চট্টগ্রাম রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪

ফের ফেসবুক গুজব অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

২৫ অক্টোবর, ২০১৯ | ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ

গুজবের পরিণাম কতো ভয়ঙ্করর হতে পারে তা আরেকবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো ভোলার বিয়োগান্ত ঘটনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো গুজবের জের ধরে বহুবার সহিংসতা, রক্তপাত ও প্রাণহানির অনেক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে এদেশে। কিছুদিন আগেও পদ্মা সেতুতে শিশুবলি ও ছেলেধরা গুজবের রেশ ধরে বহু নিরীহ মানুষ গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। অনেকের জীবনও সাঙ্গ হয়েছে নির্মমতার শিকার হয়ে। তারও আগে কক্সবাজারের রামু, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, দিনাজপুর সদর, রংপুরের গঙ্গাচড়া এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা চলেছে। ফেসবুক হ্যাক করে প্রথমে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে, তারপর সেটাকে পুঁজি করে একটি গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে চেয়েছে। যদিও ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি; তবে কিছুটা হলেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতিতে। ধর্মীয় সম্প্রীতির বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা নিঃসন্দেহে অনভিপ্রেত।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, দিনকয়েক আগে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামের এক তরুণের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে সেই আইডির মেসেঞ্জারে ইসলাম ধর্ম ও হযরত মুহাম্মদ (স.) এর প্রতি অবমাননাকর কথাবার্তা চালিয়ে সেই কথোপকথনের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে দেওয়া হয়। যে তরুণের ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে, তিনি থানায় জিডিও করেছেন। গত ১৮ অক্টোবর তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার অভিযোগ এনে বোরহানউদ্দিন থানায় রাত ৮টা ৫ মিনিটে জিডি করেন তিনি। জিডি করার সময় থানায় অবস্থানকালেই তার মোবাইল নাম্বারে একটি কল আসে এবং তার কাছে চাঁদা দাবি করা হয়। বিষয়টি তৎক্ষণাৎ তিনি ওসিকে জানান। ওসি বিষয়টি ভোলার পুলিশ সুপারকে জানান। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে সেদিন রাতের মধ্যেই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাককারী ও শুভ’র মোবাইলে কলকারী দুই যুবককে আটক করে পুলিশ। কিন্তু তারপরও কিছু লোক নানাভাবে ধর্মপ্রাণ মানুষদের উত্তেজিত করার চেষ্টা করে। তারা ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে পরের দিন অভিযুক্ত তরুণকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সমাবেশ করে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। এক পর্যায়ে পুলিশ বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। এতে দায়িত্বরত ১০ পুলিশ আহত হন। অথচ আগের দিন পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে স্থানীয় আলেমদের বৈঠকে অপরাধীকে শণাক্ত করে আটক ও সমাবেশ না করার ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও একটি গোষ্ঠী বিষয়টিকে কেন্দ্র করে নানাভাবে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে। ঘটনাটিকে রাজনৈতিক মোড়ক দেওয়ারও চেষ্টা হয়েছে। শুভর বিচারের দাবিতে বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ ময়দানে ‘মুসলিম তৌহিদি জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ ‘প্রাণ রক্ষার্থে’ গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে। যদিও প্রাণহানি এড়াতে পারলে ভালো হতো। ওই পরিস্থিতি রক্তপাতহীনভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব ছিল কি-না ইতোমধ্যে গঠিত তদন্ত কমিটি তা খতিয়ে দেখবে নিশ্চয়ই। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধীকে শণাক্ত করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি থাকার পরও কেনো বিক্ষোভ সমাবেশ করা হলো, এর পেছনে ইন্ধনদাতা কারা সব খতিয়ে দেখে দুষ্কৃতদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

ধর্মপ্রাণ মুসলমানসহ বিবেকবোধসম্পন্ন সব মানুষের কাছেই ইসলাম ও মহানবীর (সা.) প্রতি কটুক্তি নিঃসন্দেহে স্পর্শকাতর বিষয়। এ জন্যে তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু ঘটনার উৎস না জেনে একদল লোক যেভাবে অসহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছে তা দুর্ভাগ্যজনক। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রকৃত দোষীকে ধরে বিচারে সোপর্দ করার সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতির পরও তাদের এই কা-জ্ঞানহীন আচরণে শতাধিক মানুষের হতাহতের ঘটনা মর্মান্তিক ও অনাকাক্সিক্ষত। যদি তারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতেন তাহলে এমন মর্মান্তিক ঘটনার জন্ম হতো না। আমরা এ অসহিষ্ণু ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছে। একইসঙ্গে ফেসবুক গুজবের সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের ও গুজবকে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের নাটের গুরুদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন হঠকারীতার আশ্রয় নিয়ে গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারের অপচেষ্টা না করে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট