চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪

আবারও চড়েছে পেঁয়াজের দাম বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিন

৩১ অক্টোবর, ২০১৯ | ৩:১২ পূর্বাহ্ণ

পেঁয়াজের বাজারে তুঘলকি কা- এখনো বন্ধ হয়নি। অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের বাজার নিয়ে দুর্বৃত্তপনা প্রায় নির্বিঘেœই চালিয়ে যাচ্ছে। অতি মুনাফাশিকারি সিন্ডিকেটগুলোর কারসাজিতে বাজারে আরও দুর্মূল্য হয়ে উঠেছে পেঁয়াজ। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী এখন বাজারে পেঁয়াজ বিক্রয় হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা প্রতি কেজি। মাসদেড়েক আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। চার ধাপে দাম বেড়ে তা এখন ১৩০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে এক কেজি পেঁয়াজের দামে প্রায় চার কেজি মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে। ভারতের বাজারের দোহাই দিয়েই এ দাম বাড়ানো হয়েছে এবং হচ্ছে। নিত্যদিনের খাদ্যতালিকার অতি গুরুত্বপূর্ণ এই পণ্যটির দাম গত দু’মাস থেকেই কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। পেঁয়াজের দামের এই যুক্তি ও বাধাহীন উল্লম্ফন অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেট ভারী করলেও সাধারণ মানুষদের জীবনে দুর্ভোগের পরিধি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের অভাবেই মূলত অসাধু ব্যবসায়ীরা মুনাফা শিকারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে সাধারণ ভোক্তাদের ধারণা। বাজারে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার হলে মুনাফালোভীরা তাদের কুইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারতো না নিশ্চয়ই। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তথ্য মতে, বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০৫ থেকে ১২০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ মাত্র এক মাস আগেও প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে মোট পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৩ লাখ টন। এরমধ্যে ৩০ শতাংশ সংগ্রহকালীন ও সংরক্ষণকালীন ক্ষতি বাদ দিলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৩০ লাখ টন। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ১০ দশমিক ৯১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এছাড়া চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ২ দশমিক ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। সবমিলিয়ে মোট পেঁয়াজের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২৯ দশমিক ৩৪ লাখ টন। দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন। এই হিসেবে গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ পেঁয়াজ দেশে আছে তা চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও অতি মুনাফা শিকারের উদ্দেশ্যে অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃস্টি করে পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে তুলছে। একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদন বলছে, এ প্রক্রিয়ায় দেড় মাসে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে পেঁয়াজ সিন্ডিকেট। এখন পেঁয়াজের বাজারে রীতিমতো নৈরাজ্য চলছে। সবমিলিয়ে পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ভোক্তাসাধারণ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সিন্ডিকেট ভাঙতে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেই।

বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের পর একটি সিন্ডিকেট কারসাজি করে এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। অথচ দেশে পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই, বরং পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। দর বাড়ানোর জন্য সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকলেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কঠোর অবস্থান ও বিকল্প পদক্ষেপ থাকলে এ সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে না। উল্লেখ্য, রান্নার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান উপকরণ হচ্ছে পেঁয়াজ। পেঁয়াজ ছাড়া বাঙালি রান্নার কথা ভাবতেও পারে না। কৃষিভিত্তিক এ পণ্যটি ছাড়া শাক-সবজি, মাছ-মাংস, তরি-তরকারি- এক কথায় রান্নাবান্না একেবারে অচল। এ কারণে যুগ যুগ ধরে ধনী-গরিব সবার ঘরে পেঁয়াজের চাহিদা সমান। তাই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্রেতাসাধারণের পকেট কাটার বিষয়টিকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। সরকারকে বাজারমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, করতে হবে। অযৌক্তিক মুনাফাকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি ও বিক্রি, বাজারে মূল্যতালিকা টাঙানো, বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন, ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ নানা পদক্ষেপে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বছরব্যাপী চাহিদা নিরূপণ করে সে অনুপাতে মজুদ, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধিতে উৎসাহমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ভারতের ওপর নির্ভর না থেকে চীন, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, মিসর, ইরান ও নেদারল্যান্ডসসহ অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতেও মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, সব বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ নিলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট