চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪

শোকাবহ জেলহত্যা দিবস

৩ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:২৩ পূর্বাহ্ণ

আজ ৩ নভেম্বর, শোকাবহ জেলহত্যা দিবস। শোকাবহ ১৫ আগস্টের পর এটি জাতির জন্যে সবচেয়ে বেদনার দিন, শোকের দিন। এটি মানবসভ্যতার ইতিহাসে কলঙ্কময়, রক্তঝরা ও বেদনাবিধুর একটি দিন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী চার জাতীয় নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। একাত্তরের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা সেদিন দেশমাতৃকার সেরা সন্তান জাতীয় এই চারনেতাকে শুধু গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, কাপুরুষের মতো গুলিবিদ্ধ দেহকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে বর্বরোচিত কায়দায় ক্ষত-বিক্ষতও করেছে। ইতিহাসের এই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, স্তম্ভিত হয়েছিল সারাপৃথিবী। কারাগারে থাকা অবস্থায় বর্বরোচিত এ ধরনের হত্যাকা- পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। মানবসভ্যতার ইতিহাসে চিরকাল এই ৩ নভেম্বর কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। আজকের এই শোকাবহ দিনে আমরা শহীদ চার জাতীয় নেতার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। তাঁদের স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।

১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা বর্বরোচিতভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে জাতীয় জীবনে লেপন করে দেয় অমোচনীয় কলঙ্কের দাগ। তার মাত্র দুইমাস আঠারো দিনের মাথায় স্বাধীনতাবিরোধীচক্র ফের আঘাত হানে জাতির হৃদপি-ে। বঙ্গবন্ধুর আজীবন রাজনৈতিক সহচর, বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যারা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই জাতীয় চার নেতাকে ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। এই নৃশংস হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাসে জাতিদ্রোহী ঘাতকচক্র সংযোজন করে বর্বরতার আরেকটি নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। এ ধরনের বর্বর হত্যাকা- পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। ষড়যন্ত্রকারীরা এই হত্যাকা-ের মাধ্যমে বাংলার মাটি থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। এদেশে যেন কোনদিন স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, বাংলাদেশ যাতে এগিয়ে যেতে না পারে, স্বাধীনতা যাতে ব্যর্থ হয়, স্বাধীন বাংলাদেশ যাতে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়, সেই চক্রান্ত থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী চক্র নিরাপদ স্থান জেলখানার অভ্যন্তরে এই বর্বর হত্যাকা- সংগঠিত করে।

শুধু মুক্তিযুদ্ধ নয়, সব আন্দোলন-সংগ্রামে এই চার নেতা ঘনিষ্ট সহযোদ্ধা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন। বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধুকে যখন কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে তখন আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিবনগর সরকারের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে এদেশের জনগণকে একত্রিত করে বিজয়ের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছেন। ঘাতকচক্র তাঁদেরকে নির্মম কায়দায় হত্যা করে বাঙালি জাতিকে নেতৃত্ব শূন্য করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তানের পদানত করতে চেয়েছিল। কিন্তু ঘাতকদের সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বীরবাঙালি সব ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে তাঁর নেতৃত্বে দেশ-উন্নয়নে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এখন বাংলাদেশ সারাবিশ্বের বিষ্ময়, উন্নয়নের রোলমডেল। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ এবং জাতীয় চার নেতার সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে সবাই যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করলে নিকটভবিষ্যতেই বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে সামিল হবে।

জাতির জনক ও জাতীয় চার নেতার স্বপ্নের আদলে বাংলাদেশ বিনির্মাণের আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি সব ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক বিচারও সম্পন্ন করতে হবে। প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ও জেল হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করেন। তবে দ-প্রাপ্ত কয়েকজন ঘাতকের সাজা হলেও বাকিরা পলাতক। এই হত্যাকারীরাই জেল হত্যায়ও জড়িত ছিল। তাদের ধরে এনে রায় কার্যকর করতে কঠোর পদক্ষেপ চায় দেশবাসী। জেলহত্যার নেপথ্যে সংঘটিত ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটনও এখন জাতীয় দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কারা ষড়যন্ত্রকারী, কারা প্ররোচনাদানকারী সেসবও তদন্ত জরুরি। আমরা আশা করতে চাই, সরকার এ বিষয়ে দ্রুত জনকাক্সিক্ষত পদক্ষেপ নেবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট