একই সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করছি শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের স্বজনদের প্রতি, যারা প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে আপনজন হারানোর নির্মম বেদনা ও কষ্ট বয়ে চলেছেন।

একাত্তরে পাকবাহিনী কর্তৃক বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞের একটি বড় উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা লাভ করতে যাওয়া বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করে ফেলা। ২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ শুরুর পর থেকেই পাকবাহিনী ও তার দোসররা গণহত্যার পাশাপাশি বেছে বেছে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে, যারা বিবেচিত হতেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক হিসেবে, জাতির বিবেক ও কণ্ঠস্বর হিসেবে। উল্লেখ্য, একাত্তরের ১২ ডিসেম্বর প্রাদেশিক সরকারের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর সভাপতিত্বে ঢাকা সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত আলবদর, আলশামসের কেন্দ্রীয় অধিনায়কদের বৈঠকে বুদ্ধিজীবী হত্যার তালিকা দেয়া হয়। বৈঠকের পর পরই অনেককে অপহরণ করে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্যরা। এরপর থেকে অপহরণকৃত সেসব কৃতী বাঙালির কোনো খোঁজ মেলেনি। এই কুলাঙ্গাররা জাতির প্রগতিশীল চিন্তার সেরা মেধাবীদের বেছে বেছে হত্যা করেছিল, যাতে বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে হাঁটতে না পারে। মুক্তিযুদ্ধের গোটা সময়টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলাশহরে হত্যা করা হয় টার্গেটকৃত বুদ্ধিজীবীদের। পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর হত্যাকারীরা ঢাকার রায়েরবাজার ও মিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রেখে যায়। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই তাদের নিকট আত্মীয়রা বধ্যভূমিতে স্বজনদের লাশ খুঁজে পান। যদিও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর হত্যাযজ্ঞের শিকার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। তবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে বাংলাপিডিয়ায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী এর সংখ্যা সহস্রাধিক। বাঙালি জাতি যখন রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের ক্ষতচিহ্ন নিয়ে বিজয়কে বরণ করার জন্য অপেক্ষমাণ ঠিক তখনই দেশসেরা এই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। যার মূল উদ্দেশ্যই ছিল বাঙালি জাতিকে মেধা ও নেতৃত্বশূন্য করা। বুদ্ধিজীবী হত্যাকা- ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম বর্বর ঘটনাগুলোর অন্যতম। যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল।

শহীদ বুদ্ধিজীবীরা সবাই ছিলেন চিন্তা ও মানবতার দিশারি। তাঁদের হারিয়ে বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। জাতীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে সেই শূন্যতা আমরা আজও অনুভব করে চলেছি। তবে বিলম্বে হলেও এই বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত কয়েকজন শীর্ষ ঘাতকের বিচার ও শাস্তি কার্যকর হয়েছে। এটি স্বস্থির। কিন্তু অনেকে এখনো পলাতক অবস্থায় আছে। তাদের ফিরিয়ে এনে দ- কার্যকর করার জোর প্রচেষ্টা থাকা দরকার। সংরক্ষণ করতে হবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি। পাশাপাশি দেশকে চালিত করতে হবে তাঁদের অনুসৃত পথে। নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁদের ত্যাগকে বহুমাত্রিক আয়োজনে উপস্থাপন করতে হবে। পাশাপাশি তুলে ধরতে হবে রাজাকার-আলবদরদের ঘৃণ্য তৎপরতা ও তাদের পরিচয়। ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই এখনো। তারা একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে সব দেশের অর্জনকে ব্যর্থ করে দিতে, দেশকে পশ্চাৎপদতার অন্ধকার গহ্বরে ঠেলে দিতে। এ অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শকে ধারণ করে সম্মিলিতভাবে সব ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। দেশের জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি রইল আমাদের বিন¤্র শ্রদ্ধা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট