চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

মদিনার ঐতিহাসিক নিদর্শন

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক

৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:১৩ পূর্বাহ্ণ

রি য়া জুল জান্না তে নামা য আদা য়ের পর জিয়ারার জন্য মদিনা মুনাওয়ারা লবির ৫নং হাম্মাম এর সামনে আসলাম, উপস্থিতি কম হওয়াতে প্রোগ্রামটা স্থগিত করা হল। আমরা পুনরায় গালিব ভাইসহ হারাম শরীফের ভেতর ঢুকে পড়ি। ইফতার ও মাগরিব নামায শেষে ফিরে আসি হোটেলের রুমে। তারাবিহ’র নামাযে মদিনার হারাম শরীফের ইমামগণের সুললিত কন্ঠে আল্লাহর কোরআন এর আয়াতগুলো যখন শুনছিলাম তখন যেন মনে হয় আল্লাহর আরশ থেকে কোরআনের আয়াত নাযিল হচ্ছে। কান পেতে শুনি সেই অমিয় বাণী আর তৃতীয় চোখ থেকে নেমে আসে শ্রাবণের বারিধারা। এত সুন্দর কন্ঠ হতে পারে মানুষের-এটি আল্লাহর দেয়া মহামূল্যবান নেয়ামত, শোকর-গুজার শেষ করা যাবে না কস্মিনকালেও। এ কোরআনে আমরা খুঁজে পাই মানবতার মুক্তির দিশা, সৎপথে চলার সু-স্পষ্ট নিদর্শন। এ কোরআনে নিহিত রয়েছে মানবজাতির সার্বিক কল্যাণ। এ কোরআনই দিতে পারে মানবজাতির সার্বিক সমাধান। পরের দিন ২৩ মে জিয়ারার জন্য সকাল ৯টার মধ্যে নির্ধারিত গাড়িতে উঠে পড়লাম সবাই। ঐতিহাসিক মসজিদ কুবা-মদিনার প্রথম মসজিদ, যেখানে রাসূলুল্লাহ (সা) প্রতি শনিবার পায়ে হেঁটে বা উটের পিঠে সোয়ার হয়ে যেতেন এবং দু’রাকাত নামায আদায় করতেন-যাতে পূর্ণ এক ওমরাহ্র ছওয়াব পাওয়া যায়। মসজিদে কেব্লাতাইন-এটিকে দু’কেবলার মসজিদও বলা হয়। রাসূল (সা) মদিনা হিযরতের ১৬ অথবা ১৭ মাস পর তাঁর প্রবল ইচ্ছার প্রতিফলন হিসাবে আসর নামাযের সময় কেবলা পরিবর্তন হয়। ‘(কেবলা পরিবর্তনের জন্যে বারবার) আকাশের দিকে তোমার মুখ উঠানো আমি দেখতে পেয়েছি, অতপর আমি তোমাকে অবশ্যই এমন এক কেবলার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছি যেটাকে তুমি পছন্দ করো। (এখন থেকে) তুমি এই মর্যাদাসম্পন্ন মসজিদের দিকে তোমার মুখ ফিরিয়ে (নামায আদায় করতে) থাকবে; তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তোমাদের মুখমন্ডলগুলোকে সে দিকেই ফিরিয়ে দেবে’। সূরা আল বাকারা আয়াত- ১৪৪। উক্ত আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ১৬ মাস যাবৎ বায়তুল মুকাদ্দাস এর দিকে রাসূল (সা) এবং সাহাবিগণ তাঁর পিছনে নামায পড়েছেন। নামায পড়া অবস্থায় উক্ত আয়াত নাযিল হয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা একবার কুবা নামক স্থানে ক্বদরের নামায পড়ছিল। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, আজ রাতে রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপর কোরআন নাযিল হয়েছে এবং তাঁকে কা’বার দিকে ফিরে নামায পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একথা শুনে সকলেই কা’বাগৃহের দিকে ফিরল। ইতোপূর্বে তাদের মুখ সিরিয়ার দিকে ছিল। (এবার) তারা কা’বার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। সহীহ বোখারী- ৩৮৮। মসজিদে কেব্লাতাইনে আমরা দু’রাকাত নামায পড়ি। ওহুদের যুদ্ধ-যেটি দ্বিতীয় হিজরীতে সংগঠিত হয়, যেখানে ৭০ জন সাহাবি শহীদ হয়েছিলেন। এখানে রাসূল (সা) গর্তের মধ্যে পড়ে তাঁর দন্ত মোবারক শহীদ হয়েছিলেন। গুজব ছড়াল, আমার রাসূল (সা) শহীদ হয়েছেন, এক মহিলা রুদ্ধশ্বাসে যুদ্ধক্ষেত্র অভিমুখে ছুটছেন, একনজর রাসূল (সা) কে দেখার জন্য। পথিমধ্যে তিনি শুনতে পেলেন, তাঁর ভাই শহীদ হয়েছেন-কিছুদুর গিয়ে আবার শুনতে পেলেন তাঁর ছেলে শহীদ হয়েছেন, আবার আর একটু দূরে গিয়ে শুনতে পেলেন তাঁর প্রাণপ্রিয় স্বামীও আর বেঁচে নেই-তিনিও শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে পরপারে চলে গেছেন, তবুও তিনি এতটুকু বিচলিত হননি। রাসূল (সা) কে জীবিত অবস্থায় দেখে তিনি সমস্ত কষ্ট ভুলে গেলেন। ওহুদ যুদ্ধে শহীদগণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন রাসূল (সা) এর প্রিয় চাচা হযরত হামজা (রা), যাঁকে সাইয়েদ্যুস্ শুহাদা বলা হয়। এই মহান শহীদের একাধিক জানাযা হয় এই ওহুদ প্রান্তরে। বদরের যুদ্ধে মুশরিকরা সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয়েছিল। তাদের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় লোক সেই যুদ্ধে মারা যায়। তখন এর প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য তারা ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে থাকে। চতুর্দিক থেকে লোক সংগ্রহ করে তারা তিন হাজার সৈন্যের এক বিরাট সেনাবাহিনী গঠন করে পূর্ণ আসবাবপত্রসহ মদিনার কাছে উহুদ প্রান্তরে এসে সমবেত হয়। এদিকে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) ও তাঁর বাহিনীও বসে নেই, তাঁরাও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। রাসূল (সা) হযরত মুছআব ইবনে উমাইরকে (রা) পতাকা প্রদান করেন। এদিন কয়েকজন বালককেও রাসূলুল্লাহ (সা) এর সেনাবাহিনীর মধ্যে দেখা যায়। এ ক্ষুদে সৈনিকেরাও আল্লাহর পথে প্রাণ দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। কুরাইশ সেনাবাহিনী অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে মুকাবিলায় এগিয়ে আসে। তাদের সৈন্য সংখ্যা ছিল তিন হাজার। তাদের সঙ্গে দু’শটি সুসজ্জিত অশ্বারোহীর দল ছিল যেগুলো সময়ে কাজে আসতে পারে বলে সঙ্গে রাখা হয়েছিল। তাদের ডান অংশে ছিলেন খালিদ ইবন ওয়ালিদ এবং বাম অংশে ছিলেন ইকরিমাহ্ ইবনে আবু জাহল (এরা দু’জন পরে মুসলিম হয়েছিলেন)।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট