চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে

৪ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:১৬ পূর্বাহ্ণ

৭৯ বছরের পুরনো আইনের ভিত্তিতে তৈরি মোটরযান অধ্যাদেশ বাতিল করে শেষ পর্যন্ত চলতি নভেম্বরের প্রথম দিন থেকেই কার্যকর হলো ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’। আইনটি কার্যকর করার মধ্য দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছার প্রমাণ মিললো। আইনটি বাস্তবায়নের জন্যে দেশবাসীকে অপেক্ষা করতে হয়েছে এক বছরেরও বেশি সময়। নতুন আইনে বেপরোয়া গাড়ি চালকের কারণে মৃত্যু হলে পাঁচ বছর কারাদ- বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। আর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চালক বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে হত্যাকা- ঘটালে দ-বিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা হবে ফাঁসি। আইনে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে গুরুদ- নিশ্চিত হবে। তবে আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর আপত্তি এবং সড়ক পরিবহন খাতে দীর্ঘদিনের চলা রীতিনীতিসহ নানা কারণে আইনটির কার্যকর প্রয়োগ ও সড়কদুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আদৌ প্রভাব পড়বে কিনা ধোঁয়াশা রয়েছে।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আইনটি কার্যকরের প্রতিক্রিয়ায় পরিবহণ খাত সংশ্লিষ্ট অনেকে আশঙ্কা করছেন, যথাযথ প্রস্তুতি এবং বিধিমালা প্রণয়ন ছাড়া এ আইন কার্যকর করায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। আবার সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীলরা বলছেন, নতুন আইনে সব ধারায় আগের চেয়ে সাজা বাড়ানো হয়েছে। ফলে আইনটি কার্যকর হলে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা কমে আসবে। তবে আইনটি বাস্তবায়নে যে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে তা অস্বীকারের উপায় নেই। উল্লেখ্য, নতুন সড়ক আইনে শিক্ষানবিশ লাইসেন্স ছাড়া কর্তৃপক্ষের দেয়া যে কোনো লাইসেন্সের বিপরীতে ১২ পয়েন্ট দেওয়া থাকবে। দোষ করলে তা কাটা যাবে। লালবাতি অমান্য, ওভারটেক, গতিসীমা অমান্য, বিপরীত দিক থেকে গাড়ি চালানো, ওজনসীমা লংঘন, নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালালে পয়েন্ট কাটা যাবে চালকের। এ বিধান আগে ছিল না। এ আইনে নিয়োগপত্র ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যক্তিকে গণপরিবহনের চালক নিয়োগ করতে পারবে না। নিয়োগপ্রাপ্ত চালক তাঁর কাগজপত্র গাড়িতে প্রদর্শন করবেন। এ ছাড়া কন্ডাক্টর লাইসেন্স ছাড়া কন্ডাক্টর নিয়োগ করা যাবে না বলে বিধান করা হয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদ- বা অনধিক ২৫ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। আগে এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল চার মাসের কারাদ- বা ৫০০ টাকা অর্থদ-।

লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে অনধিক ছয় মাসের জেল বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান রয়েছে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালালে ছয় মাসের জেল বা অনধিক ২৫ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ- দেয়া হবে। এছাড়া হেলমেট ছাড়া মোটারসাইকেল চালালে ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর প্রাণহানির ঘটনায় গড়ে উঠা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হয়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা আইনটি সংশোধনের জন্য তৎপর হয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় আইন কার্যকরের ঘোষণা দেয়।

নতুন আইনে সব ধারায় আগের চেয়ে সাজা বাড়ানো হয়েছে। ফলে আইনটি কার্যকর হলে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা কমে আসবে সন্দেহ নেই।
বিশ^ব্যাংকের তথ্য বলছে, সড়কদুর্ঘটনায় হতাহতের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশের অবস্থান। বিশেষ করে গত দু’দশকে মাথাপিছু সড়কদুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে গড়ের চেয়ে তিনগুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের সড়কনিরাপত্তা বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে বছরে ২৪ হাজারের বেশি মানুষ সড়কদুর্ঘটনায় মারা যায়। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, দেশে দিন দিন সড়কদুর্ঘটনার মাত্রা বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন পরিবহন আইন কার্যকর হলে সড়কদুর্ঘটনার হার ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসবে। এতে টেকসই উন্নয়নের পথ মসৃণ হবে। সহজ হবে ভিশন ‘২১-‘৪১ অর্জন। তাছাড়া ২০২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সড়কদুর্ঘটনায় মৃত্যু ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনা সরকারের একটা ভিশনও রয়েছে। এই ভিশন পূরণেও নতুন আইন সাহায্য করবে। তবে সব ফলই নির্ভর করছে আইনটির কার্যকর প্রয়োগের উপর। আমরা আশা করবো, আইনটি বাস্তবায়নে দেশ ও জনস্বার্থে সব পক্ষই সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট