চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

দ্রুত বিচারেও দমছে না বর্বরতা! পৈশাচিক কায়দায় শিশুহত্যা

২৮ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:২৮ পূর্বাহ্ণ

শিশুহত্যা ও নির্যাতন বন্ধে রাষ্ট্র কঠোর আইন প্রণয়ন এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে প্রচারণা কর্মসূচিসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। শিশুদের কণ্ঠকহীন শৈশব নিশ্চিত করতেও নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। কিন্তু এতোকিছুর পরও শিশুদের ওপর নানামাত্রিক নির্যাতন ও হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা না থেমে উল্টো বেড়েই চলেছে। যেভাবে নৃশংস কায়দায় শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে তা বিবেকবান সব মানুষকে স্তম্ভিত করে দিচ্ছে। শিশুহত্যার পৈশাচিকতার সর্বশেষ শিকার হয়েছে ১২ বছর বয়সী আলাল নামের বগুড়ার এক শিশুশ্রমিক। মেশিনের মাধ্যমে পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়েই পৈশাচিক কায়দায় তাকে হত্যা করা হয়।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, শুক্রবার বিকেলে বগুড়ার কাহালু উপজেলায় জুট মিলে আলালকে হত্যা করা হয়। একজন কিশোরশ্রমিকই জোর করে পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে দিয়ে তাকে হত্যা করে। ঘাতককে আটক করেছে পুলিশ। তবে কেনো আলালকে হত্যা করা হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। তদন্তে হয়তো মূল কারণ বের হয়ে আসবে। তবে অন্য শ্রমিকদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে এ ঘটনা কিভাবে ঘটেছে সে বিষয়টি রহস্যময়। অপর এক খবরে দেখা যায়, গত রোববার রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় ১৯ দিনের এক শিশুকে বালতির পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেছে বাবা। উল্লেখ্য, এভাবে দেশের নানাপ্রান্তে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে শিশুনির্যাতন ও হত্যার মতো ঘটনা। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর গণমাধ্যমে কিছুটা হৈচৈ এবং প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় উঠলেও কার্যত এ ধরনের পাশবিক ঘটনা না কমে বেড়ে যাচ্ছে। নানা গবেষণা রিপোর্টও বলছে, দিনদিন সমাজে পাশবিকতা বেড়েই চলছে। সেই সাথে নিরাপত্তা হারাচ্ছে শিশুরা। হত্যা-নির্যাতনের পাশাপাশি বেড়ে গেছে শিশুধর্ষণের ঘটনাও। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধর্ষণের ঘটনা শতাধিক হারে বাড়ছে। ধারাবাহিক এই অমানবিক চিত্র আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়।

শিশুহত্যার কারণগুলো পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাবা-মা বা পরিবারের সদস্যদের সাথে বিরোধ এবং শত্রুতার বলি হচ্ছে নিরীহ শিশুরা। এ ছাড়াও দরিদ্র শ্রমজীবী শিশুদের তুচ্ছ কারণে বা চুরির অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলার মতো ঘটনা অব্যাহতভাবে ঘটছে। আর বড়দের কু-প্রবৃত্তির শিকার হচ্ছে শিশুরা। ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনসহ গৃহকর্মী শিশুরা সহজে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তবে জনসচেতনতার অভাব, তিন মাসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন না হওয়া; অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া এবং রায় দ্রুতগতিতে কার্যকর না হওয়ায় শিশুনির্যাতন ও হত্যার মতো পাশবিক ঘটনাগুলো বেড়ে যাচ্ছে। এটা কোনো সভ্য ও সুস্থ সমাজের লক্ষণ নয়। সব সুস্থ-স্বাভাবিক সমাজে শিশুমাত্রই স্নেহ-বাৎসল্যের পাত্র। কিন্তু আমাদের সমাজে এর বিপরীত দৃশ্যই পরিলক্ষিত হচ্ছে। পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এমনকি ব্যক্তিগত শত্রুতায় আক্রোশের আগুনে পুড়ছে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের জীবন। শারীরিক নির্যাতন, এসিডে পুড়ে, শ্বাসরোধ করে, মাটিচাপা দিয়ে কখনো বা কুপিয়ে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হচ্ছে শিশু-কিশোরদের।

কেনো এমন চিত্রের অবতারণা হচ্ছে? সে প্রশ্নের জবাব খুঁজে প্রতিবিধান উদ্যোগ নিতে হবে দ্রুত। না হয় দেশে শিশুহত্যার ঘটনা মহামারির রূপ ধারন করবে। শিশুদের প্রতি এ ধরনের বর্বর, নৃশংস, নির্মম, বীভৎস ও অমানুষিক নির্যাতন প্রশ্নবিদ্ধ করছে পুরো মানবসত্তাকে। শিশুহত্যার একের পর এক নৃশংস ঘটনা আমাদের সামাজিক ও প্রশাসনিক অসহায়ত্ব ও ব্যর্থতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে যেন দেখিয়ে দিচ্ছে। স্পষ্ট হচ্ছে সমাজের অসংগতি, অস্থিরতা ও অসুস্থতা। আইনের দুর্বল প্রয়োগ, নৈতিকতা না থাকা এবং শিশুনির্যাতন হত্যা রোধে মনিটরিং না থাকায় একের পর এক শিশুহত্যা বাড়ছে। যা খুবই ভয়ঙ্কর। এসব ঘটনা প্রতিরোধে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা, দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, জনসচেতনতা সৃষ্টি, নৈতিকতার শিক্ষাসহ সর্বস্তরে জনমত গড়ে তুলতে হবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সামাজিক-পারিবারিক মূল্যবোধ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট