চট্টগ্রাম শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪

বিজয়ের মাসে দেশপ্রেমের অঙ্গীকার

জোবায়ের আহমেদ

৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর থেকেই পাকিস্তানী ক্ষমতাসীন দল ও আর্মিদের নানা বঞ্চনা, অত্যাচার, নিপীড়ন ও অবহেলার মাধ্যমে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাবাসী মানুষদের দাবিয়ে রাখা হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকের অধিকার আদায়ের জন্য বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা হামিদ খান ভাসানী গংয়ের প্রচেষ্টা শেষে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করলেও পাকিস্তানী স্বৈরশাসকরা ক্ষমতা হস্তান্তর করেননি। তবে এ নির্বাচনের ফলাফলই মূলত বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে নিয়েছিলো।

১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শেষে ১৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মসমর্পণ করার মাধ্যমে সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৯৭২ সাল থেকেই ১৬ ডিসেম্বরকে বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয় এবং পুরো ডিসেম্বর বিজয়ের মাস হিসেবে নানা অনুষ্ঠান ও আয়োজনের মাধ্যমে বিজয় উদযাপন করা হয়।

বিজয় আমাদের সাহসী হতে শেখায়, অনুপ্রেরণা যোগায়। সংখ্যায় কম হয়েও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক আহ্বানে শুধুমাত্র দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে অধিকার আদায় ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে পাক হানাদার বাহিণীর সাথে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ।
আমাদের আছে ১৯৭১ এ বিজয়ের অহংকার, আছে সফলতা অর্জনের গৌরব। কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৮ বছর পরও মানুষ মানুষের বিপদে আপদে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে কার্পণ্য করে। মানুষের বিপদ দেখলে আপন জান বাঁচা নীতিতে সরে যায়। রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ যেকোন সমস্যায় ঐক্যবদ্ধ না হয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়, কুৎসা রটায়, যা ১৯৭১ এর অর্জন ও গৌরবমাখা অতীতের চূড়ান্ত বিপরীত হয়। দেশ স্বাধীনের জন্য যে জাতি দীর্ঘ ৪৮ বছর পূর্বে জাত, ধর্ম বর্ণ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাক বাহিনীর উপর, সে জাতি এখন নিজ লোভ লালসা, চাওয়া পাওয়া নিয়ে ব্যস্ত। দেশকে এগিয়ে নিতে, দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে পারে না।
৭১ আমাদের অহংকার, ৭১ আমাদের প্রেরণা। পাকিস্তান আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারেনি, কিন্তু দীর্ঘ ৪৮ বছর পরে এসেও আমরা নিজেরাই নিজেদের খোলসবন্ধী করে রাখছি সব বিষয়ে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছি। মানুষের কল্যাণে এবং দেশের জন্য কল্যাণকর কাজ করতে ভুলে গেছি, নাগরিক দায়িত্ব পালন করছি না ঠিকমতো, যা কাম্য নয়।

তাই আসুন, ১৯৭১ এর অবিস্মরণীয় ও যুগান্তরকারী বিজয় থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ হই, দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করি। মানুষের ও দেশের কল্যাণে সঠিকভাবে নাগরিক দায়িত্ব পালন করলে একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাক্সিক্ষত সোনার বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট