চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪

ক্রিকেটাঙ্গনে কালো মেঘের উপস্থিতি

সাকিব জামাল

২ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:২৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের ক্রিকেট কোটি কোটি বাঙালির ভালোবাসার জায়গা, ঐক্যের জায়গা এমনকি জাতীয় সংহতির মাধ্যম।

দুর্ভাগ্যক্রমে গত কয়েকদিন ধরে ক্রিকেটাঙ্গনে উদ্বেগজনক অস্থিরতা লক্ষণীয়। জাতীয় ক্রিকেটদল এবং ক্রিকেটবোর্ডের বিভিন্ন খবরে আমরা দর্শকেরা, ক্রিকেটপ্রেমীরা চিন্তাক্লিষ্ট হয়ে পড়ছি। অনেক নৈরাশ্যবাদী ক্রিকেটপ্রেমীরা ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন- বাংলাদেশের ক্রিকেট কি জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের মত পরিণতির দিকে যাচ্ছে? তেমন পরিণতিতো দূরের কথা, এমন প্রশ্ন উত্থাপিত হোক আমরা তাও চাই না! আমরা সর্বদা আশাবাদী থাকতে চাই বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে- বিশেষত এই কারণে আমাদের পরবর্তী স্বপ্ন বাংলার টাইগারদের বিশ্বজয়! সে স্বপ্ন দেখেই যাবো আমরা। আমরা ক্রিকেটাঙ্গনে কালো মেঘের উপস্থিতি চাই না!

ক্রিকেট অঙ্গনের সাম্প্রতিক অস্থিরতা আমরা যারা কেবল দর্শকমাত্র তাদের পক্ষে অনুসদ্ধান, কারণ নির্ণয় বা সমাধানের কোন সুযোগ নেই, সম্ভবও নয়। তবে আমরা আমাদের ভালোবাসার জানান দিতে পারি, আমাদের চাওয়াকে প্রকাশ করতে পারি।

দীর্ঘকালধরে আমাদের তরুণ প্রজন্মের হৃদয়ের গহীনে ক্রিকেট বেশ শক্তভাবে ভালোবাসার জায়গাটি দখল করে নিয়েছে, বিশেষ করে ফুলবলের জনপ্রিয়তাকে ছাঁপিয়ে। খেলার জয়-পরাজয় উপেক্ষা করে ক্রিকেট ধীরে ধীরে একান্ত প্রিয় হয়ে উঠেছে প্রায় সব বাঙালির কাছে। ইদানিং আমাদের অর্জনও কিন্তু কম নয়, বড় বড় অনেক ক্রিকেট টিমকে আমরা হারাতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট নৈপুণ্যের প্রশংসা অব্যহত আছে।। তবে হঠাৎ করে কয়েকদিন যাবত কয়েকটি সিরিজ ঘটনা ক্রিকেটাঙ্গনে কালো মেঘের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। যা ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে অনাকাক্সিক্ষত বটে। আমরা লক্ষ্য করছি ক্রিকেটবোর্ড এবং ক্রিকেটারদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির নানা খবর, বিশেষত সাকিব-আল-হাসান এবং ক্রিকেটবোর্ড প্রায় মুখোমুখী অবস্থানে! এটি আমাদের মধ্যে বেশ উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। কারণ বোর্ড এবং ক্রিকেটারদের সম্পর্ক যদি খারাপ থাকে তার প্রভাব খেলার মাঠে অবশ্যই পড়বে । ক্রিকেটার এবং বোর্ডের মধ্যকার সম্পর্ক মধুর হওয়া বাঞ্জনীয়। বোর্ড যেহেতু ক্রিকেটারদের অভিভাবক তাই তাদেরই দায়বদ্ধতা বেশি। কোন ক্রিকেটার ভুল করলে তাকে সংশোধন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে এটি আবশ্যই সত্য- তবে বৃহৎপরিসরে এবং অভিভাবকসুলভ ভাবনা বজায় রেখে সমস্ত কর্মসম্পাদন যাতে দেশের ক্রিকেটের কোন ক্ষতি না হয়। ঠিক তেমনি ক্রিকেটারদেরও বোর্ডকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে- ব্যক্তি স্বার্থের কারণে দেশের ক্রিকেটের বা বোর্ড ও দেশের ইমেজ যেন ক্ষুণœ না হয় সেদিকে সচেতনভাবে লক্ষ্য রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। অর্থাৎ যে করেই হোক ক্রিকেটের স্বার্থেই পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে বোর্ড এবং ক্রিকেটাদের মাঝে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। এটিই ক্রিকেটপ্রেমী হিসেব আমাদের চাওয়া। এই সুসম্পর্কের অভাব দেখা দিলে কালো মেঘ আরো ঘনীভূত হতে পারে, হতে পারে ঝড়- ল-ভ- করে দিতে পারে আমাদের ক্রিকেটের সব স্বপ্ন।

আমাদের আরেকটি চাওয়া হলো, বোর্ড বা ক্রিকেটার বা ক্রিকেটের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ে মতের মিল বা অমিল হতে পারে, হওয়া স্বাভাবিকও । তবে এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত অমিলকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না- দেশের ক্রিকেটের প্রয়োজনে ছাড় দিতে হবে এবং কোনভাবেই এই অমিলকে রেষারেষির পর্যায়ে নেয়া যাবে না, পারস্পরিক দোষারোপের সংস্কৃতিতে প্রবেশ করা যাবে না, আলোচনার টেবিলে বিতার্কিকদের যুক্তি নির্ভর হতে হবে, ঝগড়াটের মত নয়। তাই এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে মতানৈক্য কমিয়ে ক্রিকেটের প্রতি প্রেমকে অক্ষুণœ রাখতে হবে। আর সে আবেশে আমরাও ভাসবো লাল সবুজের ক্রিকেটপ্রেমে পুরো সময়জুড়ে।

এছাড়া আমাদের একটি বৈশ্বিক চাওয়া রয়েছে- বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোতে আমাদের অবস্থান সংহত করে আমাদের দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরতে হবে। দেশের ক্রিকেট বা ক্রিকেটারদের ব্যাপারে ক্ষতিকর কোন সিদ্ধান্ত এলে যুক্তিসংগতভাবে তা মোকাবেলা করতে হবে। এক্ষেত্রেও ক্রিকেটার এবং বোর্ডকে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সহমর্মিতার ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান করতে হবে। উল্লেখ্য, এসব নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহ যদি আমাদের ক্রিকেট বা ক্রিকেটারদের ব্যাপারে বিতর্কিত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তার বিরুদ্ধে বোর্ড এবং ক্রিকেটারদের সমস্বরে কথা বলতে হবে ।

নিয়মমাফিকভাবে বিশ্বক্রিকেটেও আমাদের ক্রিকেটের শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করতে হবে। ক্রিকেট আমাদের ভালোবাসা, ব্রেকআপ হয় না যেন! করো কারণে, কোন কারণে আমরা ক্রিকেটাঙ্গনে কালো মেঘের ঘনঘটা দেখতে চাই না। আমরা শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেটের জয়গান করতে চাই, প্রাণখুলে কেবল গাইতে চাই- ‘বেশ বেশ বেশ সাবাস বাংলাদেশ/ যাও এগিয়ে আমার বাংলাদেশ।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট